দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। এতে সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, বেড়েছে তার থেকে বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে সব কটি মূল্যসূচক। এ ছাড়া বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়ল ১৬ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্পর্কিত খবর

৬ কম্পানিতে বিদেশিদের শেয়ার বেড়েছে
- কম্পানিগুলো হলো-বিচ হ্যাচারি, ব্র্যাক ব্যাংক, ম্যারিকো, মবিল যমুনা, প্রাইম ব্যাংক ও কুইনসাউথ টেক্সটাইল
নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ছয় কম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের শেয়ার ধারণ তথ্যে এমনটা দেখা গেছে। কম্পানিগুলো হলো-বিচ হ্যাচারি, ব্র্যাক ব্যাংক, ম্যারিকো, মবিল যমুনা, প্রাইম ব্যাংক ও কুইনসাউথ টেক্সটাইল।
ব্র্যাক ব্যাংক : ৩১ জানুয়ারি ব্র্যাক ব্যাংকে বিদেশিদের শেয়ার ছিল ৩২.০৯ শতাংশ, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি ০.১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.২০ শতাংশে।
ম্যারিকো : ৩১ জানুয়ারি ম্যারিকোতে বিদেশিদের শেয়ার ছিল ১.২৮ শতাংশ, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি ০.১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৩৯ শতাংশে। আলোচ্য সময়ে কম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৪৬.১৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও সাধারণ বিনিয়োগ।
মবিল যুমনা : ৩১ জানুয়ারি মবিল যুমনায় বিদেশিদের শেয়ার ছিল ১.৩৪ শতাংশ, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি ০.৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.২৬ শতাংশে। আলোচ্য সময়ে কম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৪৬.১৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও সাধারণ বিনিয়োগ। আলোচ্য সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ২১.৩৯ শতাংশ থেকে ০.৫৮ শতাংশ কমে ২০.৮১ শতাংশে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী ৫.৭৫ শতাংশ থেকে ০.৩৪ শতাংশ কমে ৫.৪১ শতাংশে নেমেছে।
বিচ হ্যাচারি : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ বিচ হ্যাচারিতে বিদেশিদের শেয়ার ছিল ১.৫২ শতাংশ, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ০.২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৭৬ শতাংশে। আলোচ্য সময়ে কম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৩৪.৯৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক। তবে কমেছে সাধারণ বিনিয়োগ। আলোচ্য সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ১৮.২০ শতাংশ থেকে ২.৬৪ শতাংশ বেড়ে ২০.৮৪ শতাংশে উঠেছে। বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৪৫.৩১ শতাংশ থেকে ২.৮৮ শতাংশ কমে ৪২.৪৩ শতাংশে নেমেছে।
কুইনসাউথ টেক্সটাইল : ৩১ জানুয়ারি কুইনসাউথ টেক্সটাইলে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১.০৯ শতাংশ, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি ১.৬৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৭৫ শতাংশে। আলোচ্য সময়ে কম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে এবং বেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার। আলোচ্য সময়ে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৫৩.২৩ শতাংশ থেকে ১.৬৬ শতাংশ কমে ৫১.৫৭ শতাংশে এবং প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ১০.৫৬ শতাংশ থেকে ২.৪২ শতাংশ কমে ৮.১৪ শতাংশে নেমেছে। বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩৫.১২ শতাংশ থেকে ২.৪২ শতাংশ বেড়ে ৩৭.৫৪ শতাংশে উঠেছে।

বিজ্ঞাপনের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের পেছনে ব্যয় বাড়াচ্ছে ইউনিলিভার
- চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিপণনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী কনটেন্টের পেছনে ব্যয় করবে ১ হাজার কোটি ডলার : ইমার্কেটার
অর্গানিক রিচের পরিমাণ একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে
আগামী দিনে ব্র্যান্ডগুলো ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়েই যে প্রচারণা চালাবে তা প্রায় স্পষ্ট
বাণিজ্য ডেস্ক

ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইউনিলিভারের প্রধান নির্বাহী ফার্নান্দো ফার্নান্দেজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বাড়াতে যাচ্ছেন তিনি। প্রচলিত প্রচারমাধ্যমের বদলে প্রচারণার প্রধান চাবিকাঠি হয়ে উঠছে ইনফ্লুয়েন্সাররা। আগামী দিনে ব্র্যান্ডগুলো ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়েই যে প্রচারণা চালাবে তা মোটামুটি স্পষ্ট।
অর্গানিক রিচ কমে তলানিতে : বাজেট বাড়ালেই যে এই খাতে সফলতা আসবে তা নয়। খরচ বাড়ানোই শেষ কথা নয়, ইনফ্লুয়েন্সারদের বিপণন কৌশলের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সেটাও খতিয়ে দেখছে বৈশ্বিক মার্কেটিং খাত। কিভাবে প্রচারণার সাফল্য পরিমাপ করা হবে বা কোথায় কোন কনটেন্ট ক্রিয়েটরের উপস্থিতি যথাযথ হবে তা নির্ধারণ করাও এখন গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছর দেশটির বিপণনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী কনটেন্টের পেছনে ১০ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে বলে জানিয়েছে বাজার বিশ্লেষণকারী মার্কিন কম্পানি ইমার্কেটার।
ইনফ্লুয়েন্সারের প্রচারণাই শেষ কথা নয় : সুপারফিলিয়েটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চিফ প্রডাক্ট অফিসার অ্যান্ডার্স বিল বলেন, ‘ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়েই পেইড মিডিয়া চলছে। এখন আর ব্র্যান্ডগুলো সেরা মানের বিজ্ঞাপন তৈরি করছে না। কনটেন্ট ক্রিয়েটররাই বিজ্ঞাপন তৈরি করে দিচ্ছে। একজন ক্রিয়েটরের ১০ লাখ ফলোয়ার থাকলে মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের কাছে তার কন্টেন্ট অর্গানিক্যালি পৌঁছাচ্ছে। যেসব ক্রিয়েটরের ফলোয়ার কম কিন্তু এনগেজমেন্ট বেশি তারা বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে। কনটেন্ট বুস্ট করার পর নির্দিষ্ট ওই পণ্যের ব্যবহারকারীদের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে কি না তার ওপর সাফল্য নির্ভর করে। ট্র্যাকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়ের-লোইক অ্যাসায়াগ বলেন, ‘ব্র্যান্ডগুলো জানে যে বুস্ট তাদের করতেই হবে। তারা বুস্ট করেও। তবে অনেক ক্ষেত্রেই কোনো কৌশল নির্ধারণ না করে বুস্ট করে। এতে করে তারা ভিউ বাড়াতে সক্ষম হলেও কনটেন্ট পৌঁছায় ভুল ক্রেতাদের কাছে। এর ফলে এনগেজমেন্ট কমে যায়। কনটেন্টও সাড়া ফেলতে পারে না। অনেক ব্র্যান্ড মনে করে, ইনফ্লুয়েন্সাররা একবার প্রচারণা চালালেই তারা সাড়া পাবে। বাস্তবতা হচ্ছে, সফলতা পেতে সময় নিয়ে পরিধি বাড়ানো জরুরি। সূত্র : ফোর্বস

মেঘনার উপকূলে স্বপ্নের হাতছানি
সয়াবিন উৎপাদন হবে ৪০০ কোটি টাকার
কাজল কায়েস, লক্ষ্মীপুর

‘সয়াল্যান্ড’খ্যাত মেঘনা উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলার বিস্তীর্ণ চরজুড়ে এখন সয়াবিনের সবুজ পাতায় কৃষকের সোনালি স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। ক্ষেতে পাতা, ফুল আর থোকায় থোকায় সয়াবিনে সবুজের সমারোহ। আর দেড়-দুই মাসের মধ্যে ঘরে উঠবে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত এ সোনার ফসল। এ নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন চলছে।
আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এ জনপদে হয়। চলতি বছর উৎপাদিত সয়াবিন থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। ফসল ঘরে উঠলে চর ও সংশ্লিষ্ট ওই গ্রামীণ জনপদগুলো অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা থাকে। এদিকে কৃষকদের ভাষ্যমতে, সয়াবিন আবাদে কম পানি প্রয়োজন হয়।
অন্যদিকে চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়।
চরকাচিয়া, চরলক্ষ্মী, চরবাদাম ও চরআলী হাসানের অন্তত ৩০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে মাটিতে বোরো ধানের আবাদ সম্ভব নয়, সেখানে সয়াবিন চাষ করা হয়। এ ছাড়া ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি, সয়াবিনে খরচ কম। অন্যান্য ফসলে আবাদে মাটির শক্তি হ্রাস পায়, সয়াবিন চাষে উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় দুই মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়। এতে এবার আবাদ করা ৪৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮৮ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি সয়াবিন উৎপাদন হয় রামগতি ও কমলনগরে। এর মধ্যে রামগতিতে ১৭ হাজার ও কমলনগরে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। এ ছাড়া সদরে সাত হাজার ৫০০ ও রায়পুরে ছয় হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। গত মৌসুমে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন হয়। এবার ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি এ জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল।
সদর উপজেলার চররমনীমোহন ইউনিয়নের কৃষক নুর আলম বলেন, ‘সয়াবিন চাষে বীজ বপনের আগে একবার ও গাছে ফুল আসার সময় একবার সার দিতে হয়। এ ছাড়া অবস্থা বুঝে কীটনাশক প্রয়োগ করলেই চলে।’ রায়পুর উপজেলার চরলক্ষ্মী গ্রামের ফিরোজ আলম বলেন, ‘সয়াবিনের জমিতে পানি সেচ লাগে না। এটি লাভবান হলেও অতিবৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে গেলে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যায়। তখন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে সয়াবিন চাষ করলে ধানের চেয়ে লাভ বেশি হয়। খরচ ও পরিশ্রম কম।’
রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, ‘কৃষক সয়াবিন ঘরে তুলতে আরো দেড়-দুই মাসের মতো সময় লাগবে। এখন বৃষ্টি হলে ফসলের জন্য ভালো হতো। কীটনাশক প্রয়োগে কিছু কৃষক পরামর্শ না শোনায় তাঁদের ক্ষেতের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘সয়াবিন ঘিরে এখানে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোও ঋণ দেয়। চরের মানুষের জীবনমান বদলে যাচ্ছে। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ জেলায় পরিকল্পিতভাবে সয়াবিননির্ভর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেনি। এ জন্য প্রশাসনও যেন উদাসীন।’
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, ‘উপকূলীয় জমিতে লবণ রয়েছে। অন্য ফসল লবণাক্ততা সহ্য করতে না পারলেও সয়াবিন তা পারে। তবে বেশি লবণাক্ত জমি যেকোনো ফসলের জন্য ক্ষতি। আমরা কৃষকদের সয়াবিনের উন্নত জাত সরবরাহ করি। বিনা ৫, বিনা ৬, বারি ৪, বারি ৬, বিইউ ৩, বিইউ ৪, বিইউ ৫—এসব জাতের সয়াবিনের দানা বড়, ওজন বেশি। তাই ফলনও বেশি।’

