পোশাক শিল্পাঞ্চলে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে অস্থিরতা চলছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এই অস্থিরতার কারণে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৬৭টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কারখানা এলাকায় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ পোশাক কারখানাগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। অস্থিতিশীলতা দমনে পুরো শক্তি নিয়োগ করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে অস্থিরতা
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ সভা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, পরিচালক শোভন ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে সংগঠনের আটজন সাবেক সভাপতিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংকট উত্তরণে করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, উদ্ভট সব দাবির আড়ালে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে একটি বিশেষ শ্রেণি পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
তিনি বলেন, বহিরাগতদের হামলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশের গোয়েন্দারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেছেন।
এদিকে সাবেক নেতাদের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিজিএমইএ নেতারা শিল্পাঞ্চলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করলেও প্রকৃত কারণ সাধারণ সদস্যদের জানানো হচ্ছে না। এতে পেছন থেকে সদ্য নিষ্ক্রিয় একটি বড় রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের ইন্ধন থাকলেও আমলে আনা হচ্ছে না।
উৎসব ছুটি ১২ দিন, চাকরির ছয় মাস হলেই উৎসব ভাতা প্রদান, হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা, টিফিন বিল-নাইট বিল প্রদান, প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট দেওয়া, নারী শ্রমিক বেশি নিয়োগ না দেওয়া—এ রকম প্রায় দুই ডজন দাবি তুলেছেন পোশাক শ্রমিকরা।
কারা বিক্ষোভ করছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘কারখানার অভ্যন্তরীণ সমস্যা খুব কম। বহিরাগত কারা বিক্ষোভ করছে, চিহ্নিত করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি।’
বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, বিক্ষোভ শুধু তৈরি পোশাক নয়, অন্যান্য শিল্পেও ছড়িয়ে পড়েছে। শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্প পুলিশ মূল ভূমিকা রেখে থাকে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় তারা বিপর্যস্ত। এই সুযোগে সবাই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিসকক্ষে কয়েকজন উপদেষ্টার বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে বিশৃঙ্খলকারীদের গ্রেপ্তার বা আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টারা বলেন, এই অসন্তোষের কোনো গতি-প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। ভাঙচুরের পেছনে ‘ভাড়াটে’ ও ‘টোকাইরাও’ দায়ী। ৫০ জন রাস্তায় বসে পড়লে পাঁচ লাখ মানুষের অসুবিধা হবে। কাজেই তাদের সরাতে যদি বল প্রয়োগ করতে হয়, লাঠিপেটা করতে হয়, জলকামান ব্যবহার করতে হলে সরকার সেটা করবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীপুর জানান, শান্ত হয়নি গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল। বরং নতুন নতুন কারখানায় ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। গতকালও চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। এতে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা, চৌধুরীবাড়ি, ভোগড়া বাইপাস, ছয়দানা হারিকেন, কাশিমপুর ও টঙ্গীতে বেশ কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করে। সাইনবোর্ড, জিরানি বাজার, কোনাবাড়ী, বাসন, বাঘের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গতকাল গাজীপুরে ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে জানান গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ।
শ্রীপুরে সিরামিক কারখানায় বিক্ষোভ
গাজীপুর আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, শ্রীপুরে ১১ দফা দাবিতে একটি সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দফায় দফায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সকাল ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ও শিল্প পুলিশ সেখানে পৌঁছে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহার কথা বললে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা। উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিক বিডি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এ আন্দোলন করেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কারখানার কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতের নাগরিক রয়েছেন। তাঁদের অপসারণ করতে হবে। এ ছাড়া বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মজুরি ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধিসহ (ইনক্রিমেন্ট) তাঁদের ১১ দফা দাবি রয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানায় কর্মকর্তা যে কজন ভারতের নাগরিক, তাঁরা তাঁদের মূল্যায়ন করেন না। তাঁদের কাছে তাঁরা (শ্রমিক) ভালো আচরণও পান না। শুধু তাই নয়, ওই কর্মকর্তারা আসার পর থেকে তাঁরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
কারখানাটির শ্রমিক আরিফুল ইসলাম জানান, তাঁদের অভিযোগগুলো গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সমাধানের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ১১ দফা দাবিতে গতকাল সকাল প্রায় ৭টা থেকে কর্মবিরতি দিয়ে তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নেমে পড়েন।
বাংলাদেশ বেকার সংগঠনের প্রচারপত্র
পোশাকশিল্প এলাকায় বাংলাদেশ বেকার সংগঠন নামের একটি সংগঠন বিভিন্ন দাবিসহ একটি প্রচারপত্র বিলি করে। এতে সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এই সংগঠন থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ জনকে চাকরি দিতে হবে; অদক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ দিতে হবে; শ্রমিকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে; নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অনুপাত ৫০ শতাংশ করে রাখতে হবে; প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে মজুরি প্রদান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা
খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই দশক আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে পৃথক আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এসব আবেদন গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ছিল বলে সাংবাদিকদের জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী ছিলেন তিনি।
গত বছর ১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বলা হয়, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ। তাই বিচারিক আদালতের ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো। এ রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ বিচারিক আদালত যাঁদের সাজা দিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
খালাসের এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘আপিল করা উচিত’ বলে সেদিন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের দাবি, এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

সংস্কারে এখনো লিখিত মতামত দেয়নি বিএনপিসহ বড় দলগুলো
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু আজ
নিখিল ভদ্র

সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। লিখিত মতামত পাওয়ার পর অন্য দলগুলোকে সংলাপে ডাকবে কমিশন। তবে এখনো বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে লিখিত মতামত জমা দেয়নি বলে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার কালের কণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংসদ ভবনের এলডি হলে এই সংলাপে প্রথম দিনে অংশ নেবে এলডিপি। আগামী শনিবার দুটি এবং রবিবার একটি দল সংলাপে অংশ নেবে। পর্যায়ক্রমে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংস্কার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আমাদের পার্টি ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে মতামত দেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে কমিশনকে জানিয়েছি।’ জোটগতভাবে সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো সুপারিশগুলোর বিষয়ে লিখিতভাবে মতামত জানানো হবে।’
সূত্র মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। তারা সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশগুলো ছক আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ওই ছকগুলো গত ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১২টি দল নিবন্ধিত নয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯। কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোকে তাদের মতামত জানানোর জন্য বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে সাতটি দল মতামত দিলেও পরবর্তী সময়ে আরো আটটি দল মতামত জমা দিয়েছে। অন্যরা অতিরিক্ত সময় নিয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। এ পর্যন্ত মতামত জমা দেওয়া ১৫টি দল হলো এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, জাতীয় গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাসদ।
মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।

অর্থ উপেদষ্টা
দেশীয় শিল্প সুরক্ষার বাজেট দেওয়া হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আগামী বাজেটে ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকার করার প্রস্তাব দিয়েছেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশনের শীর্ষ নির্বাহীরা। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট বক্তব্যের কলেবর কমানো, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং নির্ভুল ডাটা-পরিসংখ্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাজেট দিয়ে যেতে চাই যেটি পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার যে-ই আসুক, যেন ছুড়ে ফেলে দিতে না পারে, আমরা সেভাবেই একটি বাজেট দিতে চাই। আগামী বাজেটে আমরা প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছি না, বরং আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছি। আমরা দেশীয় শিল্প সুরক্ষার একটি বাজেট দিতে চাই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনমুুখিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, ‘সামনেই তো নির্বাচন। আর জুনে নতুন বাজেট। ফলে আপনারা যে বাজেট দিতে যাচ্ছেন সেটা পরবর্তী সরকারের জন্য কতটা সহায়ক হবে?’ যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার বলেন, ‘বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে আপনি সফল হয়েছেন। এ জন্য ধন্যবাদ আপনি পেতেই পারেন। আগামী বাজেট সত্যিই আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ।
সিনিয়র সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘একটি অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয় সে হিসাবটা কখনো আমরা পাইনি। এবার আপনারা সে হিসাব দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। ১৫ বছরে গণমানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। আপনারা একটা মেকানিজম করে এই হিসাবটা বের করুন যে এক অর্থবছরে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয়। সবখানে সংস্কার হচ্ছে, আপনারা বাজেট বত্তৃদ্ধতার আকারে সংস্কার আনুন। ঢাউস আকৃতির বাজেট বত্তৃদ্ধতার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কমিয়ে আনুন। বাস্তবমুখী বাজেট দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে বাজেট দেওয়া হতো সেটা ছিল অহেতুক। বাজেট উপস্থাপনের নামে দেখানো হতো এক রকমের প্রামাণ্যচিত্র।’
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসোসিয়েট এডিটর শামীম জাহেদী বলেন, ‘কালো টাকা বৈধ করার ক্ষেত্রে কর সমান হবে কি না সেটায় আপনারা নজর দেবেন। দেশে এতগুলো টেলিভিশন আছে, দেড় হাজার কেবল অপারেটর আছে, সারা দেশে সাড়ে তিন কোটি বাড়ি আছে। এর ৫৪ শতাংশ বাড়িতে টেলিভিশন দেখা যায়। প্রত্যেকে ৩০০/৫০০ টাকা দিয়ে সংযোগ নেন। এখানকার টাকাটা আমরা এক টাকাও পাই না। সরকার পায় কি না আমি জানি না। এখানে একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে আমরা কিছু টাকা পাব। সরকারও রাজস্ব পাবে।’
সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহনেওয়াজ করিম বলেন, সবার জন্য সুখবর ও স্বস্তিদায়ক বাজেট দিন। করদাতাদের জন্য ট্যাক্স কার্ড প্রবর্তন করা যায় কি না ভেবে দেখুন। এটা করতে পারলে তাঁরা সম্মানিত বোধ করবেন।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ করা হোক। বেকারত্ব কমনোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এ জন্য এসএমই উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন। নয়তো বন্ধ করে দিন। এটা মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত। টেলিভিশনে কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। একটি ওয়েজ বোর্ড এখানেও থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় চ্যানেলগুলো এখানে দেদার চলছে, আমাদের কোনো চ্যানেল ভারতে চলে না। এখানেও কাজ করা প্রয়োজন।’
এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ মনিউর রহমান বলেন, করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ করা হোক। বাজেট বাস্তবায়ন কতটুকু হলো সেটা দেখা দরকার।

নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক, আমরা তা প্রত্যাশা করি না
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। প্রথমত, দলের ভেতরে যারা অন্যায়ের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গত ১৭ মার্চ দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরো বলেছেন, নতুন দলের চ্যালেঞ্জ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ নিয়ে।
আন্দোলন থেকে সরকারে, তারপর আবার রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট’কে নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সরকারকে বাইরে থেকে দেখা আর ভেতর থেকে দেখা সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময় ছিল। এটি আমার জন্যও চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সময়ের দাবিতেই পদত্যাগ করে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরেছি।
নিজের দল এনসিপি সম্পর্কে নাহিদ বলেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হলো নতুন কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে তরুণ এবং সব সামাজিক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরি করা, যারা বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আমাদের এজেন্ডাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। কিছু দাবিতে মিল থাকতে পারে, যেমন আমরা সাংবিধানিক সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনের পক্ষে। কিন্তু আমাদের আদর্শিক অবস্থান ভিন্ন এবং উগ্রবাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম।
সূত্র : বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট