<p style="text-align:justify">গ্রামের প্রসূতি মায়েদের প্রতি মাসে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে পুষ্টি ভাতা দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কুড়িগ্রামের যুব সংস্থা ‘ফাইট আনটিল লাইট’ (ফুল)। ভুক্তভোগীরা জানান, চলতি বছরের শুরুতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুষ্টি ভাতা দেওয়ার নামে সংস্থাটি তাদের কাছ থেকে ২৬০ টাকা করে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা ‘নগদ’-এর মাধ্যমে নিয়েছে। তবে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কেউই কোনো ভাতা পাননি।</p> <p style="text-align:justify">সংস্থাটি তিন ধরনের ভাতা প্রদানের কথা বলেছিল। গরিবরা প্রতি মাসে ৩০০ টাকা, মধ্যবিত্তরা ৬০০ টাকা এবং ধনীরা ৯০০ টাকা ভাতা পাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব ভাতা প্রদান করা হয়নি বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।</p> <p style="text-align:justify">কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুল জেলার ভিতরবন্দ ও কচাকাঁটা ইউনিয়নের দরিদ্র প্রসূতি মায়েদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে। সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবকরা ‘নগদ’-এর মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করেন। এ সময় প্রতি মাসে ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ভিতরবন্দ ইউনিয়নে কাজ করা একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, তিনি ২৭০০ জনকে সদস্য করেছেন। কচাকাঁটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদত হোসেন মণ্ডল জানান, তার ইউনিয়নে ফুল ২২০০ লোকের কাছ থেকে ২৬০ টাকা করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করেছে।</p> <p style="text-align:justify">ভুক্তভোগীরা জানান, সংস্থাটি প্রথমে ২৬ মাস ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর মধ্যে দুই ধাপে প্রথমে ১৩ মাস এবং পরে আরও ১৩ মাস ভাতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সদস্য কোনো ভাতা পাননি। ভিতরবন্দ ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫০ জনকে টাকা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ১৩০০ জনের ভাতা পাওয়ার কথা ছিল।</p> <p style="text-align:justify">ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বামনের ভিটা এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত লাভলী বেগম জানান, চার মাস আগে তার ২৬০ টাকা নেওয়া হয়। তাকে প্রতি মাসে ৯০০ টাকা ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পাননি।</p> <p style="text-align:justify">ফুলের একজন প্রাক্তন স্বেচ্ছাসেবক ফজলুর করিম বাবু জানান, তিনি এক মাস কাজ করেছেন। তার কাজ ছিল ডিজিটাল সাইটে সদস্য এন্ট্রি করা এবং তাদের কাছ থেকে ২৬০ টাকা সংগ্রহ করা। বাবু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রায় ২৭০০ জন সদস্য করেছি। তবে ভাতা দেওয়ার পরিবর্তে সংস্থাটি আমাকে এক মাসের মধ্যে ছাঁটাই করে।’</p> <p style="text-align:justify">কচাকাঁটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদত হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে প্রায় ২২’শ লোকের কাছ থেকে ফুল সদস্য ফি হিসেবে টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।’</p> <p style="text-align:justify">ফুলের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের জানান, নাগেশ্বরী উপজেলায় একটি হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে, যেখানে ১০ টাকার বিনিময়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হবে এবং বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হবে। তবে পুষ্টি ভাতা প্রসঙ্গে কতজনকে ভাতা দেওয়া হয়েছে, তার সঠিক হিসাব তিনি দিতে পারেননি।</p> <p style="text-align:justify">কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘আমি এই এনজিওর কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p>