রমজান দোয়ার মাস

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
রমজান দোয়ার মাস

মহান আল্লাহর কাছ থেকে আসমানি সাহায্য লাভ এবং জীবনের দুঃখ-দুর্দশাগুলো থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যম হলো দোয়া। হাদিসে একে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের রব (আল্লাহ) বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।

যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ, তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো জিনিস নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৯)

এ জন্য পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি মুমিনের উচিত মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষ করে ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করা উচিত।

অধিক দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সামনে বান্দার গোলামি পূর্ণতা পায়। বান্দা মহান আল্লাহর সামনে নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতা, ক্ষুদ্রতা নিবেদন করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মহান অধিপতির কাছে ফকিরের বেশে সাহায্য প্রার্থনা করে, যা মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তাইতো আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, বান্দা যখন দোয়ার মাধ্যমে তার মালিকের কাছে চায়, আল্লাহ তার অতি সন্নিকটে থাকেন এবং তার দোয়া কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (হে নবী) আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি তাদেরকে বলুন যে) আমি এত নিকটবর্তী যে কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি।
সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৬)

মূলত এই আয়াতটি রমজান বিষয়ক আয়াতগুলোর মাঝখানে এসেছে। ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) দোয়ার প্রতি উৎসাহ দান সংক্রান্ত এই মধ্যবর্তী বাক্যটির তাৎপর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই আয়াতের দ্বারা রোজা রাখার পর দোয়া কবুল হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সে জন্যই রোজার ইফতারের সময় দোয়ার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং ৩. মজলুমের দোয়া।

মজলুম ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এ জন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়।

আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইফতারের সময় রোজাদারের অবশ্যই একটি দোয়া আছে, যা প্রত্যাখ্যান করা হয় না (অবশ্যই কবুল করা হয়)।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫৩)

এমনিভাবে সাহরির সময়ও দোয়ার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা উচিত। কেননা পবিত্র কোরআনে সে সময়ের দোয়ার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব এসেছে এবং মুত্তাকিদের পরিচয় দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলা হয়েছে, যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল ও ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে। আমি তাকে দেব। কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)

তাই প্রতিটি রোজাদারের উচিত পবিত্র রমজানের দোয়ার প্রতি খুব যত্নশীল হওয়া; বিশেষ করে সাহরি ও ইফতারের সময় মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করা, আল্লাহর রহমত কামনা করা, বিশুদ্ধ ইবাদতের তাওফিক প্রার্থনা করা এবং যাবতীয় কল্যাণ কামনা করা।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২১
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘যখন তোমরা মুখে মুখে তা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে, যার কোনো জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা তাকে তুচ্ছ গণ্য করেছিলে, যদিও আল্লাহর কাছে তা ছিল গুরুতর বিষয়। আর তোমরা যখন তা শ্রবণ করলে তখন কেন বললে না, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ পবিত্র, মহান...।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৫-১৮)

আয়াতগুলোতে অপপ্রচারের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১.  শোনা কথা যাচাই-বাছাই না করে প্রচার করা নিন্দনীয় এবং তা মিথ্যা বলার নামান্তর।

২.  মানুষের সম্মান ও সম্ভ্রম আল্লাহর কাছে গুরুতর বিষয়। তাই মানুষের সম্মান নষ্ট হয় এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে মুমিন। (তাফসিরে তাবারি : ৫/৪০৮)

৩.  মানুষের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা এবং মানুষ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করার আগে মুমিন ভাববে এমনটি আমার ব্যাপারে করা হলে কেমন লাগত!

৪.  আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মুমিন বহু সময় এমন মন্দ কথা বলে যা সে অন্তরে ধারণ করে না।

শুধু স্রোতের সঙ্গে তাল মেলাতে তা বলে থাকে।

৫.  একই ভুল ও অপরাধের পুনরাবৃত্তি করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। তারা ভুল হলে তাওবা করে এবং নিজেকে শুধরে নেয়। (আল-কোরআন তাদাব্বুর ওয়া আমল : ১৯/১০)

মন্তব্য
পর্ব : ১৪

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা মারিয়াম

সুরা মারিয়াম হিজরতের আগে অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা শুরু হয়েছে জাকারিয়া (আ.)-এর বৃদ্ধ বয়সে সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনার মাধ্যমে। তাঁর সন্তানের নাম ইয়াহইয়া। এরপর আনা হয়েছে মারিয়াম (আ.)-এর ঘটনা।

