<p>জীবন মানেই মৃত্যুর পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা। মৃত্যু বরাবরই কষ্টদায়ক, অপ্রত্যাশিত। তবে জন্মালে মরতে হবেই, এটাই চিরন্তন সত্য। যদিও এই সত্য মেনে নিতে কষ্টই হয় সবার। তবু যেতে হয়। চলে যায় মানুষ। রেখে যায় তাঁর হাজারও স্মৃতি। প্রতি বছর বিনোদন অঙ্গনের অনেক প্রিয় মুখ না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। কারো মৃত্যুতে বিষাদ নেমে আসে ভক্তদের মাঝে, কারো মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ বছরও দেশীয় শোবিজ অঙ্গনে অনেক গুনী তারকা জীবনের পাঠ চুকিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে নিজেদের কর্মের মধ্য দিয়ে তারা ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। আজকের প্রতিবেদন দেশের এমন কিছু প্রয়াত তারকাকে নিয়ে, যারা কর্মগুণে রেখেছেন বিশালতার ছাপ। যাদের এ বছর হারিয়েছি আমরা।</p> <p><strong>সাদি মহম্মদ</strong><br /> ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ মারা যান প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। অজানা এক অভিমানে আত্মহত্যা করেন এই গুণী সংগীতশিল্পী। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সাদি মহম্মদ। তার প্রথম অ্যালবাম ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’। ২০০৯ সালে ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। তার প্রকাশিত অ্যালবামের সংখ্যা ষাটের অধিক। সাদি মহম্মদকে ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে।</p> <p><strong>আহমেদ রুবেল</strong><br /> নন্দিত অভিনেতা আহমেদ রুবেলও এ বছর পরপারে পাড়ি জমান। গত ৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র তিন মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয় ছিলেন এই গুণী অভিনেতা। হুমায়ূন আহমেদের নাটক ‘পোকা’য় অভিনয় করে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘অতিথি’, ‘নীল তোয়ালে’, ‘বিশেষ ঘোষণা’, ‘সবাই গেছে বনে’, ‘বৃক্ষমানব’, ‘যমুনার জল দেখতে কালো’ এই নাটকগুলোতে রুবেলের অভিনয় প্রশংসিত হয়। ১৯৯৩ সালে ‘আখেরী হামলা’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় আহমেদ রুবেলের। এরপর অভিনয় করেছেন ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘ব্যাচেলর’, ‘গেরিলা’, ‘দ্য লাস্ট ঠাকুর’, ‘অলাতচক্র’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পিএইচডি ছেড়ে ‘অনলি ফ্যানস’-এ প্রাপ্তবয়স্ক কন্টেন্টের মডেল হলেন জারা" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/24/1735032189-e6137c4b0907b2eb0b3597684044f873.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পিএইচডি ছেড়ে ‘অনলি ফ্যানস’-এ প্রাপ্তবয়স্ক কন্টেন্টের মডেল হলেন জারা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/12/24/1460821" target="_blank"> </a> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ফিরে দেখা ২০২৪, ভারতের শীর্ষ আয়কারী ৫ সিনেমা" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/23/1734940689-b61ac5f798102d653fad4632e51031cd.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ফিরে দেখা ২০২৪, ভারতের শীর্ষ আয়কারী ৫ সিনেমা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/12/23/1460462" target="_blank"> </a> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ফিরে দেখা ২০২৪, সিক্যুয়ালেই সাফল্য জুটেছে হলিউডে" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/23/1734951181-93e15c0bf62683d8bdfac34ef8fd7fcd.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ফিরে দেখা ২০২৪, সিক্যুয়ালেই সাফল্য জুটেছে হলিউডে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/12/23/1460510" target="_blank"> </a></div> </div> </div> </div> </div> </div> <p><strong>মনি কিশোর</strong><br /> ৯০ দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোর চলতি বছর অক্টোবরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। ১৯ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মনি কিশোর পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। রেডিও, টিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও গান গেয়েছেন অল্প। সিনেমায়ও তেমন গাননি। মূলত অডিওতে চুটিয়ে কাজ করেছেন। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার সবচেয়ে শ্রোতৃপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তারই সুর করা, তারই লেখা। ২০টির মতো গান লিখেছেন ও সুর করেছেন মনি কিশোর।</p> <p><strong>মাসুদ আলী খান</strong><br /> বরণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা যান চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। মাসুদ আলী খানের অভিনয়ের শুরুটা হয় মঞ্চ নাটকের মধ্যামে। ১৯৫৬ সালে দেশের প্রথম নাটকের দল ‘ড্রামা সার্কেল’-এর সঙ্গে যুক্ত হন মাসুদ আলী খান। ১৯৬৪ নূরুল মোমেনের নাটক ‘ভাই ভাই সবাই’ নাটকে অভিনয়ে মধ্য দিয়ে ছোট পর্দায় তার অভিষেক হয়। পাঁচশোরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।</p> <p>তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি নাটক হচ্ছে ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’। বড় পর্দায় তার অভিষেক হয় ‘নদী ও নারী’ সিনেমায় মাধ্যমে। তার অভিনীত কয়েকটি সিনেমা ‘দুই দুয়ারি’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘মাটির ময়না’, ‘জোনাকীর আলো’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’। ২০২৩ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য মাসুদ আলী খান পেয়েছেন একুশে পদক। