পিডিবির মূল্যবান কেবল লোপাটের অভিযোগ

১১ কোটি টাকার বিদ্যুতের কেবল কাগজে আছে গুদামে নেই

নাসরুল আনোয়ার, হাওরাঞ্চল
নাসরুল আনোয়ার, হাওরাঞ্চল
শেয়ার
১১ কোটি টাকার বিদ্যুতের কেবল কাগজে আছে গুদামে নেই

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর পুরনো রেল সেতুর উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের প্রায় ৯ হাজার ২০০ মিটার পাওয়ার কেবলের হদিস মিলছে না। এই বিপুল পরিমাণ মূল্যবান কেবল লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রতি মিটার কেবলের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১২ হাজার টাকা হিসাবে হদিস না মেলা কেবলের দাম দাঁড়ায় ১১ কোটি চার লাখ টাকা।

পিডিবি সূত্র জানায়, কাগজে-কলমে ১৩ হাজার ২০০ মিটার কেবল অফিসে জমা দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে জমা করা হয় প্রায় চার হাজার মিটার।

জমা দেওয়া কেবলের মধ্যে ৬৭০ মিটার দাপ্তরিক কাজে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়। বাকি প্রায় ৯ হাজার ২০০ মিটার কেবলের হদিস নেই। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২০২৩ সালের কোটি কোটি টাকার কেবল লোপাটের এই ঘটনার বিষয়ে পিডিবির কিশোরগঞ্জ জেলার সব ইউনিট এবং ময়মনসিংহের আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানতেন।

তবে এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পিডিবি কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

একই সেতুতে বারবার কেবল বদল : সূত্র জানায়, ২০২১ সালে পিডিবির (বিক্রয় ও বিতরণ) ভৈরব অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ রেলওয়ে সেতুতে ৩০০ আরএম ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার কেবল বসানোর উদ্যোগ নেন। এর আগে একই সার্কিটে ছিল ১৮৫ আরএম পাওয়ার কেবল। কর্তৃপক্ষ ৩০০ আরএম কেবল জরাজীর্ণক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুটি ৪০০ আরএম এবং একটি ৫০০ আরএমের কেবল সার্কিট স্থাপন করে।

বছর পার না হতে নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ আগে বসানো ৩০০ আরএম ক্ষমতার তামার পাওয়ার কেবল কার্যত জরাজীর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে প্রতিবেদন দেন। কোটি কোটি টাকার কেবল লোপাটের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যেই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের চক্রটি নতুন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।   

নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সুষ্ঠু তদন্তে এসব দুর্নীতির প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।  

কাগজে আছে গুদামে নেই : সূত্র মতে, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল পিডিবি কর্তৃপক্ষ নতুন কেবল স্থাপনের টেন্ডার (নং : ৪৫৪) আহ্বান করে। এক কোটি ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৫ টাকায় কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাপলা এন্টারপ্রাইজের নামে।

এর মালিক টাঙ্গাইলের ধরেরবাড়ীর মো. নূরুল ইসলাম। তাঁর লাইসেন্সে কাজটি সম্পাদন করেন টাঙ্গাইলের মো. ইপিয়ার হোসেন।

পিডিবি গাজীপুরের টঙ্গী ও চট্টগ্রামের হালিশহরে কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার থেকে ১৩ হাজার ২০০ মিটার ৩৩ কেভি সিঙ্গল কোর পাওয়ার কেবল সরবরাহ করে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। কার্য সম্পাদনের প্রত্যয়নপত্রে জানা যায়, কাজটি শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরবের মেঘনা নদীর পারে সাত-আটটি খালি ড্রাম বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে আছে। এসব ড্রামে ৪০০ ও ৫০০ আরএম কেবল প্যাঁচানো ছিল। নতুন কেবল স্থাপনের পর এ রোলগুলোতে পেঁচিয়েই পুরনো কেবল স্টোরে জমা দেওয়ার কথা। বেশির ভাগ পুরনো কেবল স্টোরে (গুদাম) জমা না দেওয়ায় খালি ড্রামগুলো এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