তাঁর গর্ভে অলৌকিকভাবে ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছেন। এতে ঈসা (আ.)-এর জন্ম, জন্ম-পরবর্তী ঘটনা এবং খ্রিস্টানদের বিভিন্ন ভ্রান্ত বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়েছে। এ সুরায় ইবরাহিম (আ.) এবং মূর্তিপূজা নিয়ে পিতা, পরিবার ও সমাজের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি ইসমাঈল (আ.) ও ইদরিস (আ.) সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাঁরা উভয়ে আল্লাহর সত্য নবী ছিলেন। তাঁরা মানুষকে একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং শিরক মূলোত্পাটন করেছেন। আয়াতে কোরআন বিষয়ে সমাজপতিদের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অহংকারী কথাবার্তা খণ্ডন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঈমানদারদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা বলা হয়েছে এবং কোরআন নাজিলের বিশেষ উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।
এভাবেই সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১.  চুপি চুপি ও নীরবে দোয়া করা মুস্তাহাব। (আয়াত : ৩)

২.  অনুচ্চ জিকিরই সর্বোত্তম এবং যথেষ্ট হয়ে যায় এমন জীবিকাই শ্রেষ্ঠ। (আয়াত : ৩)

৩.  মুমিনের দোয়ায় তিনটি বিষয় উপস্থিত থাকা  উত্তম : ক. নিজের অক্ষমতা প্রকাশ, খ. আল্লাহর প্রতি সুধারণা ও আশাবাদ, গ. প্রার্থিত বিষয়ে দ্বিনি কল্যাণ। (আয়াত : ৪-৫)

৪.  মুমিন সন্তান কামনার সময়ও পরকালীন কল্যাণকে সামনে রাখবে।

(আয়াত : ৬)

৫.  চরিত্রবান নারীর কাছে সম্ভ্রমের মূল্য জীবনের চেয়েও বেশি। (আয়াত : ২৩)

৬.  সন্তানের ওপর পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে।

  (আয়াত : ২৮)

৭.  নবজাতক ঈসা (আ.)-এর কথোপকথন ছিল তাঁর জন্য মুজিজা এবং তাঁর মায়ের পবিত্রতার প্রমাণ। (আয়াত : ২৯)

৮.  আল্লাহ কোনো পাপের সন্তানকে নবী করেননি।

  (আয়াত : ৩০)

৯.  বাঁ হাতে আমলনামা পাওয়ার পর থেকে জাহান্নামিদের আক্ষেপ শুরু হবে। পরকালে মৃত্যু নেই ঘোষণার পর তাদের আক্ষেপ বেড়ে যাবে। (আয়াত : ৩৯)

১০. দ্বিনি বিষয়ে প্রয়োজনে সন্তান পিতাকে উপদেশ দিতে পারে, সতর্ক করতে পারে। যদি সন্তান ধর্মীয় জ্ঞানে অগ্রগামী হয়। (আয়াত : ৪২)

১১. গুরুজনকে উপদেশ দেওয়ার সময় কল্যাণকামিতা ও শিষ্টাচার রক্ষা করা আবশ্যক। (আয়াত : ৪৩)

১২. মুশরিক মা-বাবার জন্য পাপ মার্জনার দোয়া করা বৈধ নয়। তবে তাদের হিদায়াতের দোয়া করা যাবে। (আয়াত : ৪৭)

১৩. মুসলমানরা পরস্পরের ভেতর সালাম বিনিময় করবে এবং অমুসলিমদের অন্য কোনো শব্দে অভিনন্দন জানাবে।

  (আয়াত : ৪৭)

১৮. নবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাড়াবাড়ি করা যাবে না এবং তাঁদের অসম্মানও করা যাবে না। (আয়াত : ৫৮)

১৯. কোরআন তিলাওয়াতের সময় কান্না করা নবী-রাসুলদের সুন্নত।

২০. নামাজ দ্বিনের স্তম্ভ এবং সবচেয়ে উত্তম আমল। নামাজে অবহেলা করলে তার পুরো দ্বিনদারিতে অবহেলা চলে আসে। (আয়াত : ৫৯)

২১. অসার কথা দ্বারা এমন উদ্দেশ্য, যা আল্লাহর জিকির শূন্য। (আয়াত : ৬২)

২২. প্রত্যেকে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। মুমিন ঈমান ও আমলের মাত্রা অনুসারে দ্রুততার সঙ্গে তা অতিক্রম করবে।

  (আয়াত : ৭১)

২৩. পাপী মুমিনরা শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আয়াত : ৭২)

২৪. মেহমানের জন্য মেজবানের প্রতি সুধারণা পোষণ করা আবশ্যক। (আয়াত : ৮৫)

২৫. আল্লাহ কাউকে ভালোবাসলে আসমান-জমিনে তার ঘোষণা হয়। ফলে সৃষ্টিকুল তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। (আয়াত : ৯৬)

  গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

মন্তব্য

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আসাকির (রহ.)

