<p><span style="color:#e74c3c">এটি ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু। দেশের সিলেট, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় এই ঘুঘু বেশি দেখা যায়। শহর এলাকা এরা সাধারণত এড়িয়ে চলে; এমনকি শহরের পার্কেও চোখে পড়ে না। ঢাকা শহরের কাছে ইকুরিয়া এলাকার গ্রামে কয়েকবার পাখি দেখতে গেলে এই ঘুঘুর দেখা মেলে। সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়</span></p> <p> </p> <p>২০০৯ সালের মার্চ। শীত প্রায় শেষ। তখনো ঘাসে শিশির জমে, কুয়াশা পড়ে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর তীরে জামখোলা হাওরের মেঠো পথে হাঁটছি। হাওরের মাঠগুলো শুকিয়ে চৌচির। ঢোলকলমির ঝোপে একটি বুনো কোকিল বসে আছে। মাঠের কাছে করচগাছের তলায় একটি মোহনচূড়া পাখি খাবার খুঁজছে। শুকনো মৌসুমে হাওর শুধুই হাঁটা পথ। রোদ উঠলে হাওরে হাঁটতে ক্লান্ত লাগে। নানা প্রজাতির পাখি দেখছি এবং খাতায় নোট করছি। একটি বিশাল ডানার ইগল উড়ে গেল। সুরমা নদীর তীরের একটি বয়সী ছাতিমগাছের ডালে গিয়ে বসল। পাখিটি হাওরে হাওয়াল বা কোড়া নামে পরিচিত।</p> <p>সেদিন ছাতিমতলায় গিয়ে বেতসহ বুনো একটি ছোট ঝোপ নজরে এলো। কাছে যেতেই একটি পাখি ডানায় শিস বাজিয়ে উড়ে গেল। বোঝা গেল, এটা ঘুঘু। এই পাখি যখন ওড়ে, তখন খুব কাছে থাকলে তাদের ডানার এই শব্দ শোনা যায়। ঝোপের একটু ভেতরে চোখ দিতিই দেখলাম, কিছু খড়-কাঠিসমেত ছোট্ট একটি বাসা। বাসায় চকচকে-ধবধবে সাদা দুটি ডিম। বাসাটি ভূমি থেকে আড়াই মিটার ওপরে হবে। বাসাটি দেখার পর ঝোপের কাছ থেকে দূরে চলে গেলাম। কয়েক মিনিট পর পাখিটি ফিরে এসে ডিমে তা দিতে শুরু করল।</p> <p>এটি ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু। দেশের সিলেট, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় এই ঘুঘু বেশি দেখা যায়। শহর এলাকা এরা সাধারণত এড়িয়ে চলে; এমনকি শহরের পার্কেও চোখে পড়ে না। ঢাকা শহরের কাছে ইকুরিয়া এলাকার গ্রামে কয়েকবার পাখি দেখতে গেলে এই ঘুঘুর দেখা মেলে। তবে সবচেয়ে বেশি দেখেছি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। সুনামগঞ্জের অনেক হাওরে কণ্ঠীঘুঘু দেখেছি। হাওর এলাকায় ঘুঘু পাখির নাম ঢুপি। এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia decaocta। এরা মূলত প্যারাবন, হাওর, গ্রামের প্রান্তরে ও আবাদি জমিতে জোড়ায় এবং ছোট দলে চরে বেড়ায়। কদাচিৎ পোষা কবুতর এবং অন্য প্রজাতির ঘুঘুর দলে যোগ দেয়।</p> <p>কর্ষিত জমি, বনের প্রান্তর, গ্রামীণ মেঠো পথে এরা হেঁটে হেঁটে খাবার খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ ও শস্যদানা। উত্তরবঙ্গে কণ্ঠীঘুঘুদের ব্যাপকভাবে শিকার করা হয়। নানা সময় এই পাখি ধরার ফাঁদ পাখিপ্রেমীদের চোখে পড়েছে। নরওয়ে, জার্মানি ও পোল্যান্ডেও কণ্ঠীঘুঘু দেখেছি। আমার বাসার কাছের বাগানে এক জোড়া কণ্ঠীঘুঘু নিয়মিত বাস করে। জার্মানিতে এদের প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯৪৫ সালে। হাঙ্গেরীয় প্রকৃতিবিদ ইমরে ফ্রিভাল্ডজস্কি ১৮৩৮ সালে প্রথম এই ঘুঘুটির বর্ণনা করেন। ১৮৩৮ সালে এটির ব্যাপারে বুলগেরিয়ায় রিপোর্ট করা হয়েছিল। বিশ শতকের আগ পর্যন্ত এটি ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত হয়নি। ১৯০০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে বলকানের কিছু অংশে প্রদর্শিত হয়েছিল এবং তারপর দ্রুত উত্তর-পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে নরওয়ের আর্কটিক সার্কেলের উত্তর-পূর্ব থেকে উত্তরে এবং পূর্বে রাশিয়ার উরাল পর্বতমালা পর্যন্ত এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ এবং উত্তর আফ্রিকায় পৌঁছে।</p> <p> </p> <p>লেখক : নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান এরোস্পেস সেন্টার</p> <p> </p>