<p>খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন এলাকায় একসময় ছিল ৯টি পুকুর। আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ভবন ও রেললাইন। গোলাম মওলার পুকুরসহ প্রায় ২৫টি পুকুর ছিল নগরীর কেডিএ এভিনিউতে। আজ সেখানে প্রশস্ত সড়ক ও বহুতল ভবন। এভাবে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) পরিচালিত খুলনা কলেজিয়েট স্কুলের মূল ভবনটি যেখানে গড়ে উঠেছে, সেটিকেও একসময় নগরবাসী চিনত মরিয়মপাড়া পুকুর হিসেবে। শেখপাড়া সঙ্গীতা সিনেমা হলটি গড়ে উঠেছে শেখপাড়া মোড়ের পুকুরের ওপর, হোটেল রয়্যাল স্থাপিত অনন্ত মল্লিকের পুকুরের ওপর এমনকি পাশের হোটেল ক্যাসল সালামটিও স্থাপিত পুকুরের ওপর। নগরীর শান্তিধাম মোড়ের তারের পুকুরের স্থানে হয়েছে কেসিসি পরিচালিত জাতিসংঘ পার্ক। এভাবে খুলনা মহানগরীর বেশির ভাগ পুকুর-জলাশয় আজ শুধু ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।</p> <p>মাহবুব সিদ্দিকী ‘বাংলাদেশে বিলুপ্ত দীঘি-পুষ্করিণী-জলাশয়’ বইয়ে খুলনার হারিয়ে যাওয়া ৮০টি পয়েন্টে শতাধিক বিলুপ্ত পুকুর ও দীঘির কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বা বেলার পক্ষ থেকে কেসিসির কাছে তথ্য অধিকার আইনে খুলনা শহরের পুকুরের তালিকা চাইলে ১১টি পুকুরের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। তবে কেসিসি গত বছর একটি প্রকল্পের আওতায় নগরীর ২৩টি পুকুরের তালিকা করে। তবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বা হাউজিং অনাপত্তি না দেওয়ায় তাদের কয়েকটি পুকুর বাদ রেখেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছে কেসিসি। কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার জানান, জার্মান উন্নয়ন সংস্থার আর্থিক সহায়তায় ২৩টি পুকুর সংরক্ষণের জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।</p> <p>কেসিসির স্থপতি রেজবিনা রিক্তা বলেন, পুকুর সংরক্ষণের ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ এবং এনওসি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।</p> <p>চার মাস ধরে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড ঘুরে ১৭১টি পুকুরের তথ্য সংগ্রহ করেছেন বেলার সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল। এখনো আরো অনেক পুকুরের সন্ধান মিলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো উদ্যোগী হলে অন্তত এসব পুকুর রক্ষা বা সংরক্ষণ করা সম্ভব।</p> <p>সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরগুলো সংরক্ষণে প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদেরই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।</p> <p>অবশ্য নগরীর পুকুরগুলো দখল করে ভবন হয়ে যাওয়ার পেছনে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা কেডিএর দিকে অভিযোগের তীর নগরবাসীর। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে কেডিএতে আবেদন করে নকশা অনুমোদন করিয়ে সেখানে রাতারাতি বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন নাগরিক নেতারা।</p> <p>বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনিরুজ্জামান রহিম বলেন, কেডিএ, কেসিসি, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে অনেক পুকুর-জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে।</p> <p>কেডিএর পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. তানভীর আহমেদ জানান, যারা জলাশয়ের ওপর অননুমোদিত ভবন নির্মাণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।</p> <p>মাঠ পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, অনেক পুকুর সংরক্ষণ বা ব্যবহারযোগ্য না করার পাশাপাশি যেমন অযত্নে পড়ে আছে তেমনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুকুর ও জলাশয়কে ডাস্টবিন বানানো হয়েছে।</p> <p>খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, খুলনা মহানগরীতে অনেক পুকুর বা জলাশয় আছে সেগুলো অবহেলিত ও উপেক্ষিত। বর্তমানে যে পুকুর বা জলাশয় রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হবে।</p> <p> </p> <p><strong>বেলার সুপারিশ</strong></p> <p>গত বুধবার খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বেলার পক্ষ থেকে পুকুর সংরক্ষণে সাত দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এলাকাভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পুকুর বাছাই করে তা স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত পুকুর অধিগ্রহণ করে সরকারিভাবে সংরক্ষণ, জলাধার সংরক্ষণ আইনের বাস্তবায়ন, স্থানীয়ভাবে জনকল্যাণে প্রয়োজনী পুকুরগুলো লিজমুক্ত করা এবং কৃত্রিমভাবে মাছ চাষ বন্ধ করা প্রভৃতি।</p> <p> </p>