ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬

সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক

  • ইউনূস-মোদি বৈঠক
শেয়ার
সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের সাংগ্রিলা হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি ছাড়াও সীমান্ত হত্যা বন্ধ, গঙ্গার পানিচুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি, তিস্তার পানিচুক্তিসহ আরো কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে ৪০ মিনিট স্থায়ী এই আলোচনা ছিল অত্যন্ত খোলামেলা, ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক।

বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)। বিমসটেকের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান। জোটের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন গত ২ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের ২০তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্য ও ভ্রমণ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে সদস্য দেশগুলো। এর ফলে সাত দেশের মধ্যে সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার এক নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে মনে করছেন আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা।

দুই নেতার মধ্যকার বৈঠক প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

১৯৭১ সালে আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বৈঠকের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে পোস্ট করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
সেখানে তিনি বলেছেন, আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি এবং গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম রোধে ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

প্রতিবেশী দুই দেশের সরকারপ্রধানদের এই বৈঠক সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে বৈঠক হয়েছে, তা দুই দেশের সম্পর্কে আশার আলো তৈরি করেছে। আমরাও মনে করি, প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই আরো নিবিড় হবে এবং পারস্পরিক কল্যাণে হাতে হাত মিলিয়ে দুই দেশের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করুন

    মাদকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ
শেয়ার
কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করুন

মাদক ক্রমেই এক ভয়ংকর সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠছে। দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স রয়েছে। লাগাতার অভিযান হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না।

ক্রমেই বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। শহর শুধু নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এখন মাদক সহজলভ্য। বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) হিসাব মতে, দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাদকের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা।
গত দুই বছরে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের হার বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। শুধু সংখ্যাগত দিক থেকে নয়, বরং বদলে গেছে তাদের অপরাধের ধরন, প্রকৃতিও।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদক সহজলভ্য হওয়ায় কিশোররা ক্রমেই বেশি করে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

এরপর মাদক ক্রয়ের অর্থ সংগ্রহের জন্য জড়িয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের অপরাধে। অনেক সময় অর্থের জন্য বিভিন্ন অপরাধীচক্রের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। অনেকে তাদের ভাড়ায় খাটাচ্ছে। ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। নিজেরা নিজেরা কিংবা বড় ভাইদের আশ্রয়ে গড়ে তুলছে কিশোর গ্যাং
সারা দেশেই সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে কিশোর গ্যাং। খুন, ডাকাতি থেকে এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে এরা জড়িত নয়। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, মাদক ব্যবসার স্পট পরিচালনাসহ খুচরা পর্যায়ে মাদক বিক্রিতে ব্যাপকহারে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আরো খারাপ বার্তাই দেয় আমাদের। কালের কণ্ঠের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ জানিয়েছে, রংপুর নগরীসহ জেলায় কিশোর অপরাধে জড়িতদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত। প্রায় একই অবস্থা অন্যান্য স্থানেও।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ লগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। এত কঠোর আইন সত্ত্বেও মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। মাদকের ভয়ংকর থাবা থেকে দেশ বাঁচাতে মাদকের সহজলভ্যতা দূর করতে হবে। দেশে মাদক প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে

    শুল্কযুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব
শেয়ার
বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে

বৈশ্বিক পর্যায়ে রীতিমতো শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রশাসন নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। এর বিপরীতে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্কযুদ্ধ বিশ্ববাণিজ্যকে অস্থির করে তুলেছে।

অনেক অর্থনীতিবিদ এ কারণে ব্যাপক আকারে বৈশ্বিক মন্দা শুরুরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশও এই শুল্কযুদ্ধের বড় শিকার হয়েছে।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শুল্কযুদ্ধ বা বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যেও একই পরিমাণ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন।

এরই জের ধরে চীনা পণ্যের ওপর আরো ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ করা হচ্ছে। বুধবার থেকেই এটি কার্যকর হবে। এদিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ কখনোই মেনে নেবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীন মামলাও করেছে। একইভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও। পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে ইউরোপের ২৭টি দেশ। এভাবে পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ফলে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে তার ওপরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জানা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে মোট ৮৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এই শিল্পে ৪০ লাখের বেশি শ্রমজীবী সরাসরি জড়িত। তাই অনেকে আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি ও সমাজজীবনে। গতকাল প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নতুন করে শুল্কারোপের কারণে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্রয়াদেশ স্থগিত করতে শুরু করেছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোনো কোনো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান মূল্যছাড়ও চাইতে শুরু করেছে। তাঁদের ধারণা, ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘটনায় মার্কিন বাজারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি কমে যেতে পারে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি সামলাতে এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অতিরিক্ত শুল্কারোপ অন্তত তিন মাস স্থগিত রাখার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