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আসাকির (রহ.)

ইবনে আসাকির একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুহাদ্দিস। তাঁর নাম ছিল মূলত আলী। উপনাম আবুল কাছিম। তিনি ইবনে আসাকির নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন।

পিতা হাসান ইবনে হিবাতুল্লাহ। বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, মেধা, স্মৃতিশক্তিতে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু দামেস্কে। জন্মগ্রহণ করেন ৪৯৯ হিজরির মহররম মাসের শুরুতে।
ইন্তেকাল করেন ৫৭১ হিজরির রজব মাসে।

তাঁর পিতা হাসান ইবনে হিবাতুল্লাহ একজন ন্যায়পরায়ণ, নেককার, ইলম ও আলেম প্রিয়, দ্বিন-ধর্ম ও ফিকহি মাসায়েলের প্রতি অধিক যত্নশীল ব্যক্তি। এমন সৌভাগ্যবান পিতার পরশে ইবনে আসাকির বেড়ে ওঠেন দ্বিনি ইলমের প্রবল আগ্রহ নিয়ে। দামেস্ক ও তার বাইরে অনেক দেশ ও অঞ্চল ঘুরে বেড়ান ইলমে দ্বিনের তৃষ্ণাতুর হয়ে।

জগদ্বিখ্যাত শাইখ ও বিজ্ঞজন থেকে ইলম অর্জন করেন। আল্লামা জাহাবীর বর্ণনানুযায়ী তাঁর উস্তাদের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি।

প্রথমে তিনি দামেস্কের বড় বড় আলেমের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য বহিঃরাষ্ট্রে সফরের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে ৫২০ হিজরি সনে বাগদাদে যান।

তখন তাঁর বয়স ২১ বছর। সেখানকার বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ আলেমদের থেকে ইলমে হাদিসের উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তাঁর অসাধারণ মেধা ও প্রতিভা দেখে বাগদাদের লোকজন বিস্মিত হয়। তাঁর উস্তাদ আবুল ফাতাহ মুখতার ইবনে আব্দুল হামিদ বলেন, এর মতো ছাত্র আমার জীবনে দেখিনি।

এক বছর পর ৫২১ হিজরি সনে বাগদাদ থেকে হজের উদ্দেশে মক্কা যান। হজের পাশাপাশি মক্কা, মিনা ও মদিনায় যেখানেই বড় আলেমের সাক্ষাত্ পেয়েছেন, ইলমের পেয়ালা ভরে নিয়েছেন। আবার ফিরে যান বাগদাদে। পাঁচ বছর পর চলে যান সিরিয়ায়। দ্বিতীয়বার সফর করেন অনারব দেশগুলোতে। এমন কঠোর সাধনা ও ত্যাগের বিনিময়ে তিনি পরিণত হন কালজয়ী বরেণ্য ব্যক্তিতে। এরপর বসে থাকেননি। দ্বিন ও ইসলামের মহান স্বার্থে জীবনের সবটুকু অংশ ওয়াকফ করে দেন শিক্ষকতা ও গ্রন্থনার কাজে। মুসলিম-উম্মাহর আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যান ইলমের সুবিশাল ভাণ্ডার।

তাঁর অনেক রচনা রয়েছে। তন্মধ্যে তারিখে দিমাশক আল কাবির জগদ্বিখ্যাত আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ, যা তারিখে ইবনে আসাকির  নামে প্রসিদ্ধ। বৈরুতের দারুল ফিকর থেকে ৭৪ খণ্ডে তা ছাপা হয়। পরবর্তী সময়ে ইবনে মানযুর আল-আনসারি [জগদ্বিখ্যাত আরবি অভিধান লিসানুল আরব এর লেখক (মৃত-৭১১ হি.)] তা সংক্ষিপ্ত করে লিখেন মুখতাসারু তারিখে দিমাশক, এটি দামেস্কের দারুন নাশর থেকে ২৯ খণ্ডে ছাপা হয়। তাঁর রচিত আরো কয়েকটি গ্রন্থ হলো গারায়িব মালিক, আল-মুজাম, মানাকিবুশ শুব্বান, ফাজায়িল আসহাবুল হাদিস, ফাজলুল জুমুয়া, আস-সুবায়িয়্যাত, মান ওয়াফাকাত কুনইয়াতুহু কুনইয়াতা জাওজাতিহি, আওয়ালিল-আওযায়ী ওয়া হালুহু ইত্যাদি।