স্টোরকিপারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য : কেবলের কাজ চলাকালে ভৈরব পিডিবির সাবেক সহকারী প্রকৌশলী ও স্টোর অফিসার ছিলেন ইমরান হোসেন তালুকদার। তাঁর সরাসরি তত্ত্বাবধানে কেবল স্টোরে জমা হওয়ার কথা। তিনি বলেন, কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না।

ভৈরব পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের তৎকালীন স্টোরকিপার (বর্তমানে বাজিতপুরে কর্মরত) মো. এরশাদ মিয়ার কাছে পুরনো কেবল জমা দেওয়ার তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু পাওয়ার কেবল স্টোরে জমা হয়েছে।

মো. এরশাদ মিয়া বলেন, এটা বড় কাজ। এতে সহকারী প্রকৌশলী আর নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত লাগে। স্টোরকিপারের কোনো ক্ষমতাই নেই। মালপত্র গ্রহণ ও পরিদর্শন ফরমে স্বাক্ষর থাকার প্রসঙ্গে তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তিনি ওই ফরমে স্বাক্ষর করেছেন। 

দায়িত্বরত কর্মকর্তারা যা বললেন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে কর্মরত পিডিবি ভৈরবের সে সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ বলেন, যে পরিমাণ পুরনো পাওয়ার কেবলই স্টোরে জমা দেখানো হোক না কেন, জমার কাগজ না পেলে তো ঠিকাদার বিল পেত না!

বিপুল পরিমাণ পাওয়ার কেবল লোপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, পুরনো পাওয়ার কেবল জমার বিল সংরক্ষিত আছে।

শাপলা এন্টারপ্রাইজের কার্য সম্পাদনকারী ঠিকাদার মো. ইপিয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। পরে পাওয়ার কেবল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, জমার কাগজপত্র না দেখে অনুমান করে কিছু বলা ঠিক হবে না।

সেতুর কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পর ভৈরবে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনকারী (বর্তমানে নেত্রকোনায় কর্মরত) মোহা. সালাহউদ্দীন জানান, পুরনো ১৩ হাজার ২০০ মিটার কেবলের মধ্যে চট্টগ্রাম অফিস নিয়েছে ৬৭০ মিটার। আরো প্রায় চার হাজার মিটার কেবল ভৈরব অফিসের স্টোরে জমা আছে। বাদবাকি কেবল স্টোরে নেই। তিনি জানান, ৬৭০ মিটারের কাগজপত্র অফিসে সংরক্ষিত আছে। চার হাজার মিটারের জমার কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

পিডিবির বিশ্বস্ত একটি সূত্রের ভাষ্য, ময়মনসিংহ অঞ্চল ২-এর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বর্তমানে মৌলভীবাজারে কর্মরত) মো. হাবিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই পুকুরচুরির ঘটনাটি সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চিড়িয়াখানায় ৮ লাখ দর্শক সমাগমের প্রত্যাশা

মোবারক আজাদ
মোবারক আজাদ
শেয়ার
চিড়িয়াখানায় ৮ লাখ দর্শক সমাগমের প্রত্যাশা

রাজধানীর মিরপুরে ১৮৬ একর জায়গা নিয়ে গঠিত জাতীয় চিড়িয়াখানা। ঈদের ছুটিতে এই বিনোদনকেন্দ্রে থাকে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। তাই এবারও চিড়িয়াখানায় ঈদের ছুটিতে ছয় দিনে (ঈদের দিন থেকে ৫ এপ্রিল) প্রায় আট লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই বিশালসংখ্যক দর্শনার্থীর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে গত সোমবার বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে চিড়িয়াখানাকে নতুন রূপে সাজানো হবে। বিশেষ করে নানা রঙে রাঙানো হবে চিড়িয়াখানার বেষ্টনী, দেয়াল ও বিভিন্ন গাছের গোড়া। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দর্শনার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া হবে ঈদের শুভেচ্ছাবার্তা।

