<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশ এক অস্থির সময় পার করছে। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন নতুন প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা<strong> রুহিন হোসেন প্রিন্স।</strong> সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক <strong>নিখিল ভদ্র</strong></span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় দায়িত্ব বিগত স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে নিষ্পেষিত মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়া। কিন্তু আগের ভয়ের রাজত্ব এখনো ধ্বংস করা যায়নি। চাঁদাবাজি, দখলদারি ও দুর্নীতির পালাবদল হয়েছে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। এরপর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জাতিগত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ দরিদ্র মানুষ নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি।</p> <p>তবে এই সরকার বিগত সরকারের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিষয়টি শ্বেতপত্র কমিটির মাধ্যমে জনগণের সামনে এনেছে। এই সময়ে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি অব্যাহত থাকলেও বিদেশে টাকা পাচার ও অন্যান্য অপরাধের খবর পাওয়া যায়নি। ব্যাংক সেক্টর ঘুরে না দাঁড়ালেও নতুন কোনো সংকটের খবর নেই। সরকার ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এবং সব কালাকানুন বাতিল করবে, যা ইতিবাচক দিক বলে মনে করি।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : মব সন্ত্রাস বন্ধসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : এবার কোনো দল বা গোষ্ঠী বিজয়ী হয়নি, জনগণ বিজয়ী হয়েছে। একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথম দিকে কতগুলো ঘটনা ঘটতে পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যেভাবেই হোক সেটা নিয়ন্ত্রণের কথা আমরা বলেছি। বিশেষ করে মবটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : আগস্ট-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সরকারের ভূমিকা কিভাবে দেখছেন?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা এই প্রথম নয়, অতীতেও ঘটেছে। সরকারের কেউ কেউ বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সরকার কিন্তু পদক্ষেপ নিয়েছে। সুনামগঞ্জ ও স্বরূপকাঠিতে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনার পর আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করি। উপদেষ্টা ওই ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছেন, আসামিরাও গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে এবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে যে ভয় ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, সেটা অতীতে কখনো হয়নি।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট কি না?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : আমরা কমিউনিস্টরা মনে করি, প্রচলিত বাজারব্যবস্থা বহাল রেখে এই সংকট দূর করা সম্ভব নয়। এ জন্য পুরো বাজারব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সরকার সেটা না করে পুরনো ধারা অব্যাহত রেখে সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। ফলে তারা টোটালি ফেল করছে। উৎপাদন ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি চাঁদাবাজি ভেঙে দিয়ে উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় করে কৃষকের পণ্য চাঁদাবিহীনভাবে বাজারজাত করা, দুর্নীতিমুক্ত থেকে সরকারিভাবে পণ্য মজুদ এবং রেশনব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু করতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : রাজপথ এখনো উত্তপ্ত। শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলন কেন থামছে না?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের কারণে অতীতে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেনি। তাই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন যত দ্রুত সম্ভব দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। কিন্তু শুরুতে দেখলাম, এ ক্ষেত্রে সরকার কিছু ‘নৈরাজ্য’কে প্রশ্রয় দিল। ছাত্ররা সচিবালয়ে ঢুকে গেল, সেখানে একটা অন্যায্য দাবি করল এবং সরকার সেটা মেনে নিল। এ কারণে অন্যরা উৎসাহিত হয়ে ন্যায্য দাবি আদায়ে চাপ সৃষ্টি শুরু করছে। এ ক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের অভিযোগ কতটা সঠিক?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : আমরা বলেছিলাম, দুঃশাসনের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা বদলের মাধ্যমে ইতিবাচক অগ্রসর হতে চাইলে নীতিনিষ্ঠ বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে সামনে আনতে হবে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের আগে আগে দেখলাম, কিছু কিছু জায়গায় দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তি সামনে চলে এলো। যারা অনেক পেছনে ছিল, এমনকি নিষিদ্ধ ছিল এবং এখনো নিষিদ্ধ আছে, তারা সামনে চলে এসেছে। শাসকগোষ্ঠী ও মিডিয়ার কারণে তারা একধরনের সুযোগ পাচ্ছে। এখন প্রগতিশীল শক্তিকে সামনে এসেই ওই সব সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ :  দেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে যাচ্ছে—এই অভিযোগ কতটা সঠিক?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি সরাসরি একমত নই। তবে এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেক ক্ষেত্রে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ দাবিদার কোনো কোনো গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বিজয় দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধান সম্পর্কে এমন এমন প্রশ্ন উত্থাপন করছে, যা জনমনে এমন প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। সরকারের আগামী পদক্ষেপে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ :  সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কি না?</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়মিত কথা না হলেও তাদের বক্তব্যে অনেক কিছুই বোঝা যায়। সংস্কার, নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয়ে দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। কাজের মধ্য দিয়ে কাছাকাছি আসার কথা ছিল, সেটা হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করলে অনেক সংকট এড়ানো যেত।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ</p> <p>রুহিন হোসেন প্রিন্স : আপনাকেও ধন্যবাদ।</p> <p> </p>