<p>জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাট ও বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান সফল হচ্ছে না। বাজারে ধানের দাম বেশি পেয়ে কেউ সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করছেন না। ফলে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বেকায়দায় পড়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।</p> <p>জানা গেছে, সরকার এবার কৃষকদের কাছ থেকে ধান (মোটা) ক্রয় করার জন্য দাম নির্ধারণ করেছেন ১ হাজার ৩২০ টাকা মণ দরে। যেখানে প্রতি কেজি ধানের দাম পড়ছে ৩৩ টাকা। জেলায় ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন। আর চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন। চালের (মোটা) কেজি ৪৭ টাকা হিসেবে প্রতি মণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৮০ টাকা। স্থানীয় মিলাররা খাদ্য বিভাগের সাথে চাল সরবরাহ করার জন্য চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন। যারা চুক্তিবদ্ধ হননি তদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত জেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮১ মেট্রিক টন। আর চাল সংগ্রহ হয়েছে ৭ হাজার মেট্রিক টন।</p> <p>অথচ বাজারে বর্তমানে মোটা জাতের প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা অর্থাৎ সর্বোচ্চ ১৪০০-১৪৩০ টাকা মণ দরে। আবার চিকন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৫৫০ টাকা মণ দরে। এ ছাড়া কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৯০০ টাকায় এবং আতপ ৯০ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২১০০ টাকা মণ দরে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আগুনে পুড়ে প্রাণ গেল প্যারালাইসিস রোগীর" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/29/1735445198-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আগুনে পুড়ে প্রাণ গেল প্যারালাইসিস রোগীর</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/29/1462577" target="_blank"> </a></div> </div> <p>কোনো ঝামেলা ছাড়া সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি পেয়ে কৃষকরা গুদামে ধান সরবরাহ করছেন না। তাদের অভিযোগ, একে তো দাম কম, তার ওপর সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে সঠিক আর্দ্রতাসহ কর্তৃপক্ষের নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। কিন্তু বাজারে ধান নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিক্রি হয়। আবার দামও বেশি। ফলে এবার ধানের দাম বেশি পেয়ে খুশি কৃষকরা।</p> <p>জেলার বড় ধানের বাজার জয়পুরহাট সদরের পুরানাপৈল, কালাইয়ের পাঁচশিরা, নুনুজ ও মোলামগাড়িহাট, ক্ষেতলালের ইটাখোলা, বটতলী ও পাঠানাপাড়া, আক্কেলপুরের গোপিনাথপুর, কাশিড়া, তিলকপুর এবং পাঁচবিবির বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে এবার মৌসুমের শুরু থেকে ধানের দাম ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। দাম বেশি হওয়ায় এসব বাজারগুলোতে ধানের আমদানিও ব্যাপকহারে লক্ষ্য করা গেছে।</p> <p>কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় এবার ৬৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। যেখান থেকে এ বছর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন।</p> <p>বরাবরের ন্যায় এবারও জেলায় রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। অথচ বাজারের তুলনায় দাম কম হওয়ায় ধান সংগ্রহ অভিযান আলোর মুখ দেখছে না। এ পর্যন্ত বরাদ্দের মাত্র ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছে। আর চাল সংগ্রহ হয়েছে ৭০ শতাংশ।</p> <p>আক্কেলপুরের সোনাই মাগুড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে গেলে ধানের আর্দ্রতা ঠিক রাখার পাশাপাশি গুদামে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আবার দামও কম। গুদামে যেখানে ৩৩ টাকা কেজি, আমরা সেখানে বাজারেই বিক্রি করছি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি।</p> <p>করিমপুর গ্রামের ধান ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে আমরা মোটা, চিকন ও আতপসহ বিভিন্ন জাতের ধান আমরা কিনছি। বর্তমান বাজারে মোটা জাতের মামুন ধানের দাম ১৩৭০ থেকে ১৩৮০ টাকা, চিকন জাতের ধান ধানী গোল্ড ও ব্রি-১৭ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৫৫০ টাকা মণ, কাটারি ১৯০০ টাকা এবং আতপ ৯০ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ২০৫০-২১০০ টাকা মণ দরে। বর্তমানে ধানের দাম বাড়ছে বলেও তিনি দাবি করেন।</p> <p>জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি লায়েক আলী জানান, নিজেদের ক্ষতি করে হলেও সরকারকে যথাসাধ্য চাল দিচ্ছি। না দিলে আমাদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি রয়েছে। তবে, ধানের যে দাম, তাতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে চাল তৈরি এবং সরকারের কাছে দিতে। সরকার একটু বেশি রেট দিলে আমাদের জন্যে সুবিধা হতো।</p> <p>পাঁচশিরা বাজারের মিলার আব্দুল মালেক জানান, হয় সরকার নির্ধারিত দাম বাড়াতে হবে, নতুবা বাজারে ধানের দাম কমতে হবে। তা না হলে গুদামে চাল দিয়ে লোকসান হচ্ছে। বর্তমান বাজারে ধানের কেজি পড়ছে ৩৫-৩৬ টাকা। এই দামে ধান কিনে চাল তৈরি করলে প্রতি কেজির মূল্য দাঁড়ায় ৫০-৫১ টাকা। কিন্তু সরকার চালের দাম নির্ধারণ করেছে ৪৭ টাকা। ফলে কেজিতে তাদের লোকসান হবে ৪ থেকে ৫ টাকা।</p> <p>জয়পুরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তর জেলায় আমন মৌসুমে এবার ৩৩ টাকা কেজিতে ৪ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে এবং ৪৭ টাকা কেজি দরে মিলকল মালিকদের কাছ থেকে ৯ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ নেই কৃষকদের। যার ফলে ধান সংগ্রহ কম হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে চালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।’</p>