কুমিল্লার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম কমলপুর। এ গ্রামটি দেশজুড়ে ‘বাটিকপল্লী’ নামে পরিচিতি। এখানকার বাসিন্দারা কয়েক যুগ ধরে সাদা কাপড়ে বাহারি রং দিয়ে বাটিকের পোশাক তৈরি করছেন, যা দেশ ছাড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে কমলপুর গ্রামের বাটিকপল্লীর কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে এই বাটিকপল্লীতে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন বাটিকের কারিগররা।
এবারের ঈদে বাটিকের কারিগররা নানা রঙের পোশাক তৈরি করছেন। শাড়ি, থ্রি-পিস, বিছানার চাদর ও ওড়না, লুঙ্গিতে নিত্যনতুন নকশা ফুটিয়ে তুলছেন তাঁরা।
বাটিক কাপড় প্রস্তুত সম্পর্কে কারিগররা জানান, প্রথমে তাঁরা প্রিন্ট করার জন্য সাদা কাপড় কেটে প্রস্তুত করেন। এরপর মোমের রঙিন পানিতে আলপনা করা কাঠের টুকরা দিয়ে সেই কাপড়ে নানা ধরনের নকশার ছাপ দেন।
রঙের স্থায়িত্ব বাড়াতে রং করার পর কাপড় গরম পানিতে ভেজানোর কাজ করেন। এরপর কাপড়ে মাড় দেওয়া হয়। সেই কাপড় কয়েক দফা পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শোকানো শেষে ইস্ত্রি করে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
বাটিক রঙের কারিগর সুমন দাস ও মো. ইসমাইল মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রডাকশনে কাজ করি।
যে বেশি কাজ করতে পারে তার প্রডাকশন বেশি, তার টাকাও বেশি। আমরা প্রতিদিন ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারি।’
বাটিকপল্লীর দেলোয়ারা ডায়িংয়ের মালিক মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কারখানা থেকে সাদা কাপড় সংগ্রহ করা হয়। পরে ডায়িংয়ে এনে রঙতুলিতে আলপনার কাজ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার এখানে ৪০ থেকে ৫০ জন কাজ করে।
সরকারিভাবে যদি আরো সহযোগিতা পাওয়া যেত, তাহলে বেকাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেত।’
কমলপুরের কুমিল্লা নিউ বাটিক ঘরের মালিক আবু ছায়েদ হোসেন বলেন, দিন দিন এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। একসময়ে পুরো গ্রামে বাটিক প্রিন্টের কাজ করা হতো। এই কমলপুর গ্রামকে বাটিকপল্লী হিসেবেই সবাই চিনত। এখন কারখানা কমে গেছে। সরকারি সহায়তা পেলে এই শিল্পকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।