ইবনে আসাকির ইলমের ময়দানে এত বিশাল খেদমতের পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, নফল নামাজ, তিলাওয়াত ইত্যাদিতে ছিলেন অগ্রজ। শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতেন। রমজানের বাইরে প্রতি সপ্তাহে, আর রমজানে প্রতিদিন কোরআন শরিফ খতম করতেন। বিশেষ বিশেষ রাতগুলো ইবাদাত-বন্দেগিতে কাটাতেন।

ইলমে দ্বিনের এই মহান বিদ্বান ইবনে আসাকির (রহ.) ৫৭১ হিজরির ১১ রজব সোমবার রাতে ইহকাল ত্যাগ করে চলে যান মহান প্রভুর সান্নিধ্যে। সুলতান সালাহুদ্দীন (রহ.) তাঁর জানাজায় শরিক হন। দামেস্কের বাবুস সগীর গোরস্তানে তাঁর পিতার পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১৫/২৪৭-২৪৮, ২৪৯, ২৫০পৃ., ক্র.৫১৫৫; তারিখে দিমাশক : ১/১১-১৬ পৃ.; আল-আলাম : ৪/২৭৩ পৃ.)

 

মন্তব্য

যেসব আমলে রোজা পূর্ণতা পায়

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
যেসব আমলে রোজা পূর্ণতা পায়

রহমত, মাগফিরাত ও নামাজের মাস পবিত্র মাহে রমজান। প্রত্যেক মুমিনের উচিত এ মাসের ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া। রোজার মহিমা ক্ষুণ্নকারী সব ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা। সর্বদা আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।

রোজাকে পরিপূর্ণ অর্থবহ করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করা।

নিম্নে রোজাকে পরিপূর্ণ ও অর্থবহ করে তোলার কিছু আমল তুলে ধরা হলো

সাহরি খাওয়া : পবিত্র রমজানে সাহরি খাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এতে মহান আল্লাহ অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। (বুখারি, হা: ১৯২৩)

তা ছাড়া সাহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে দিনের বেলা রোজা রাখা আরেকটু সহজ হয়।

তাই নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে দিনের রোজা এবং দিনে বিশ্রামের মাধ্যমে রাতের নামাজের জন্য সাহায্য নাও।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৯৩)

সূর্যাস্ত নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ইফতার করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, লোকেরা যত দিন ইফতার দ্রুত করবে তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭)

অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত

করা : জিবরাইল (আ.) প্রতি রাতে নবী (সা.)-এর সঙ্গে কোরআন চর্চা করতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ...রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।

(বুখারি, হাদিস : ৬)

তাই আমাদেরও কোরআন অধ্যয়ন ও আমলে মনোযোগী হওয়া উচিত।

রাত জেগে ইবাদত করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩৭)

মিথ্যা ও গিবত থেকে বিরত থাকা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)

রাগান্বিত না হওয়া : রোজা মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখানোর জন্য। তাই রোজা অবস্থায় রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

কেউ অপ্রীতিকর আচরণ করলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, সিয়াম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি সাওম পালন করছি।

(বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)

তাকওয়া অর্জন করা : কারণ রোজার মূল উদ্দেশ্যই হলো, তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ বলেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

রমজানের শিক্ষা সারা বছর ধরে

রাখা : রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংযম অনুশীলন করা নয়, বরং তাকওয়া ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গুণ অর্জন করা, যা সারা বছর কাজে লাগানো।

সব ধরনের কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখা : জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, যখন তুমি রোজা রাখবে, তখন তোমার কান, চোখ ও জিহ্বাসব কিছু যেন মিথ্যা ও গুনাহ থেকে রোজা রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাঈবা : ৪/৮)

হালাল রিজিক আহার করা : হারাম থেকে বিরত থাকা সব সময়ই জরুরি, তবে রমজানে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রোজা রেখে হারাম উপার্জনের খাবারে ইফতার করা অর্থহীন।

দান-সদকা করা : রাসুল (সা.) সর্বদা দানশীল ছিলেন, তবে রমজানে তিনি আরো বেশি উদারতা দেখাতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬)

ইফতারের সময় দোয়া করো : কারণ মহান আল্লাহ রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেন না।

মহান আল্লাহ উল্লিখিত আমলগুলোর মাধ্যমে আমাদের রোজাকে আরো প্রাণবন্ত ও অর্থবহ করে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