মূল্যস্ফীতি ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতারা। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সীমিত ও প্রান্তিক আয়ের মানুষ যেখানে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, সেখানে এই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা আরেক দফা পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে তাদের জীবনে নতুন করে আবারও অস্থিরতা তৈরি করবে। তাই এই অধ্যাদেশ বাতিল অথবা আগামী রমজান পর্যন্ত এই অধ্যাদেশ কার্যকর না করার দাবি জানানো হয়।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রেসিডেন্ট আবদুল মান্নান প্রমুখ। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘বৈশ্বিক ও দেশীয় পটপরিবর্তনের কারণে ২০২৪ সাল জুড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সর্বশেষ ডিসেম্বরে ১৩ শতাংশের কাছাকাছি এবং এর আগের মাসে ছিল ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। ক্রমাগত নিত্যখাদ্যপণ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে।
ফলে নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারও ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির চাপে জীবিকা নির্বাহে প্রায় দিশাহারা। আর এর মধ্যেই এই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতিকে আরেক দফা উসকে দিতে পারে।’
নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগামী মার্চে পবিত্র মাহে রমজান মাস। রমজান উপলক্ষে এখন থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বিশেষ করে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা, মাছ, মাংস, মসলা ইত্যাদির দাম বাড়ানো ও মজুদ শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রমাগত বাড়ছে চালের দাম। প্রকারভেদে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই সময়ে এভাবে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে আরেক দফা দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ছড়াতে পারেন। এভাবে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে রমজান মাসে প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে।
নেতারা আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগ চলমান থাকলেও তার সুফল জনগণ পাচ্ছে না।
সরকার এর আগে ২৯টি পণ্যের ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করলেও ভোক্তা পর্যায়ে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এই শুল্ক প্রত্যাহারের পুরো সুবিধা বড় বড় করপোরেট গ্রুপ ও আমদানিকারকরা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান ভ্যাট নেটের আওতা বাড়ানো, সহজীকরণ করা, কর ফাঁকি বন্ধ করা, এনবিআরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভোগ বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা।