<p>মাদকের ছোবল ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মাদকসংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে গত ছয় মাসে ১০ জনকে খুন করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই হয়েছে পরিবারের সদস্যদের হাতে। এ ছাড়া মাদক কারবার নিয়ে বিরোধের জেরেও খুন হয়েছে কয়েকজন। জড়িতদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত যুবক।</p> <p>সংশ্লিষ্টরাসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকাসক্তরা একসময় নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাই খুনের মতো ঘটনা ঘটাতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। পারিবারিকভাবে এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি মাদক পাচার, ব্যবসা নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।</p> <p> </p> <p><strong>বাড়িতে ডেকে নিয়ে খুন</strong></p> <p>গত ১৩ জুন আশুগঞ্জের যাত্রাপুর গ্রামে বাড়িতে ডেকে নিয়ে হৃদয় (২৫) নামের এক যুবককে খুন করা হয়। একই এলাকার বাসিন্দা একাধিক মাদক মামলার আসামি রুবেল (৪০) এ ঘটনা ঘটান। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাশের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। রুবেলের মা লালু বেগম ওই সময় পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর এই ছেলে মাদকাসক্ত।</p> <p> </p> <p><strong>মাদক পরিবহনকারীকে খুন</strong></p> <p>গত ২ জুলাই কসবায় পাহাড়ের ঢালে বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে মাথাবিহীন অর্ধগলিত অবস্থায় রাবেয়া আক্তার রাবু (৩৩) নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়। তারা পুলিশকে জানায়, ১২ কেজি গাঁজা পরিবহনের পর ওই নারী টাকা দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ২৫ জুন ওই নারীকে ডেকে নিয়ে খুন করে।</p> <p> </p> <p><strong>মাদকের টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে খুন </strong></p> <p>ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পুনিয়াউটে মাদক সেবনের টাকা না দেওয়ায় তানিয়া আক্তার (৩৬) নামে এক নারী স্বামীর হাতে খুন হন।</p> <p> </p> <p><strong>মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যা</strong></p> <p>মাদকাসক্ত ছেলের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে এনায়েত উল্লাহ (২০) নামে এক যুবককে হত্যা করেছে তার বাবা। গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে বিজয়নগরের মহেশপুরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বিদেশফেরত এনায়েত একসময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকার জন্য প্রায়ই বাবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করত।</p> <p> </p> <p><strong>স্ত্রী-সন্তানকে বিষ খাইয়ে মারার অভিযোগ </strong></p> <p>সদর উপজেলার ঘাটুরায় দুই শিশুসন্তানসহ স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৩ নভেম্বর তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।  স্ত্রী শারমিন আক্তারের বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, যৌতুকের জন্য নির্যাতনসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাদের স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। স্বামী আশরাফ জুয়া খেলত ও মাদকাসক্ত ছিল।</p> <p> </p> <p><strong>বন্ধুর হাতে খুন</strong></p> <p>গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় আখাউড়ায় স্বাধীন মিয়া (২৫) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। অভিযুক্ত স্বপন ও স্বাধীন দুজনই মাদকসেবী।</p> <p> </p> <p><strong>মাদকাসক্তের হাতে খুন</strong></p> <p>কসবায় টাকা নিয়ে মোবাইল বিক্রি না করায় মাদকাসক্ত এক যুবকের হাতে মো. মহসীন নামে অটোরিকশাচালক খুন হয়েছে।</p> <p> </p> <p><strong>মাদকাসক্ত গলা কেটে পুড়িয়ে দিল নারীকে</strong></p> <p>আখাউড়ার গাজীর বাজারে গত ২৪ ডিসেম্বর পুলিশ একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে ৪৭ বছর বয়সী শারমীন বেগম নামে নারীর পোড়া মরদেহ (কয়লা) উদ্ধার করে। অভিযুক্ত যুবক ফারহান ভূঁইয়া রনি এলাকায় চিহ্নিত মাদকসেবী।</p> <p> </p> <p><strong>সচেতনতার তাগিদ </strong></p> <p>এসব বিষয়ে খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদক পরিবহনের ট্রানজিট পয়েন্ট হওয়ায় এটা একেবারে নির্মূল করা হয়তো সম্ভব না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্টদের আরো তৎপরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, ‘মাদকাসক্তরা একসময় নিজের স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। ভালো-মন্দের বালাই থাকে না তাদের কাছে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে সন্তানদের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।’  এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, ‘এখন মূলত ইয়াবার কারণে সমস্যা বেশি হচ্ছে। এ ধরনের মাদক যারা সেবন করে, তাদের দিয়ে যেকোনো ভয়ংকর কাজ করানো যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পরিবার থেকে সচেতনতাটা বেশি জরুরি। কেউ মাদকাসক্ত হয়ে গেলে ছয় মাস থেকে এক বছরের চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’</p> <p> </p> <p> </p>