<p>সৌন্দর্যমণ্ডিত বিশাল ফটকে লেখা রয়েছে ‘দেশ ও জনগণের অতন্ত্র প্রহরী’ বাংলাদেশ মুক্তিযেদ্ধা সংসদ, আঠারবাড়ী ইউনিয়ন কমান্ড কার্যালয়। ময়মনসিংহ ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ী-কেন্দুয়া সড়কের পাশে অবস্থিত এই মুক্তিযোদ্ধা সংসদে এখন আর প্রবেশ করা যায় না। সব জায়গা দখল করে খাবার হোটেল তৈরি করা হয়েছে। আর ভিতরে রয়েছে ফাস্টফুডের দোকান। এ যেন হোটেলপাড়া। এ নিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ লোকজনের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।</p> <p>আঠাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী রায়ের বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কেন্দুয়া সড়ক। এই সড়ক ঘেঁষেই অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়। প্রায় ১০ শতাংশ জমির ওপর টিনশেড এই কার্যালয়টি এখন আর দেখা যায় না। </p> <p>সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চারপাশেই গড়ে উঠেছে খাবার হোটেল ও বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট। ভিতরে পুরাতন সংসদ কার্যালয়ের পাশেই যে খালি জায়গা ছিল তাতেও তৈরি হয়েছে ‘চন্দ্রবিন্দু’ নামের একটি ফাস্টফুডের দোকান। এখন শুধুই বাকী রয়েছে প্রায় আট হাত লম্বা মূল ঘরটি। যেখানে সব সময় তালা ঝুলে।</p> <p>মূল ফটকের সামনের দুই পাশেই রয়েছে পানের দোকান। ভিতরে দুই পাশের বাম দিকে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ডান পাশে ‘আল হেরা’ নামের দুইটি খাবার হোটেল। এর পাশেই আরেকটি। আর ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ‘চন্দ্রবিন্দু’ নামের একটি ফাস্টফুডের দোকান। </p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্রাট নামের এক ব্যক্তি এই জায়গা ভাড়া নিয়ে নিজেই ঘর তৈরি করে ফাস্টফুডের দোকান দিয়েছেন। একইভাবে খালি জায়গা দখলে নিয়ে অন্য তিনজন বিশাল আকৃতির ঘর নির্মাণ করে বসিয়েছেন হোটেল। যেখানে দিনরাত সারক্ষণই হোটেল ব্যবসা চলছে।</p> <p>ভিতরে একটি শহীদ মিনার থাকলেও তার বেহাল অবস্থা। যে যার মতো এই শহীদ মিনারের ওপরেই আড্ডা এবং হোটেল থেকে খাবার এনে খাচ্ছে। আশেপাশে ময়লা আর্বজনায় ভরপুর। ভিতরে ও চারপাশেই আগত লোকজন।</p> <p>এক হোটেল মালিক মঞ্জিল জানান, এখানে মুক্তিযোদ্ধারা আসেন না। তাই পুরাতন টিনসেড ঘরটিতে তালা মারা থাকে। ব্যবহার হয় না। এই জন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা খালি জায়গা প্রতি বছরের জন্য ১২ লাখ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। এই টাকা প্রতিমাসে ভাড়ায় কাটা হয়।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, প্রায় ৫ বছর ধরে সংসদের জায়গা দখল নিয়ে ঘর করে নিয়েছেন দোকান মালিকরা। আর এই দখলের সুযোগ বা অনুমতি দিয়েছেন আঠারবাড়ি ইউনিয়ন সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জন কুমার ঘোস ওরফে রানা এবং ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডর ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের বেয়াই মো. তফাজ্জল হোসেন। তারাই ভাড়া টাকা আদায় করেন।</p> <p>বীর মুক্তিযোদ্ধা রানা বলেন, 'সারা দেশেই তো খালি জায়গায় দোকান করে ভাড়া দেওয়া হয়। এখানে দিতে কোনো অসুবিধা দেখছি না।' উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ছাড়া কোথাও দোকান ভাড়ায় চলে না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'তাহলে দোকান উঠাই দিব।'</p> <p>বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন জানান, দোকান ভাড়ার টাকা জমানো হচ্ছে। জমানো টাকা দিয়ে জায়গার বাউন্ডারী এবং জায়গা উচু করে নতুন একটি ঘর করা হবে। প্রায় ৫ বছর ধরেই তো ভাড়া চলছে কবে ঘর বা বাউন্ডারী দিবেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘অচিরেই করব। তবে নিউজ টিউজ কইরেন না।'</p> <p>ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহম্মেদ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p>