প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ইউএসআইডি সংস্থাটির ১০ হাজারের বেশি কর্মীর মধ্যে ৩০০ জনেরও কম কর্মী রাখার পরিকল্পনা করছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার চারটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটনের মানবিক সহায়তা সংস্থাটি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্যবসায়ী ইলন মাস্কের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সরকারি পুনর্গঠন কর্মসূচির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এই পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থার মাত্র ২৯৪ জন কর্মীকে তাদের চাকরি বহাল রাখার অনুমতি দেওয়া হবে, যার মধ্যে আফ্রিকা ব্যুরোতে মাত্র ১২ জন এবং এশিয়া ব্যুরোতে আটজন রয়েছেন।
ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জে. ব্রায়ান অ্যাটউড। তিনি বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত জঘন্য কাজ।’ তিনি আরো বলেন, ‘কর্মীদের গণহারে ছাঁটাই কার্যকরভাবে এমন একটি সংস্থাকে হত্যা করবে, যা বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ বেঁচে থাকবে না।
’ ব্রায়ান অ্যাটউড এখন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
ট্রাম্প এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ক ইউএসএআইডি কর্মীদের অপরাধী বলে অভিযোগ তুলে বহু কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়েছেন। শত শত অভ্যন্তরীণ ঠিকাদারকে ছাঁটাই করা হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিকে অচলাবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার প্রশাসন ঘোষণা করেছে, তারা বিশ্বব্যাপী সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সব ইউএসএআইডি কর্মীকে ছুটিতে পাঠাবে এবং বিদেশে কর্মরত হাজার হাজার কর্মীকে প্রত্যাহার করবে।
সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও বলেছিলেন, প্রশাসন এমন প্রগ্রামগুলো চিহ্নিত এবং মনোনীত করছে, যা এই কর্মবিরতি আদেশ থেকে অব্যাহতি পাবে। এই কর্মসূচিগুলো বিশ্বব্যাপী রোগের বিস্তার বন্ধ, দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ এবং অন্যথায় দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
আরো পড়ুন
বিশ্বব্যাপী কর্মীদের ছুটিতে পাঠাল মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি
স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মবিরতি আদেশের কারণে ইউএসএআইডির বাস্তবায়নকারী অংশীদাররা আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই সংস্কার হাজার হাজার কর্মী এবং তাদের পরিবারের জীবনকে বিপর্যস্ত করবে।
প্রশাসনের লক্ষ্য হলো- রুবিওর নেতৃত্বে ইউএসএআইডিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে একীভূত করা, যাকে ট্রাম্প ভারপ্রাপ্ত ইউএসএআইডি প্রশাসক করেছেন। তবে কংগ্রেস ভোট না দিলে তিনি সংস্থাগুলোকে একীভূত করতে পারবেন কি না তা স্পষ্ট নয়। যেহেতু আইনের মাধ্যমে ইউএসএআইডি তৈরি হয়েছিল।
কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস) অনুসারে, ইউএসএআইডি বিশ্বজুড়ে ১০ হাজারের বেশি লোককে নিয়োগ করেছে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। এটি ২০২৩ অর্থবছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ দিয়েছে, যার জন্য সম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থার ঘটনাবলীর সঙ্গে পরিচিত সূত্র জানিয়েছে, কিছু কর্মী চাকরিচ্যুতির নোটিশ পেতে শুরু করেছেন। ইউএসএআইডি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে শুধু মিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে, মূল নেতৃত্বে এবং বিশেষভাবে মনোনীত কর্মসূচিগুলোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বাদে সব ইউএসএআইডির সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হবে।
আরো পড়ুন
তাইওয়ান দ্বীপের কাছে ৬ চীনা বেলুন শনাক্ত
সংস্থাটি ২০২৩ সালে প্রায় ১৩০টি দেশে সহায়তা প্রদান করেছে, যার মধ্যে অনেক দেশ সংঘাতে ভেঙে পড়েছে এবং দরিদ্র। সিআরএস রিপোর্ট অনুসারে, শীর্ষ সহায়তা প্রাপক ছিল ইউক্রেন, তারপরে ইথিওপিয়া, জর্দান, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং আফগানিস্তান।
এদিকে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডিকে অপরাধমূলক সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক। সংগঠনটিকে উগ্র বাম মার্ক্সবাদীদের একটি ‘সাপের বাসা’ বলেও অভিহিত করেছেন এবং এটি বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন।
সূত্র : রয়টার্স