<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের আগের যেকোনো সরকারের চেয়ে কাঠামোগতভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা আলাদা। কাগজে-কলমে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। কিন্তু এই স্লোগানের বাস্তবায়ন হয়নি কখনো। আর হওয়ার সম্ভাবনাও কম। কারণ রাষ্ট্র থাকলে শত্রুও থাকবে। এটাই তো স্বাভাবিক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ মুজিবের সরকার চীনা ব্লক, সৌদি ব্লককে কাছে টানতে পারেনি; জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সরকার সোভিয়েত আর ভারতের বিপক্ষে ছিল, এরশাদের সরকার অবশ্যই ভারতবিরোধী ছিল না। হাসিনা সরকার পাকিস্তানকে কাছে টানতে চায়নি, ভারতের অন্যায় আবদার রাখতে গিয়ে সার্ক ধ্বংস করে দিয়েছে। আর যেভাবে বাংলাদেশকে তিনি ভারতের উপনিবেশে পরিণত করেছিলেন, সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. ইউনূস স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের চেয়ে বেশ আলাদা। পৃথিবীতে মোট পাঁচজন ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁরা আগে নোবেল পেয়েছেন আর পরে রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। ড. ইউনূস সেই পাঁচজনের একজন। আর সেই পাঁচজনের মধ্যে তিনি একমাত্র অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্ষমতায় আসার পর এরই মধ্যে ৬০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ইউনূস সরাসরি দেখা করেছেন। এর বাইরে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক আর তাদের বিভিন্ন সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার কথা বাদ দিলাম। এই সাক্ষাত্গুলো সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল না। প্রায় প্রতিটিতেই কৌশলগত আলাপ হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এতগুলো লোকের সঙ্গে দেখা করা, কথার লাইন ঠিক রাখা টানা দাবা খেলার চেয়েও কঠিন বলে মনে করি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্যার পর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছেন। স্বাভাবিক আশা ছিল, তিনি হয়তো রাষ্ট্রদূতকে দুটি কথা শোনাবেন। তা না করে তিনি বললেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এই বক্তব্যের কারণে মোদির মিডিয়ার অপপ্রচারে সমস্যা হয়েছে। ইউনূসবিরোধী প্রচারণা করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে শব্দচয়নে ইউনূস-তৌহিদ বেশ সাবধানী। ফলে বাংলাদেশ থেকেও কোনো আওয়াজ ওঠেনি যে ইউনূস ভারতের দালাল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউনূস পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে সবার সামনেই বললেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা সার্ক পুনরুদ্ধার করতে চাই। ইউনূস সরকার পাকিস্তান থেকে অস্ত্র কিনতে যাচ্ছে। আগামী মাসেই আসবে অস্ত্রের প্রথম চালান। এতে আসবে ৪০ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ, দুই হাজার ট্যাংকের গোলা, ৪০ টন  </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">RDX </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বিস্ফোরক, দুই হাজার ৯০০ কামানের গোলা। ড. ইউনূস এগুলো গোপনে কিনতে পারতেন। অস্ত্রের চালান বেশির ভাগ সময় গোপনে আসত। এ কারণে আমরা এত দিন জানতাম না যে শেখ হাসিনা পাকিস্তানের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতেন, যদিও এত বেশি পরিমাণে না। কিন্তু ইউনূস পাকিস্তান থেকে প্রকাশ্যে অস্ত্র কিনছেন। এর উদ্দেশ্য ভারত আর মায়ানমারকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতিসংঘের ৯৯তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ  </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">ICPPED </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চুক্তিতে সই করল। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে গুম হলে  </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">ICPPED </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কমিটি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। আয়নাঘর ধরনের কোনো কিছু যেন আবারও বাংলাদেশে না ঘটে, তার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন কোনো সরকারের আর এটি বলার সুযোগ নেই যে কে নিখোঁজ বা কে খুন হলো, সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, জাতিসংঘ এটি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য আর ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য ইউনূস আলাদা কমিশন গঠন করেছেন। আর সুইজারল্যান্ডের কাছে এর জন্য সহযোগিতা চেয়ে সুইস রাষ্ট্রদূতকে উপদেষ্টা কার্যালয়ে আমন্ত্রণ করে এনেছেন। তাঁর সঙ্গে এর পদ্ধতি নিয়ে আলাপও করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. ইউনূস আসিয়ানের সভাপতি দেশ মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য করতে চান। তা ছাড়া মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রয়েছে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং মালয়েশিয়ায় সাতটি ইউনূস সেন্টার রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটস্থ প্রতিবেশী ভারত। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে অভিন্ন। তার পরও দুটি দেশ দুটি সত্তা। সে কারণেই সম্পূর্ণ ভারতনির্ভরতা কাম্য নয়। ভারতের প্রভাব অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনার, আমাদের দেশকে অর্থনৈতিক আর সাংস্কৃতিকভাবে মুক্ত করার একটি পথ হতে পারে আসিয়ান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেকোনো আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফরমে যদি একটি দানব বাস করে, তাহলে সে প্ল্যাটফরম কাজ করে না; যে কারণে চীন, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক জোট করা যায়নি। এই একই কারণে সার্কও খুব একটা কাজ করবে বলে মনে হয় না। কারণ এখানে ভারতের ভূমিকাও দানবের মতো। তাই ভারতনির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে খালেদা জিয়ার সরকার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লুক ইস্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পলিসি হাতে নিয়েছিল, যা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর সুবিধা হলো, চীনের সঙ্গে আমাদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">BICM </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">করিডর হওয়ার কথা ছিল গত দশকে। এটি হলে কলকাতা, ঢাকা, মায়ানমারের মান্ডালায় এবং চীনের কুনমিং সড়কপথ ও পরে রেলপথ যুক্ত হতো, আমরা অনেক সহজে চীনে যেতে পারতাম, চীন থেকে পণ্য আনতে পারতাম। এই ভয় থেকেই ভারত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">BICM </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাতিল করে দিয়ে নতুন প্রকল্প করেছে, যেখানে চীন, মায়ানমার, ভারত আছে, কিন্তু বাংলাদেশকে রাখেনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চীনের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">BRI </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্প তখন বঙ্গোপসাগরকেও যুক্ত করতে পারবে। এবার আর আকিয়াব দিয়ে নয়, পায়রা আর মোংলা এতে যুক্ত হতে পারবে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে আমাদের শ্রমবাজার প্রসারিত হবে। প্রযুক্তির দিক থেকে বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়বে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আসিয়ানের দেশগুলোতে পড়তে যেতে পারবে। আমাদের এখানে তারাও পড়তে আসতে পারবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সর্বোপরি ভারতের খাঁচানীতি বা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হতে চাও তো আমার ওপর দিয়ে যাও</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নীতি বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল ভিলেজে প্রবেশ করবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু আসিয়ানে প্রবেশের পথ খুব কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য। আসিয়ানভুক্ত দেশ ১০টি। বোধ করি এর মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া নিশ্চিত আমাদের পক্ষে ভোট দেবে। কারণ দুটি দেশ থেকেই আমরা প্রচুর পরিমাণে আমদানি করি। আর তারাও বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে আগ্রহী। ব্রুনেইয়ের সুলতান বাংলাদেশকে অত্যধিক পছন্দ করেন। তিনিও পক্ষে থাকবেন বলে মনে করি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফিলিপিন্সের বাংলাদেশের পক্ষে থাকার কথা। কারণ তাদের সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্যের আরো সুযোগ রয়েছে। আর বাংলাদেশ-ফিলিপিন্স দুটিই এখন ইউএস ও চীনের বন্ধু। এখানে নিশ্চিত চার ভোট। অন্যদিকে নিশ্চিত বিপক্ষে যাবে মায়ানমার। এর কারণ ব্যাখ্যা করার জরুরত নেই। বিপক্ষে থাকবে ভিয়েতনাম। কারণ উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ভিয়েতনাম। তারা চাইবে না আসিয়ানে চীনের বিনিয়োগে বাংলাদেশ ভাগ বসাক। অথবা বাংলাদেশ আসিয়ানের মুক্তবাজার অর্থনীতির চুক্তিতে আসুক। ঐতিহাসিকভাবে লাওস পররাষ্ট্রীয় প্রায় সব ক্ষেত্রে ভিয়েতনামকে অনুসরণ করে তাই লাওস বাংলাদেশের বিপক্ষে ভোট দেবে। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই এই তিনটি দেশের ভোট আমরা পাব না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাকি রইল সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। প্রথম দুটি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। আর থাইল্যান্ড যা বলবে কম্বোডিয়া, তা-ই করবে। কিন্তু তাদের ভোট কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো কিছু বলা খানিকটা কঠিনও বটে। বাংলাদেশ আসিয়ানে ঢুকলে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড দুটি দেশেরই লাভ আছে। কারণ বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়বে বাংলাদেশের সঙ্গে। ভারত থেকে সরে আমরা অনেক বেশি আসিয়ানের দিকে যেতে পারব। থাইল্যান্ডে পর্যটক ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক আয় হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু এখানে রাজনৈতিক ঝামেলা আছে। বাংলাদেশ কিন্তু একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ না। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। আমাদের ভাষা, ভূগোল, সংস্কৃতি ও জাতি কিছুই মেলে না আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে, যদিও কয়েকটি দেশের সঙ্গে ধর্মীয় দিক থেকে মিল রয়েছে। আর এ জন্য আমাদের প্রতি কিছুটা রাজনৈতিক অবিশ্বাস থাকা অস্বাভাবিক নয়। ওরা যেভাবে বিশ্বকে দেখে, অবশ্যই আমরা সেভাবে দেখি না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভারতের মিল আছে। কম্বোডিয়া, লাওস, সিঙ্গাপুরের মিল নেই। ফলে কোনো কৌশলগত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অবস্থান আসিয়ানের পুরো প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেবে কি না, প্রশ্নবিদ্ধ করবে কি না সেটা একটা চিন্তার কারণ হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে আসিয়ান অত্যন্ত শান্ত এলাকা। এখানে বড় বড় শক্তির আধিপত্য নিয়ে মারামারি নেই। চীন আর ইউএসের প্রভাব কোথায় কতটুকু, তা নির্ধারিত ও স্থিতিশীল। এর বিপরীতে বাংলাদেশ নিয়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়ার বেশুমার মাথাব্যথা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মতো একটি দেশকে যুক্ত করলে আসিয়ানের শান্ত পরিবেশ আবার নষ্ট হয়ে যায় কি না। বাংলাদেশ আসিয়ানকেও আবার ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রের চিপায় টেনে আনে কি না সেটাও একটা প্রশ্ন আকারে হাজির হতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর বাইরে আরেক বড় সমস্যা ভারত। ভারত যদি সর্বতোভাবে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ফিলিপিন্সে তার প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য চাপ দেয়, তাহলে আমার মনে হয় না থাইল্যান্ড বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াবে। আর থাইল্যান্ডও এখন রাজনৈতিকভাবে খুব নাজুক অবস্থায় আছে। মাত্র কয়েক মাস আগে তাদেরও সরকার পতন হলো। এই অবস্থায় বাংলাদেশ নামক আরেক ঝামেলা নিয়ে চিন্তা করার সময় থাইল্যান্ডের কম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাহলে কি আসিয়ানে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা শেষ? আমার মনে হয় না। এই যুগ রাজনীতির না, অর্থনীতির যুগ। প্রতিটি দেশ এখন তার বাণিজ্যকে প্রাধান্য দেয়। সেখানে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতি আর বিশাল এক বাজার আসিয়ানের জন্যও নতুন সম্ভাবনা। বাংলাদেশ সরকারের এখন অত্যন্ত ধীরগতিতে আগানো দরকার। এবং নতুন পরিস্থিতিতে চীন আর যুক্তরাষ্ট্রকে একসঙ্গে রাজি করতে হবে, যেন তারা বাংলাদেশকে আসিয়ানে ঢোকাতে ভূমিকা রাখে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারতকেও কোনো একটি লোভনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যেন সে প্রভাব খাটানো বন্ধ করে। আসিয়ানে ঢোকার আগেই আসিয়ানের সঙ্গে নন-এফটিএ চুক্তির আওতায় বাণিজ্য রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। আর একটি কঠিন কূটনৈতিক ফাইট দিতে হবে, যেন দ্বিপক্ষীয়ভাবে কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি অনেক বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়ছি শুধু এই দিনটি দেখার জন্য যে একদিন ভিসা ছাড়া ভিয়েতনামে যাব, শুল্কমুক্তভাবে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা দেশে আসবে, লাওসের ছেলেমেয়েরা এ দেশে আসবে মেডিক্যাল ডিগ্রি নিতে। এটি হবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক স্বপ্নের দিন, মুক্তির দিন এবং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের ছোবল থেকে মুক্ত হয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বের বুকে স্বাধীন ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন জাতি হিসেবে দাঁড়ানোর দিন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানিতে গবেষণারত</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:sahidsams7@gmail.com" style="color:blue; text-decoration:underline">sahidsams7@gmail.com</a></span></span></span></span></p>