<p>রংপুর অঞ্চলে সাধারণ মানুষের আবেগ আর ভোটের রাজনীতিতে একচ্ছত্র দখল ছিল জাতীয় পার্টির (জাপা)। তবে দলীয় কোন্দল-বিভক্তি, সাংগঠনিক দুর্বলতা, বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ নানা কারণে আস্থার সংকটে পড়েছে দলটি। এমনকি জেলা, উপজেলাসহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি তারা। তাদের জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমে রংপুর বিভাগের পরিবর্তে জেলাকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে।</p> <p>এই অবস্থায় রংপুর অঞ্চলে ভোটের মাঠ দখলে নিতে চায় জামায়াতে ইসলামী—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডে। সেই লক্ষ্যে তৃণমূলে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মাঠ বৈঠক, উঠান বৈঠকসহ ভোট প্রস্তুতির সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবেই এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি দলটির আমির শফিকুর রহমানের রংপুর অঞ্চলে সফরের পর সেখানে তৃণমূলের ভোটের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা চলছে।</p> <p>তথ্য বলছে, ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি ‘জাতীয় পার্টি’ গঠনের পর তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভোট বর্জন করলে জাপা ২৫১টি আসন নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে।</p> <p>১৯৯১ সালের নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে জাপা পায় ১৭টি। আর আওয়ামী লীগ ৯টি, সিপিবি তিনটি এবং বিএনপি, জামায়াত, বাকশাল ও ন্যাপ একটি করে আসন পায়। জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কারাগারে থেকেও পাঁচটি আসনে নির্বাচিত হন।</p> <p>১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রংপুর বিভাগে মোট আসন কমে ৩২টি হলেও জাপা পায় ২১টি। আওয়ামী লীগ আট, বিএনপি তিন ও জামায়াত একটি আসন পায়। ২০০১ সালের নির্বাাচনে ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট করেও ১৪টি আসন পায় জাপা। আর আওয়ামী লীগ ছয়টি, বিএনপি ৯টি ও জামায়াত চারটি আসন পায়।</p> <p>২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চারদলীয় ঐক্যজোটের বিপরীতে আওয়ামী লীগ-জাপার সমন্বয়ে গঠিত হয় মহাজোট। তবে সেবার জাপা রংপুর বিভাগে পায় ১২টি আসন। আর আওয়ামী লীগ পায় ২১টি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে রংপুর বিভাগে মাত্র সাতটি আসন পায় জাপা। বাকিগুলো পায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। ২০১৮ সালেও জাপা রংপুর বিভাগে সাতটি আসন পায়। আর আওয়ামী লীগ ২৫টি ও বিএনপি একটি আসন পায়।</p> <p>এদিকে ২০১৯ সালে জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় পদ নিয়ে শুরু হয় জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের দ্বন্দ্ব। রওশনপন্থীদের বাদ দিয়ে জি এম কাদের তাঁর অনুসারীদের নিয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা। এসব আসনের ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-১ থেকে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ও রংপুর-৩ আসন থেকে জি এম কাদের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।</p> <p>জানা গেছে, জামায়াতের জন্য উর্বর হলো নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রংপুর বিভাগে প্রথম নীলফামারীতে সমাবেশ করেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান। এরপর গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে রংপুরের পাগলাপীর, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও গাইবান্ধায় সমাবেশ করেন তিনি। </p> <p>দলীয় ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে সবচেয়ে বেশি দলীয় প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে জামায়াতের। এর আগে গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামে তাদের এমপি ছিলেন। তাঁরা প্রতিযোগিতায় ছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর, গংগাচড়া ও বদরগঞ্জ আসনে।</p> <p>জামায়াতের এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত। এরপরও আমরা তৃণমূলে কাজ করেছি, করছি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাপার চরম কোণঠাসায় পড়ার শঙ্কা আছে। এই অবস্থায় সংসদীয় আসনগুলোতেই মূল টার্গেট আমাদের। আমরা সেই পরিকল্পনায় কাজ করছি।’</p> <p> </p>