<p>অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গোটা দেশকে দুর্নীতির সাগরে ডুবিয়ে একটা চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন শেখ হাসিনা। হাসিনার অপকর্ম যা দিবালোকের মতো সত্য, কোটি কোটি মানুষ সাক্ষী। কিন্তু সেগুলো স্বীকার করে না ভারতীয় মিডিয়া। শেখ হাসিনার এসব অপকর্ম ও তার দুঃশাসনের সত্য ইতিহাস মানতে নারাজ ভারতীয় মিডিয়া। জলজ্যান্ত সত্যকেও তারা স্বীকার করছে না। আমার মনে হয় কি, কিছু ভারতীয় মিডিয়া আওয়ামী লীগের চেয়েও হাসিনাপ্রেমী। </p> <p>রবিবার (৫ জানুয়ারি) বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। </p> <p>পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে- ভারতের একটি পত্রিকায় এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, এটা লক্ষ্য করছি যে, ভারতীয় গণমাধ্যম (বাংলাদেশ ইস্যুতে) অনেক ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। আসলে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতীয় সাংবাদিকদের তথ্য সমৃদ্ধ নয়। এ বিষয়ে ফোনালোপে প্রফেসর ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেছিলেন, বাংলাদেশে এসে সরেজমিনে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ভারতীয় সাংবাদিকদের যেন তিনি উৎসাহিত করেন। কিন্তু তারা আসছেন না।  </p> <p>ভারতের দায়িত্বশীল গণমাধ্যমগুলোও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এই কাজটি তাদের ইচ্ছাকৃত না কি পতিত স্বৈরাচার সরকারের প্রতি তাদের যে প্রেম-ভালোবাসা ছিল সেটা হয়তো এখনও কমেনি।</p> <p>ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠনের ওয়েবসাইট (আইডিআরডব্লিউ.অর্গ) সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, পাকিস্তান থেকে কিছু স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে বাংলাদেশ। বঙ্গপোসাগরে এই সামরিক অস্ত্র জমা করা হচ্ছে। এই তথ্যের সত্যতা কী অথবা অসত্য হলে এই ধরনের মিথ্য সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে কী বলবেন?</p> <p>জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এগুলো সবই ধারণাপ্রসূত প্রতিবেদন। এমন অনুমাননির্ভর সংবাদের কোনো সোর্স নাই, কে বলেছে তাও বলা নাই। সেটাই বলছি যে, ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তাছাড়া আমরা কার কাছ থেকে কি কিনি এটা ভারতের দেখার বিষয় নয়। বাংলাদেশ ইস্যুতে খবর প্রকাশের আগে তাদের (ভারতীয় সাংবাদিকদের) উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। কোনো তথ্য পেলে তারা চেক করতে পারে। বাংলাদেশের চিফ অ্যাডভাইজার প্রেস উইং ফ্যাক্টস থেকে নিশ্চিত হতে পারে। কথা বলতে পারে। কিন্তু তারা সেটা না করেই প্রতিবেদন লিখছেন। তাদের ইচ্ছাই হচ্ছে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো। সত্য শোনার ভয়ে তারা আমাকে ফোনও করছেন না।</p> <p>তিনি বলেন, ভারতের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে তাদের ব্যুরো অফিস খুলুক। প্রতিনিধি নিয়োগ দিক। তাদের সরেজমিনে করা তথ্য নিয়ে প্রকাশ করুক। আমরা তো বাধা দিচ্ছি না, স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা ভারতীয় সাংবাদিকদের এটাও বলেছি, বাংলাদেশে আসুন, আপনাদের ভিসা এক ঘণ্টায় করে দেব।</p> <p>মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কারিগর ভারতের সাংবাদিকতাকে কীভাবে দেখছেন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ভারতের সাংবাদিকতা অনেক পুরোনো। জার্নালিজমে তাদের ভালো ভালো রেকর্ডও আছে। তাদের কিছু কিছু পত্রিকা, কিছু ওয়েবসাইট খুবই জনবান্ধব। আবার কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম খুবই উগ্রবাদী, পুরোপুরি গোদি মিডিয়া। তারা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ায়, যা উন্নত সমাজে দেখা যায় না।</p> <p>ভারত কেন বাংলাদেশ নিয়ে এমন অপপ্রচারে ব্যস্ত? এটা সংখ্যালঘু ইস্যু নাকি পাকিস্তান ইস্যুর কারণে হচ্ছে প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, আমি এটার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, শেখ হাসিনার অপকর্ম ও তার দুঃশাসনের সত্যতা মানতে নারাজ ভারতীয় মিডিয়া। জুলাই-আগস্টে প্রায় ২ হাজার খুন হয়েছে, গত ১৫ বছরে ৩ হাজারের বেশি গুম হয়েছে। বিরোধীদলের ৫০-৬০ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের জীবনটা শেষ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা চাকরিও পায়নি। গোটা দেশকে দুর্নীতির সাগরে ডুবিয়ে একটা চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন শেখ হাসিনা। আমাদের এখানে যা দিবালোকের মতো সত্য, হাসিনার অপকর্ম কোটি কোটি মানুষ সাক্ষী, অথচা এটা স্বীকার করে না ভারতীয় মিডিয়া।  </p> <p>তিনি বলেন, গত তিন সপ্তাহ আগে ভারতের একটা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর সাবেক এজেন্ট লক্ষণ সিং বিস্ট (লাকি বিস্ট) ভারতের এক টেলিভিশন লাইভে বলছিলেন, (আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর) বাংলাদেশে অস্বাভাবিক মৃত্যু বাড়বে। তার ওই বক্তব্যের পর পরই দেখা গেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়কদের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছে। র-এর সাবেক এজেন্টের বক্তব্যের সঙ্গে এসব ঘটনা সম্পর্কযুক্ত কি না?</p> <p>জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এগুলো বায়বীয়। এগুলো বলে অনেকে সুখ পায়। এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। দেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের যেসব ঘটনা ঘটেছে আমরা সব তথ্য দিয়েছি। কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সেই তথ্য দিয়েছি। এই ইস্যুতে আমরা খুবই সচেতন ও স্বচ্ছ।</p>