<p style="text-align:justify">মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার করমদী নামের প্রত্যন্ত গ্রামে আমার জন্ম। কৃষক পরিবারেই আমি জন্মগ্রহণ করেছি । বাবা জমিতে সবজি চাষ করে সংসারের খরচ জোগাড় করতেন। কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিশোর বয়সেই বাবার পাশাপাশি আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল। স্কুল থেকে ফিরে বাজারে সবজি বিক্রি করার পর সেই টাকা দিয়েই আমার পড়াশোনার খরচ এবং সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হতো। </p> <p style="text-align:justify">আমি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ফল করার কারণে আমার শিক্ষকরা আমাকে ফ্রি পড়াতেন। কিন্তু স্কুল ছুটির পর আমাকে বাজারে যেতে হতো, এ জন্য দিনের বেলা পড়াশোনা করার সুযোগ পেতাম না, ফলে রাতের বেলা হেঁটে হেঁটে অনেক দূরে গিয়ে স্যারের কাছে পড়াশোনা করতাম। এভাবে পড়াশোনা করে আমি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। তারপর আমার অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। সব দিক বিবেচনায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে ভর্তি হই। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পরে জীবনে নতুন করে সংগ্রামের গল্প শুরু হয়। </p> <p style="text-align:justify">হলে সিট না পাওয়ায় আমাকে হলের একটা কক্ষের মেঝেতে ঘুমাতে হয়। এ ছাড়া বাবার কোনো আয়ের উৎস না থাকায় আমাকে টাকা পাঠাতে পারে না। ঢাকা শহরে নতুন আসায় আমি টিউশনির ব্যবস্থাও করতে পারি না। ফলে আমাকে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। সারা দিন চিন্তা করতে হয় আগামীকাল খাওয়ার টাকা কিভাবে ব্যবস্থা করবো। তারপর একদিন বসুন্ধরা গ্রুপের সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তির কথা জানতে পারি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিনিধিকে আমার বিষয় জানালে তারা আমার শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন। বসুন্ধরা শুভসংঘ  আমার শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যন্ত আমাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। যার ফলে আমাকে আর খাওয়ার টাকার চিন্তা করতে হয় না। এবার আমি নিশ্চিন্তে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেজেন্টেশনের জন্য আমার ফর্মাল ড্রেস না থাকার বিষয়টি বসুন্ধরা শুভসংঘের স্বপ্নদ্রষ্টা, কথাসাহিত্যিক জনাব ইমদাদুল হক মিলন মহোদয়কে অবহিত করলে স্যার আমাকে ফর্মাল পোশাক কেনার ব্যবস্থা করে দেন। আমার জীবনে বসুন্ধরা শুভসংঘ আশীর্বাদস্বরূপ। আমার মতো হাজার হাজার অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সুযোগ দেওয়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।</p> <p style="text-align:justify">মো. তামিম আহমেদ<br /> অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ<br /> ২০২৩-২৪ সেশন <br /> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়</p>