১০০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে
ঋণের চাপে বিশ্ব অর্থনীতি
বাণিজ্য ডেস্ক

ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ঋণ। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঋণ ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ধনী দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বভৌম ঋণ ও করপোরেট বন্ড মিলে বিশ্বজুড়ে ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে ধনী দেশগুলোর ঋণ নিয়ে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধনী দেশগুলোর সরকারি পর্যায়ে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। এতে ২০০৭ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এ বাবদ সুদ পরিশোধের হার, যা কি না এসব দেশের প্রতিরক্ষা ও আবাসন খাতে ব্যয়ের তুলনায় অনেক বেশি।
প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ডেট রিপোর্ট’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ওইসিডিভুক্ত দেশে ঋণ পরিশোধ বাবদ খরচ জিডিপির ৩.৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালে ছিল ২.৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, একই দেশগুলো ২০২৩ সালে সামরিক খাতে মোট জিডিপির ২.৪ শতাংশ ব্যয় করেছে।
২০২৪ সালে ওইসিডি দেশগুলোর মোট সরকারি ঋণের ৮৫ শতাংশ গ্রহণ করেছে পাঁচটি দেশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একাই দুই-তৃতীয়াংশ।
ওইসিডি সতর্ক করে বলেছে, উচ্চ সুদহার ও ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার সক্ষমতাকে সীমিত করতে পারে।
গত বছর ওইসিডি সরকারগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার, যার মধ্যে পুরনো ঋণ পরিশোধের পর তিন লাখ কোটি ডলার ছিল নতুন ঋণের অংশ। ফলে ওইসিডি দেশগুলোর মোট সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখ কোটি ডলার এবং বিশ্বব্যাপী সার্বভৌম ঋণের পরিমাণ ৬৫ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। এ ছাড়া করপোরেট ঋণ ৩৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যার বেশির ভাগই শেয়ার বাইব্যাক ও লভ্যাংশ প্রদানের জন্য নেওয়া হয়েছে।
বিপুল পরিমাণ ঋণের কারণে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ঋণ স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ওইসিডির আর্থিক ও করপোরেট বিষয়ক পরিচালক কারমিন ডি নোইয়ার মতে, বড় ঋণের বোঝা ‘খারাপ নয়’। তবে গত দুই দশকে নেওয়া বেশির ভাগ ঋণ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট ও কভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারে ব্যয় হয়েছে। এখন অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অবকাঠামো ও জলবায়ু প্রকল্পের মতো বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার যদি ঋণ নেয়, তাহলে সেই ঋণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা উচিত। অর্থনীতির আকার বড় হলে ঋণ নেওয়া কার্যকর হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের ভার কমাতে সাহায্য করবে।’
কিন্তু উচ্চ সুদহার ঋণ পরিশোধে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ডের সুদহার বাড়ায় ঋণের পুনরর্থায়ন ব্যয় বেড়ে গেছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ওইসিডি দেশগুলোর প্রায় ৪৫ শতাংশ সার্বভৌম ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগের নমনীয় ঋণ গ্রহণের পরিবেশ এখন বদলে গেছে এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে।
সংস্থাটি বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মহামারির সময় নেওয়া জরুরি বন্ড কেনার কর্মসূচি থেকে সরে আসছে। ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকা সরকারি বন্ডের পরিমাণ থেকে তিন লাখ কোটি ডলার কমেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে আরো এক লাখ কোটি ডলার কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে মূল্য সংবেদনশীল বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ফলে সরকারগুলো বাজারের অস্থিরতা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে।
ওইসিডির মহাসচিব ম্যাথিউস কোরম্যান বলেছেন, উচ্চ ঋণের ব্যয় ‘ভবিষ্যতের ঋণগ্রহণ ক্ষমতাকে সীমিত করছে’, বিশেষত এমন সময়ে যখন উচ্চ প্রবৃদ্ধি, বয়স্ক জনসংখ্যার চাহিদা মেটানো ও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো দরকার। ২০২৫ সালে ওইসিডি দেশগুলোর গড় ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি এবং ২০০৭ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।