<p style="text-align:justify">নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ালে দেশের শিল্প খাত দ্বিমুখী সংকটে পড়বে। শিল্পায়নকে নিরুৎসাহিত করবে। নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও হবে না। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেশের শিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত বলে মনে করে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকরা।</p> <p style="text-align:justify">রবিবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর পুরানা পল্টনের পল্টন টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)। সংগঠনটির সভাপতি সামিম আহমেদ লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">এ সময় তিনি শিল্প কারখানায় গ্যাসের দাম এখন যা আছে তাই রাখার অনুরোধ জানান।</p> <p style="text-align:justify">সামিম আহমেদ বলেন, গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন দামে গ্যাস বিল দিতে হবে, আর পুরনো সংযোগগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে দিনে গ্যাসের অনুমোদিত লোড ৫৩৫ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে দিনে ৩৮০ থেকে ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ২৮০ থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি থাকছে দিনে ১০০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ৭৫ শতাংশ আসে দেশিও উৎস থেকে, আর বাকি ২৫ শতাংশ আমদানি করা এলএনজি থেকে। উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশিও গ্যাসের উৎপাদন ক্রমেই কমছে। অন্যদিকে নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মিত না হলে আমদানিও বাড়ানো যাবে না। আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় দেশের শিল্প খাত দ্বিমুখী সংকটে পড়বে। আমরা মনে করি প্রস্তাবিত দাম শিল্পের জন্য খুবই কঠিন হবে।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হলে তারা বেশি দাম দিতে রাজি আছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নি হয়নি। পরে গ্যাস না পেয়ে ব্যবসায়ীরা দাম কমানোর দাবি জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক শিল্প খাত নানা সংকটের মুখে শ্রমিক অসন্তোষ ও বেতন ভাতা বকেয়া থাকার কারণে বেশ কিছু কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্পোদ্যোক্তারা আরও বিপদে পড়বেন, বলেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">সামিম আহমেদ আরো বলেন, বিগত সরকার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছিল। কিন্তু তারা গ্যাস-সংকটের সমাধান করতে পারেনি। অনেক এলাকায় গ্যাস, বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে শিল্পকারখানা চলছে রেশনিং পদ্ধতিতে। অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাস সংকটের সমাধান না করে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে শিল্পকারখানায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।</p> <p style="text-align:justify">বিপিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, পেট্রোবাংলা দুটি উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে। দেশিও গ্যাস কিনে নেয় বিভিন্ন কম্পানি থেকে। এতে প্রতি ইউনিটে তাদের গড়ে খরচ হয় ৬ টাকা ৭ পয়সা। কিন্তু তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে খরচ হচ্ছে ৭৫ টাকার বেশি। এতে লোকসানে আছে সংস্থাটি। ভর্তুকি দিতে রাজি নয় সরকার। তাই এখন এলএনজি আমদানির খরচ পুরোটাই শিল্পের ওপর চাপাতে চাইছে পেট্রোবাংলা।</p> <p style="text-align:justify">এলএনজি আমদানি করে চলতি অর্থবছরে ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে একটি হিসাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেনা এলএনজির খরচ হিসাব করে প্রতি ইউনিটের দাম প্রস্তাব করেছে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা। এর মধ্যে আমদানি খরচ ৬৩ টাকা ৫৮ পয়সা। আর বাকিটা শুল্ক, কর ও পরিচালন খরচ। আমরা মনে করি, আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য বক্তব্যকে বাস্তবায়ন করার আগে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো চুক্তি বা ব্যবস্থা দেশবাসী গ্রহন করবে না। তাই গ্যসের দাম না বাড়ানোর দাবি করছি। </p> <p style="text-align:justify">সংবাদ সম্মেলনে বিপিজিএমইএর পক্ষ থেকে ৫টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যেগুলো হলো নতুন কূপ খননে আরো বিনিয়োগ এবং বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সরকারের নেওয়া ১৫০টি কূপ খনন দ্রুততার সাথে সমাপ্ত করা। মায়ানমার থেকে চীন ও থাইল্যান্ড প্রচুর পরিমাণে গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করে। কিন্তু বাংলাদেশের এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে কোনো গ্যাস আমদানি করতে পারেনি। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ, গ্যাসসংকট সমাধানে এলএনজি আমদানি থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার ও নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ। দেশের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের স্বার্থে বর্তমান গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা অব্যাহত রাখা। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবতার নিরিখে ব্যবস্থা গ্রহণ।</p> <p style="text-align:justify">সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিপিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন, ফেরদৌস ওয়াহেদ, সহসভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন, কাজী আনোয়ারুল হক, সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, পরিচালক মোসাদ্দেকুর রহমান নান্নু, মো. শাহজাহান, এ টি এম সাঈদুর রহমান বুলবুল, মো. এনামুল হক, আমান উল্লাহ প্রমুখ।</p>