পাশাপাশি কিছু খাঁচা ও শেডে নতুন করে বেষ্টনী দেওয়ার কাজ চলছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য চিড়িয়াখানার ভেতরে আরো ডাস্টবিন তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এবারের ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের আগমন এবং সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চার-পাঁচটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া গতবারের মতো সাজানোর জন্য গেট থেকে শুরু করে কিছু নতুন রঙিন পতাকা থাকবে, এগুলো দেখে যেন শিশুরা আনন্দ পায়।

এবারের ঈদে প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানা বরাবরের মতোই প্রস্তুত থাকবে। আমরা থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়েছি। তাদের সঙ্গে সোমবার নিরাপত্তা বিষয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ঈদের সময় দর্শনার্থীদের যেন কোনো জটলা তৈরি না হয়, সে জন্য নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে চিড়িয়াখানার পশুগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যা যা করা দরকার, আমরা সেগুলো এরই মধ্যে সম্পন্ন করছি।

ঈদে নতুন কোনো প্রাণী যুক্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কোনো প্রাণী যুক্ত হচ্ছে না। তবে প্রায় বছরখানেক হলো বাঘের দুটি এবং জিরাফের দুটি শাবকের বয়স প্রায় এক বছর, এগুলো ডিসপ্লে করছি, অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি এগুলো দেখতে পারবে দর্শনার্থীরা।

ঈদে দর্শনার্থীর সমাগম নিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে অনুমান করা যায়, ঈদের দিন প্রায় এক লাখ দর্শনার্থী আসে, এর পরের দুই দিন প্রায় দেড় লাখ করে, চতুর্থ দিন এক লাখের বেশিএভাবে শনিবার পর্যন্ত (৫ এপ্রিল) সব মিলিয়ে আট লাখের মতো দর্শনার্থী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিরূপ আবহাওয়া থাকলে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হতে পারে।

চিড়িয়াখানার পরিচালক আরো বলেন, ঈদে চিড়িয়াখানার ভেতরে হকারের কোনো উৎপাত থাকবে না। ভেতরে এবং গেটের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়মিত টহল থাকবে, যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তথ্যকেন্দ্র থেকে দর্শনার্থীরা সেবা পাবে। তথ্যকেন্দ্রে স্টাফ নিয়েজিত থাকবে, যেন দর্শনার্থীদের সমস্যা হলে তাঁরা তত্ক্ষণাৎ সেবা দিতে পারেন। সব সময়ের মতো এবারও ঘুরতে আসা বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা থাকবে। এই চেয়ার পাওয়া যাবে চিড়িয়াখানার তথ্যকেন্দ্রে।

 

 

 

মন্তব্য

ঈদযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্ন

শেয়ার
ঈদযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্ন
ঈদযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে, সে জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন সেনা সদস্যরা। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য
অর্থ উপদেষ্টা

ঈদের ছুটিতে স্থবিরতা আসবে না অর্থনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈদের ছুটিতে স্থবিরতা আসবে না অর্থনীতিতে

আসন্ন ঈদের ছুটিতে উপদেষ্টা পরিষদের বেশির ভাগ সদস্য ঢাকায় থাকবেন জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটি হলেও অর্থনীতিতে কোনো স্থবিরতা আসবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।

এবার ঈদে দীর্ঘ ছুটি, অর্থনীতিতে কোনো স্থবিরতা দেখা দেবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, না, না,

অর্থনীতিতে কোনো স্থবিরতা আসবে না। সব কিছু সচল থাকবে।

দরকার হলে বন্ধের মধ্যে মিটিং করব।’ ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম একটা প্রোগ্রাম করেছিলেন, ১০০ দিনের গ্যারান্টি কর্মসংস্থান। আপনারা এ ধরনের কোনো প্রকল্প নেবেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখি, আমরা এটা দেখব। তবে ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে ভালো হবে রেগুলার প্রকল্পের মাধ্যমে লোকাল বেইস কর্মসংস্থান।

বৈঠকের বিষয়ে তিনি জানান, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ১১টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

ভারতের ৫০ হাজার টন চাল আসছে : খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে সরকার। এতে ব্যয় হবে দুই কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৫৯ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৪২৪.৭৭ মার্কিন ডলার। 

সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্য থেকে দুই কার্গো এলএনজি : দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোটেশনের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো এবং যুক্তরাজ্য থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪.০৮ ডলার হিসাবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬৭৫ কোটি ২৮ লাখ ৫৮ হাজার ১১২ টাকা।

রাশিয়া-সৌদি আরবের ৪১৮ কোটি টাকার সার আসছে : রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়া ও সৌদি আরব থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানি করবে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৪১৮ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার জেএসসি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩০৬.৩৭ মার্কিন ডলার।  এদিকে মুন্সীগঞ্জে বিসিক কেমিকাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আগে কাজের পরামর্শক নিয়োগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে ভেরিয়েশন প্রস্তাবসহ তিন ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ। এই তিন প্রস্তাবে ব্যয় হবে ২২৯ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৩৪ টাকা।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে ধানমণ্ডিতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ছয়জন গ্রেপ্তার

    ডাকাতদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ আহত
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে ধানমণ্ডিতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ছয়জন গ্রেপ্তার

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গত বুধবার ভোরের দিকে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাসায় অভিযানের নামে ডাকাতি করতে যাওয়া দলটির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, ওই বাসায় ডাকাতির আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মতো প্রস্তুতি নিয়েছিল ডাকাতদল। অনেকে সে সময় র‌্যাবের পোশাক পরা ছিল। কেউ কেউ নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়।

কয়েকজন নিজেদের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয় দেয়। বোমা হাতে মিডিয়ার লোক পরিচয় দেওয়া ডাকাতও ছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো ফরহাদ বীন মোশারফ, ইয়াছিন হাসান, মোবাশ্বের আহাম্মেদ, ওয়াকিল মাহমুদ, আবদুল্লাহ ও সুমন।

ডাকাতদল গ্রেপ্তারে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ায় ছয় নিরাপত্তাকর্মীকে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কার দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের হাতে পুরস্কারের টাকা তুলে দেন তিনি। এ সময় ডিএমপি কমিশনার তাঁদের অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিষয়ে গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্রের সদস্য। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র‌্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোনসেট, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরনো লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, ডাকাতির সময় ওই বাসায় ২৫-৩০ জন ছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যে ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, সে ধরনের ফুল প্রিপারেশন ডাকাতদলের ছিল। তাদের সঙ্গে র‌্যাবের কটি ও জ্যাকেট পরা লোকজনও ছিল। সঙ্গে মাইক্রোফোন হাতে মিডিয়ার লোক পরিচয় দেওয়া লোকও ছিল, যারা সোর্স হিসেবে কাজ করে। তাদের মধ্যে পাঁচ-ছয়জন ছাত্রদের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়েছেন।

বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ধানমণ্ডি ৮ নম্বর সড়কের ওই বাসায় ডাকাতির বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ওই বাড়িটির মালিক এম এ হান্নান আজাদ স্বর্ণ ব্যবসায়ী। অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স নামে তাঁর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে।

উপকমিশনার বলেন, বাড়িটির নিচতলা, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস রয়েছে। এ ছাড়া ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।

তিনি বলেন, ডাকাতদলটি তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কারে ওই বাসার সামনে এসে গেটে নিরাপত্তাকর্মীদের বলে, তারা র‌্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে। এ জন্য তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। তখন ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগাল করতে থাকে এবং গেট না খুললে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে টপকে ভেতরে ঢুকে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই বাড়িতে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়িচালককে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

ব্যবসায়ীর বাসায় স্বর্ণ থাকতে পারে ধারণা থেকে ডাকাতদলটির টার্গেটে ওই বাসা থাকলেও তারা নিচতলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস থেকে তল্লাশির নামে লুটপাট করে।

এরপর ডাকাতরা নিরাপত্তারক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন।

ডাকাতরা তখন তাঁদেরও আটক করে মারধর করে অফিসের ও বাসার চাবি দিতে বলে। এরপর তারা চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে এবং অফিসের বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

সব শেষে বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ডাকাতদল ওই বাসা থেকে দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ লুট করে। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে।

উপকমিশনার মাসুদ বলেন, এসবের মধ্যে কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে খবর দিলে টহল পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের গ্রেপ্তার করে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