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক ছাড়াও পান আরও অনেক পুরস্কার।</p> <p><strong>অলিউল হক রুমি</strong><br /> আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা অলিউল হল রুমি মারা যান চলতি বছরের ২২ এপ্রিল। মৃত্যুর আগে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন এই অভিনেতা। ক্যানসার জয় করে আগের মতো অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেরা হয়নি তার। অভিনয়ে তিন দশকের বেশি সময় পার করেছেন এই অভিনেতা। এই দীর্ঘ সময়ে অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও সিনেমায়। </p> <p>টেলিভিশনের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সিনেমাতেও। ২০০৯ সালে ‘দরিয়াপাড়ের দৌলতি’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন অলিউল হক রুমি। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাতে বেশি অভিনয় করতেন তিনি। তার আঞ্চলিক ভাষার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকরা। অভিনেতার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো–‘বোকাসোকা তিনজন’, ‘মেকাপ ম্যান’, ‘ঢাকা টু বরিশাল’, চৈতা পাগল’, ‘জমজ সিরিজ’, ‘ঢাকা মেট্রো লাভ’, ‘জার্নি বাই বাস’, ‘রতনে রতন চিনে’, ‘আমেরিকান সাহেব’, ‘বাকির নাম ফাঁকি’, ‘কমেডি ৪২০’, ‘জীবনের অলিগলি’ ইত্যাদি।</p> <p><strong>সুজেয় শ্যাম</strong><br /> স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম মৃত্যুবরণ করেন ১৭ অক্টোবর। ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেটে সুজেয় শ্যামের জন্ম। এই গুণী সংগীতশিল্পীর সুর করা গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’ এবং ‘শোন রে তোরা শোন’। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।</p> <p><strong>আফরোজা হোসেন</strong><br /> দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১০ নভেম্বর মারা যান ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফরোজা হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন আফরোজা। জরায়ুমুখ ক্যানসার ধীরে ধীরে মেরুদণ্ড থেকে হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে তার। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। ১৯৮০-১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন আফরোজা। ক্যারিয়ারের শুরুতে টেলিভিশন নাটক দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং পরে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন এই অভিনেত্রী।</p> <p><strong>আবু জাফর</strong><br /> বছরের শেষের দিকে আমরা হারাই বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিক্ষক আবু জাফরকে। তিনি মারা যান গত ৫ ডিসেম্বর। আবু জাফর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আবু জাফর রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন। আবু জাফর ছিলেন একাধারে একজন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। একাধিক কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি। এর মধ্যে ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘আমি হেলেন কিংবা মমতাজকে দেখিনি’, ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি’ উল্লেখযোগ্য গান। ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ এই গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান জায়গা করে নিয়েছিল। তার রচিত দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গান বাংলা সংগীতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে।</p> <p>গীতিকার, সুরকার, শিক্ষক এই পরিচয়ের বাইরে তার আরেকটা পরিচয় ছিল। তিনি ছিলেন কবি। বেশ কিছু কবিতার বই লিখেছেন আবু জাফর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘নতুন রাত্রি পুরোনো দিন’, ‘বাজারে দুর্নাম তবু তুমিই সর্বস্ব’, ‘বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত কবিতা’ (অনুবাদ কাব্য)।</p> <p><strong>পাপিয়া সারোয়ার</strong><br /> বছরের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান একুশে পদকজয়ী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গত ১২ ডিসেম্বর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান গুণী এই শিল্পী।</p> <p><strong>সি বি জামান</strong><br /> ‘উজান ভাটি’ খ্যাতদেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান মারা গিয়েছেন ২০ ডিসেম্বর। চলতি মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন তিনি। সি বি জামান তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ঝড়ের পাখি, উজান ভাটি, পুরস্কার, কুসুম কলিসহ বেশ কয়েকটি প্রশংসিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন।</p> <p><strong>আলাউদ্দিন লাল</strong><br /> গত ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল। ২০০৮ সাল থেকে টিভি নাটকে অভিনয় করেন আলাউদ্দীন লাল। প্রায় ৩০০ নাটকে অভিনয় করেছেন এই প্রবীণ অভিনেতা।</p> <p><strong>মিনহাজ আহমেদ পিকলু</strong><br /> বছরের শেষে ২০ ডিসেম্বর মারা যান রকস্ট্রাটা ও অর্থহীন ব্যান্ডের সাবেক গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলু। তিনি ছিলেন কিংবদন্তি গিটারিস্ট নিলয় দাশের শিক্ষার্থীদের অন্যতম। গিটারিস্ট পিকলু আশির দশকের মাঝামাঝিতে হার্ডরক জনরার ব্যান্ড রকস্ট্রাটা ও জলি রজারসে গিটার বাজাতেন। নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে কিছুদিন তিনি ওয়ারফেজ ব্যান্ডে যোগ দেন। পরে ১৯৯৯ সালে অর্থহীন ব্যান্ডে যোগ দেন পিকলু। অর্থহীনের রাতের ট্রেন, গুটি ফ্রম হেল, নির্বোধসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানে গিটার বাজিয়েছেন তিনি।</p>