<p style="text-align:justify"><span style="color:#c0392b">ইংরেজি নাম লেডিস হেট প্ল্যান্ট, চায়নিজ হ্যাট প্ল্যান্ট ও ম্যান্ডারিন হ্যাট। পাতা একক, আগা চোখা, বোঁটা আড়াই সেমি লম্বা, গাঢ় সবুজ, নিচ ফ্যাকাসে ধরনের, বিপ্রতীপ, ডিম্বাকার বা লম্ব-ডিম্বাকার, ৪ থেকে ৬ সেমি লম্বা, কিনারা ঈষৎ দাঁতানো। কচি পাতা ও কুঁড়ি রোমশ। প্রস্ফুটনকাল অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। ফুল ডালের আগায় অথবা পাতার কোলে গুচ্ছবদ্ধভাবে থাকে</span></p> <p style="text-align:justify">প্রথমদিকে ভেবেছি, ফুলটি আমাদের দেশি নয়। কারণ প্রায় দুই দশক আগে রমনা পার্কে দেখা গাছটি লেডিস আমব্রেলা নামেই চিনেছি। পরিচয় জানার আগে কতবার যে গাছটির আশপাশ দিয়ে হেঁটেছি, হিসাব নেই। তখন ভেবেছি বাগানবিলাসের ঝাড়। ফুল ও পাতাগুলো দূর থেকে দেখতে অনেকটা সে রকমই। এ কারণে আগ্রহ নিয়ে দেখা হয়নি কখনো। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, লালচে রঙের ফুলগুলোর গড়ন অনেকটা ছাতার মতোই। মাঝখানে বেশ যুৎসই একটা ডাঁটাও আছে। ফুলগুলো নিখুঁত বিন্যাসে ফুটে থাকে গাছজুড়ে। পরে বই পড়ে জানতে পারি, গাছটি ভিনদেশি নয়, আমাদের দেশি, নাম কুশমিকা।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ’ গ্রন্থের তথ্যমতে, গাছটি ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। কিন্তু বৃহত্তর সিলেটের বনবাদাড়ে কখনো চোখে পড়েনি এ গাছ। গাছটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক আবাসেই দুবার গাছটির দেখা পাওয়া গেল। ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরের দিকে রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই যাওয়ার পথে আসামবস্তি লাগোয়া বনে ফুলসমেত গাছগুলো দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল গাছটি বন থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ২০২১ সালে আবার বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাওয়ার পথে নীলগিরি থেকে ১০ কিমি আগে অনেক সুদৃশ্য ফুলের ভিড়ে এদের কয়েকটি ঝাড় চোখে পড়ল। তাতে আনন্দ আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেল। প্রাকৃতিক আবাসে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণী স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা। সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলায় আমিনুল ইসলামের ‘গাছবাড়ি’তেও দেখেছি কুশমিকা। শরৎ-হেমন্তে আমাদের নগরগুলো বিবর্ণ ও হতশ্রী হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে আলোচ্য কুশমিকা কিছুটা হলেও বর্ণিত মৌসুমে আমাদের ফুলের দৈন্যতা ঘোচাতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">কুশমিকা বা লেডিস আমব্রেলা (Holmskioldia sanguinea) আশ্রয়ে গড়ান গুল্ম ধরনের শক্ত লতার গাছ। ইংরেজি নাম লেডিস হেড প্ল্যান্ট, চায়নিজ হ্যাট প্ল্যান্ট ও ম্যান্ডারিন হ্যাট। পাতা একক, আগা চোখা, বোঁটা আড়াই সেমি লম্বা, গাঢ়-সবুজ, নিচ ফ্যাকাসে ধরনের, বিপ্রতীপ, ডিম্বাকার বা লম্ব-ডিম্বাকার, ৪ থেকে ৬ সেমি লম্বা, কিনার ঈষৎ দাঁতানো। কচি পাতা ও কুঁড়ি রোমশ। প্রস্ফুটনকাল অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। ফুল ডালের আগায় অথবা পাতার কোলে গুচ্ছবদ্ধভাবে থাকে। বৃতি ঘণ্টাকৃতির, প্রায় ২ সেমি চওড়া, দেখতে লালচে কমলা রঙের। দল নলাকার এবং বহিস্থ, ঠোঁটাল, ২ সেমি লম্বা ও ওপরের ঠোঁট দুই খণ্ডে বিভক্ত, নিচের ঠোঁট তিন খণ্ড। ডিম্বাশয় ৪ কোষী। গর্ভদণ্ড লম্বাটে, গর্ভমুণ্ড ২-বিভক্ত। পুংকেশর চারটি, ২-গুচ্ছ। ফল ডিম্বাকার, চার খণ্ড, বীজের সংখ্যাও চার। এরা উপহিমালয় অঞ্চলের প্রজাতি। পৃথিবীর অন্যান্য উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে হলুদ প্রজাতির ফুলও সহজলভ্য। পূর্ব সিলেটের পাহাড়ে আপনা-আপনিই জন্মে। আলংকারিক গুল্ম হিসেবে বাগানেও চাষযোগ্য। ফুলদানিতেও বেশ মানানসই। বংশবৃদ্ধি দাবাকলমে। চাষের জন্য অপেক্ষাকৃত উঁচু ও উর্বর স্থান প্রয়োজন। গোড়ায় জল জমলে বাঁচে না।</p>