মন্তব্য

গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে

    কমিশনের কিছু অবাস্তব সুপারিশ
শেয়ার
গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে

গণমাধ্যম রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহযোগিতা করে। উন্নত বিশ্বে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক সহযোগিতা করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশে অতীতে নানাভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং একটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। ওই সংস্কার কমিশন সমপ্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কারে যেসব সুপারিশ ও প্রস্তাবসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তা সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এর কিছু কিছু  প্রস্তাব অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তবে বেশ কিছু প্রস্তাব গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত অনেককে বিস্মিত, শঙ্কিত ও ভীত করেছে।
অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, কমিশনের কিছু প্রস্তাব বাস্তবতাবিবর্জিত।

স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে এসেছে আমাদের সংবাদপত্রশিল্প। কিন্তু এখনো অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। রয়েছে আর্থিক সংকট, গুণগত মান ও পেশাদারির অভাব।

রয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যম উন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু কমিশন এমন কিছু সুপারিশ করেছে, যা এই শিল্পের বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাদের কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গেলে গণমাধ্যমে ধস নামবে। হাজারো সংবাদকর্মী চাকরি হারাবেন।
বন্ধ হয়ে যাবে বেশির ভাগ গণমাধ্যম। জানা যায়, এমন অবাস্তব সুপারিশের পেছনে গণমাধ্যমেরই একটি স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত। কমিশন ওয়ান মিডিয়া, ওয়ান হাউস ধারণা বাস্তবায়নের কথা বলেছে। এ ধরনের চিন্তাকে অনেকেই স্বেচ্ছাচারমূলক, অন্যায্য ও আপত্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন। একক মালিকানায় বা কোন গ্রুপে কয়টি প্রতিষ্ঠান থাকবে, লোকসানি প্রতিষ্ঠান চালানো হবে কি নাএমন সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার উদ্যোক্তাদেরই থাকা প্রয়োজন। ওয়ান মিডিয়া, ওয়ান হাউস ধরনের স্লোগানে কাউকে টার্গেট করা হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক। গণমাধ্যমের লক্ষ্য হলো সেবা। তাকে পুঁজিবাজারে নিয়ে মুনাফাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের কাতারে দাঁড় করানোও কাঙ্ক্ষিত নয়। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতন স্কেল, গ্রেড নির্ধারণসহ এমন আরো কিছু বিষয়ে এমন কিছু সুপারিশ করা হয়েছে, যেগুলো বাস্তবতাবিবর্জিত।

আমরা মনে করি, কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা দেশের বিকাশমান গণমাধ্যমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মন্তব্য

অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে

    ফিলিস্তিনে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ
শেয়ার
অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে

বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। নারী-শিশুসহ এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির। আর ইসরায়েলের এই বর্বরতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইসরায়েল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

ইসরায়েলের এই গণহত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছে সারা দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষ। বিশ্বব্যাপী দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বাংলাদেশেও। গত সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশেই ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে। নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে।
শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলি পণ্য বর্জনেরও ডাক দেওয়া হয়।

ইসরায়েল গাজায় শুধু হামলাই করছে না, মানবিক সহায়তা কর্মসূচিও বন্ধ করে রেখেছে।

ঠিকমতো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে গাজায় রীতিমতো মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দখলদার বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত মাসে একতরফাভাবে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে চলমান সামরিক হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। স্পষ্টতই ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আবেদনের তোয়াক্কা করেনি, বরং ক্রমবর্ধমানভাবে তীব্র হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব সামরিক অভিযান বন্ধ, সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তার দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনি জনগণের সব ন্যায্য অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুসারে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে।

শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা দুনিয়ায়ই ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। বিক্ষোভ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, এমনকি খোদ ইসরায়েলেও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকেও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশে যে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে, তা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও সময়োপযোগী। কিন্তু এই সুযোগে কিছু কিছু মানুষ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কেএফসি, বাটার শোরুমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ভবিষ্যতেও যেসব কর্মসূচি পালিত হবে, সব কর্মসূচিই হতে হবে শান্তিপূর্ণভাবে।

আমরা চাই ইসরায়েল অবিলম্বে গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা বন্ধ করবে। মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ফোরাম ও দেশসবাইকে ইসরায়েলের বর্বর হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