<p>বোনের শ্বশুড়বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে দুই যুবকের বিরুদ্ধে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরই একজন মেয়েটির সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়ায়। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ওই স্কুলছাত্রী যুবককে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এই অবস্থা গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলতে থাকলেও বিয়ে না করায় অবশেষে সমাজের দ্বারস্থ হন মেয়েটির দিনমজুর বাবা। সালিশ দরবারে সিদ্ধান্ত হয়, ওই স্কুলছাত্রী বাড়ি ছাড়বে ও গর্ভপাত ঘটাবে এবং এই শর্তে তাকে দেওয়া হবে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। দু'দিন আগে সমাজ এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন দিনমজুর বাবা। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) থেকে তাদের আর খোঁজ মিলছে না। এ ঘটনা ময়মনসিংহের নান্দাইলের আঁচারগাঁও ইউনিয়নের একটি গ্রামে। </p> <p>শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুরের জরাজীর্ণ খুপড়ি ঘরের দরজা রশি দিয়ে বাঁধা। প্রতিবেশীরা জানেন না তারা কখন কোথায় চলে গেছেন। জানা যায়, মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে এবার অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। গ্রামের সবাই তাদের চেনেন। জানতে চাইলে পাশের বাড়ির লোকজন কোনো কথা বলতে নারাজ। ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পর গ্রামের অনেক লোকজন এগিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জানান, এ ঘটনা তারা শুনছেন। তবে বেশি খোঁজ-খবর নেননি। </p> <p>এলাকার সাবেক মেম্বার মঞ্জুরুল হক জানান, তারও ওই সালিশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এমন বিষয় হওয়ায় তিনি যাননি। তবে জানতে পেরেছেন, ওই সালিশে মেয়ে ও তার বাবা ছাড়াও অভিযুক্ত দুই যুবক উপস্থিত ছিলেন। </p> <p>ওই দুই যুবকের বাড়ি পাশের সিংদই গ্রামে। তারা মো. রতনের ছেলে মো. পারভেজ মিয়া (৩২) ও একই গ্রামের কামালের ছেলে শবি মিয়া (২৫)। </p> <p>জানা যায়, নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীর চাচাতো বোনকে ওই গ্রামেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেড়াতে গেলে ওই দুই যুবক মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা সবাই জেনে গেলেও ধামাচাপা দেওয়া হয়। </p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার রাতে এ বিষয়টি নিয়ে সালিশ হয় নান্দাইল-জাহাঙ্গীরপুর সড়কের সিংদই কলেজগেট এলাকায়। সালিশের আয়োজন করেন সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসিম উদ্দিন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত দুই যুবকের পক্ষের সিরাজুল, রফিকুল, রুবেল ও ফখর উদ্দিনসহ অনেকেই। অন্যদিকে, মেয়ের পক্ষে তার বাবা ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। সেই সালিশে সিদ্ধান্ত হয়, প্রথম অভিযুক্ত পারভেজ দেবেন এক লাখ ২০ হাজার ও শবি মিয়া দেবেন ৫০ হাজার। এই টাকা পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মেয়ের বাবাকে দেওয়া হবে। এরপর রাত থেকেই মেয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান দিনমজুর বাবা।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শবি মিয়ার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। শবির মা রেনু আক্তার বলেন, এইডা তো শেষ অইছে, অহন তে আপনারা কেলা? কত টাকায় শেষ হইছে জানতে চাইলে রেনু আক্তার বলেন, বউয়ে কইতারবো। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শবির স্ত্রী শেফালী আক্তার জানান, তার স্বামী দিয়েছেন ৫০ হাজার ও পারভেজ এক লাখ ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে, প্রধান অভিযুক্ত পারভেজকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা রতন মিয়া বলেন, আমার ছেড়া তো দুই মাস ধইরা বাড়িতেই নাই। এইডা মিছা প্রচার।</p> <p>জানতে চাইলে সালিশের আয়োজক সাবেক চেয়ারম্যান হাসিম উদ্দিন জানান, সালিশে বসা হয়নি। তবে আয়োজনের চেষ্টা চলচিল। এ অবস্থায় জানা গেছে মেয়ের বাবা বাড়িতে নেই। এলাকার লোকজন তো বলছেন সালিশ হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।</p> <p>এ ব্যাপারে নান্দাইল থানার ওসি ফরিদ আহম্মেদ জানান, তিনি এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না। তবে এখন একজন অফিসারকে ওই এলাকায় পাঠানো হবে।</p>