<p>বিশ্ব ইজতেমার ৪২ দিন আগেই জোড় ইজতেমা নিয়ে বিরোধের জেরে তিনজন নিহতের ঘটনায় ২৯ জনকে শনাক্ত ও অজ্ঞাতনামা শত শত আসামী উল্লেখ করে থানায় মামলা হয়েছে।</p> <p>মামলার বাদী শুরায়ি নেজামের ( জুবায়র পন্থি) সাথী এস এম আলম হোসেন। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর থানার গাইটাল গ্রামের এস এম মোক্তার হোসেনের ছেলে ও আলমি শুরার কিশোরগঞ্জ জেলার সাথী। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে টঙ্গী পশ্চিম থানায় এই মামলা হয়। মামলার এজাহারে সাদপন্থীদের শীর্ষ মুরুব্বী ওয়াসিফুল ইসলামসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়।</p> <p>মামলার এজাহারে বলা হয়, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সাদপন্থী আসামীরা ২০ ডিসেম্বর জোড় ইজতেমা করার জন্য ১৮ ডিসেম্বর ভোর রাতে জোরপূর্বক বিশ্ব ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে হতাহতের ঘটনা ঘটায়। আাসামীরা আলমি শুরার সাথী কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত উসমান গনির ছেলে আমিনুল ইসলাম উরফে বাচ্চু মিয়া (৭০), ফরিদপুর সদর থানার কমলা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০), আরেকজন হলেন বগুড়া জেলার সদর থানার ধাওয়াপাড়া পূর্বপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলামকে (৭০) পিটিয়ে হত্যা করে। নিহতরা সবাই আলমি শুরা বা শুরায়ি নেজামের (জুবায়ের পন্থী) সাথী বলে উল্লেখ করা হয়।</p> <p>মামলার বিবরণে আরো বলা হয়, ১৭ ডিসেম্বর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ সাদপন্থীদের সাথে একটি পরামর্শ সভা করে সমঝোতার জন্য জুবায়ের পন্থীদের সাথে আলেচনা করতে কাকরাইল মসজিদে যায়। এই দুই ছাত্র নেতার সাথে সাদপন্থিদের আলোচনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সাদপন্থীরা ইজতেমা মাঠে অনুপ্রবেশ করে ভিকটিমদের হত্যা করে। সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ সাদপন্থীদের শান্ত থাকতে বললেও সাদপন্থীরা অপপ্রচার করে মাঠে হামলা করে তিন সাথীকে হত্যা করে।</p> <p>টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।</p> <p>প্রসঙ্গত: আগামী বছর দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর শুরায়ে নেজামের আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বেও প্রস্তুতি হিসেবে ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থীরা জোড় ইজতেমা করবেন ও জুবায়েরপন্থীরা করতে দিবে না বলে বিরোধ চলছিল। এ অবস্থায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন। জুবায়েরপন্থীদের সাংবাদিক সম্মেলনের পর সাদপন্থীরাও সম্মেলন করে তাদের অবস্থান ব্যাখা করেন। এই অবস্থায় সাদপন্থীদের পূর্ব ঘোষিত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী ২৪ ঘন্টা পিছিয়ে ১৮ ডিসেম্বর করেছে তারা। এই অবস্থায়  জুবায়েরপন্থীদের সমর্থনে টঙ্গীবাসী ও ছাত্রজনতার ব্যানারে টঙ্গী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে একই দাবিতে কয়েকটি মানববন্ধন হয়। আজ বুধবার সাদপন্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু গতরাতেই ঘটে যায় সংঘর্ষ। নিহত হন তিনজন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এই অবস্থায় সরকার দুই পক্ষের দখল থেকে ইজতেমা ময়দান নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ময়দান খালি করার জন্য করা হয় মাইকিং। ফলে রাত ৮টা পর্যন্ত সাদপন্থীরা ময়দান ছেড়ে চলে যায়। এই ঘটনার ৩৫ ঘন্টা পর এই হত্যা মামলা হল।</p>