<p>দিনাজপুরে চলছে মেলার মৌসুম। সেই মেলাগুলোতে আসা সার্কাসের বিশালদেহী হাতিগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের সড়ক, মহাসড়ক ও অলিগলিতে। পিঠে বসে থাকা মাহুতের নির্দেশেই এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছাড়াও যানবাহন আটকাচ্ছে হাতিটি। তারপর শুঁড় এগিয়ে দিচ্ছে দোকানি ও যানবাহনের চালকের কাছে। শুঁড়ের মাথায় টাকা গুঁজে না দেওয়া পর্যন্ত শুঁড় সরাচ্ছে না হাতিটি। টাকা না দিলে মাহুতের সংকেতে উল্টো চিৎকার করে ভয় দেখাচ্ছে হাতিটি। এভাবেই অভিনব কৌশলে হাতি দিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।</p> <p>দিনাজপুরে বীরগঞ্জে ঢেমঢেমিয়া কালির মেলা, জিন্দাপীরের মেলা, কাহারোলে কান্তজিউ রাস মেলা শেষে এখন চলছে সদর উপজেলার গোয়ালহাট মেলা। মেলাগুলোতে সার্কাসে এসেছে হাতি। সার্কাসের মালিকেরা এই হাতিগুলো দিয়ে রাতে সার্কাসে খেলা দেখান, আর দিনের বেলা মাহুতদের দিয়ে রাস্তায় বের করে দিয়ে চাঁদা তোলেন।</p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুর শহরসহ দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হাতি দিয়ে টাকা তুলছেন মাহুত। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে দোকাদার ও যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে চাঁদা। শুধু দোকানেই সীমাবদ্ধ নয়, মহাসড়কে ও সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের পথ রোধ করেও টাকা তুলতে দেখা যায় এই মাহুতকে।</p> <p>বাহাদুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একটি মিষ্টির দোকানে হঠাৎ বিশাল দেহের হাতিটি মাহুতের ইশারা ইঙ্গিতে শুঁড় এগিয়ে দিল ক্যাশে বসা ম্যানেজারের সামনে। সঙ্গে সঙ্গে দোকানদার ৫০ টাকা হাতিটির শুঁড়ে গুঁজে দিলেন এবং মিষ্টি খাওয়ালেন।</p> <p>টাকা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই দোকানদার বলেন, ‘টাকা না দিলে হাতিটি যাবে না। তাছাড়া অনেক সময় ভাঙচুরও করে। এজন্য ঝামেলা হওয়ার আগেই টাকা দিয়ে বিদায় করলাম। সেই সঙ্গে খুশি হয়ে হাতিটিকে মিষ্টি খাওয়ালাম।’</p> <p>সদর উপজেলার এলাকার পাঁচবাড়ী হাটের সার কীটনাশক ব্যবসায়ী গোরাপ হোসেন বলেন, ‘গোয়ালহাট মেলা শুরু হওয়ার পর তেকে মাঝে-মধ্যেই মেলা থেকে হাতি নিয়ে এসে চাঁদা আদায় করেন তারা। প্রতিটি দোকান থেকে হাতি দিয়ে টাকা তোলা হয়। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত দোকান থেকে হাতি সরিয়ে নেওয়া হয় না। অনেক সময় সাধারণ মানুষ, শিশু বাচ্চাসহ মহিলা ক্রেতারা হাতি দেখে ভয় পান। এতে ব্যবসায়ের ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’</p> <p>একই উপজেলার চকরামপুরের স্থানীয় বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘দোকান থেকে চাঁদা ওঠানো শেষ হলে হাতিগুলো রাস্তায় নামে। শুধু দোকানই না এরা  চলন্ত গাড়ি থামিয়ে দিয়ে চাঁদা আদায় করেন। এতে করে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।’</p> <p>হাতির মাহুত সুজন ইসলাম বলেন, ‘মেলা গুলোতে আগের মত মানুষ আর সার্কাস দেখতে আসেনা। হাতির ভরণপোষণ করা খুব কঠিন। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামি। মানুষ হাতির ভরণপোষণের জন্য খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয়। অনেকে শিশুদেরকে সওয়ারি করায়। তারাও কিছু টাকা দেয়। কেউ খুশি হয়ে টাকা দিলে তা আবার চাঁদাবাজি হয় কীভাবে? তবে আমরা কারো উপর কোনো ধরনের জোর করি না, যার ইচ্ছে দেয় মন না চাইলে দেয় না।’ </p> <p>কোতয়ালী থানার ওসি মো. ফরিদ হোসেন বলেন, ‘হাতি দিয়ে টাকা তোলার বিষয়ে এখনও কেউ আমাদের কিছু জানায়নি। আমাদেরও চোখে পড়েনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’</p>