<p>নিখোঁজের ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্ধান মেলেনি আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের। গত ১০ জুন দিবাগত রাত থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশ্বাস খুব শিগগিরই আদনানের নিখোঁজ রহস্যের জট খুলবে।</p> <p>দেশে সম্প্রতি সময়ে খুব জনপ্রিয় একজন বক্তা হয়ে উঠেছিলেন আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ওয়াজের ভিডিওগুলো খুব সমাদৃত হয়েছিল। আর দশজন বক্তার মতো গতানুগতিক ছিলেন না আবু ত্ব-হা। অত্যন্ত স্মার্ট, পরিষ্কার ও মানসম্মত বাংলায় চমৎকার বাচনভঙ্গিতে কথা বলেন তিনি। প্রস্তুতি নিয়ে, গুছিয়ে, বিষয়ের মধ্যেই থেকে টু দ্য পয়েন্টে কথা বলেন। উচ্চারণে আভিজাত্য স্পষ্ট। প্রচলিত ওয়াজের ভঙ্গি তার নয়। কোরাআনের আয়াত ও হাদিসের আরবি ইবারতও আনেন বক্তৃতায়।</p> <p><strong>ক্রিকেটার থেকে জনপ্রিয় বক্তা</strong><br /> একসময়কার তুখোড় ক্রিকেটার আফসানুল আদনান ত্ব-হা। রংপুরের ক্রিকেট অঙ্গনে সবার পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। সেখান থেকে দর্শনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। স্নাতকে পড়ার সময় থেকেই ধর্মের প্রতি তাঁর ঝোঁক বাড়তে থাকে। বাবার মৃত্যুর পর রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের নানার বাড়িতে বড় হয়েছেন তিনি। ৩১ বছর বয়সী আদনান ইসলাম ধর্মের প্রচুর বই পড়তেন এবং গবেষণা করতেন। দর্শনে স্নাতকোত্তর করা আদনান অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন একজন ভালো ইসলামী বক্তা। তিনি উগ্রবাদকে সমর্থন করতেন না বলেও দাবি করেছেন স্বজনরা।</p> <p>আদনানের মা আজেদা বলেছেন, দর্শনে স্নাতকোত্তর পড়ে বাড়ির পাশে আল জামেয়া আসসালাফিয়া মাদরাসায় পড়াশুনা করছেন আদনান।</p> <p>আদনান অনলাইনে আরবি পড়ানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে জুমার খুতবা দেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। তিনি ধর্মীয় বক্তা হিসেবেও জনপ্রিয়; তার ফেসবুকে পেজের অনুসারীর সংখ্যা ৫২ হাজার।</p> <p>আদনানের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার বলেন, ধর্মীয় মতবাদ নিয়ে আলেমদের একটি পক্ষের সঙ্গে তার মতবিরোধ তৈরি হয়। এসব কারণে তিনি পরিচিত আলেমদের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনো সাড়া পাননি। বরং সাধারণ মানুষ ও অনুসারীরা আদনানকে ফিরে পেতে অনলাইনে অনেক বেশি সোচ্চার।</p> <p><strong>যেভাবে নিখোঁজ</strong><br /> গত ১০ জুন বিকেলে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে রংপুরের বাসা থেকে বের হন আদনান। রাত আড়াইটার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয় তাঁর। আদনানের সঙ্গে থাকা আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনও নিখোঁজ। তাঁদের সবার মোবাইল ফোনও বন্ধ।</p> <p>ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাবিকুন্নাহার জানান, রংপুরের বাড়ি থেকে ওই দিন বগুড়ায় একটি ধর্মীয় সভায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল আদনানের। এরপর ঢাকায় আসার কথা। বিকেল ৪টার দিকে রংপুর থেকে একটা কারে করে বগুড়ার উদ্দেশে বের হন তিনি। ওই গাড়িটির মালিক রংপুরের আমির উদ্দীন, তিনিই চালান। সাধারণত রংপুর থেকে ঢাকা যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমির উদ্দীনের গাড়িটি ব্যবহার করতেন আদনান। রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ফোনে আদনান জানান, দুটি মোটরসাইকেলে চারজন তার গাড়িটিকে অনুসরণ করছে। পরে হয়তো ভয়ে বা উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি বগুড়ার সভায় যোগ না দিয়ে ঢাকার পথ ধরেন।</p> <p>তার সঙ্গে আব্দুল মুহিত ও মোহাম্মদ ফিরোজ নামে যে দুজন ছিলেন তারা মূলত আদনানকে বগুড়ার সভায় নিতে এসেছিলেন। পরে পরিস্থিতি বুঝে তারা আদনানকে ঢাকা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত আড়াইটার দিকে তার গাড়ি গাবতলী পৌঁছেছে বলে স্ত্রীকে জানান আদনান। এরপর থেকেই আর কোনো যোগাযোগ নেই।</p>