ডার্ক অক্সিজেন

গভীর সমুদ্রে এক আবিষ্কারে বিভক্ত বিজ্ঞানীরা

বাসস
বাসস
শেয়ার
গভীর সমুদ্রে এক আবিষ্কারে বিভক্ত বিজ্ঞানীরা
প্রতীকী ছবি : এএফপি

সূর্যের আলো ছাড়াই সমুদ্রের গভীর অন্ধকারতম স্থানে অবস্থিত ধাতব শিলা কি অক্সিজেন তৈরি করতে পারে? কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, সমুদ্রের আলোহীন অতল গহ্বরে ধাতব বস্তুগুলো অক্সিজেন তৈরি করতে পারে, যাকে ‘ডার্ক অক্সিজেন’ বলা হয়। তবে অন্য বিজ্ঞানীরা তথাকথিত এই ‘ডার্ক অক্সিজেন’ উৎপন্ন হওয়ার দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে গত জুলাইয়ে বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত এই আবিষ্কার পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং তীব্র বৈজ্ঞানিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

পলিমেটালিক নোডুলের মধ্যে থাকা মূল্যবান ধাতু বের করতে আগ্রহী খনি কম্পানিগুলোর জন্যও এই গবেষণার ফলাফল ফলপ্রসূ ছিল।

এই গবেষণা দীর্ঘদিনের ধারণার ওপর সন্দেহ তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ধারণা ছিল, অক্সিজেন শুধু সূর্যের আলোতে উদ্ভিদ বা শৈবালসহ সালোকসংশ্লেণকারী প্রাণীরাই তৈরি করতে পারে, যাকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বলা হয়। অন্যদিকে নতুন এই আবিষ্কারকরা বিশ্বাস করেন, জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই অক্সিজেন অন্ধকারে ধাতব পিণ্ড দ্বারাও তৈরি হতে পারে।

স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেরিন সায়েন্সের বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু সুইটম্যান ও তার দল এ ডার্ক অক্সিজেন আবিষ্কার করেন। মেক্সিকো ও হাওয়াইয়ের মধ্যবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল জলরাশি অঞ্চল ক্লারিওন-ক্লিপারটন জোনে এই অক্সিজেন আবিষ্কার করা হয়েছে। এটা নিয়ে খনি কম্পানিগুলোর মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।

সমুদ্রতলে চার কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা পলিমেটালিক নোডুলগুলোতে ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল কোবাল্ট, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও অন্যান্য নিম্ন-কার্বন প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ধাতু রয়েছে।

যে গবেষণাটি ‘ডার্ক অক্সিজেন’ আবিষ্কারের জন্ম দিয়েছে, তাতে কানাডীয় গভীর সমুদ্র খনির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘দ্য মেটালস কম্পানি’ আংশিকভাবে অর্থায়ন করেছে। তারা এই ধরনের অনুসন্ধানের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করতে চেয়েছিল। কম্পানিটি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রবিদ অ্যান্ড্রু সুইটম্যান ও তার দলের গবেষণার তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, এটিতে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ রয়েছে।

নাজুক বাস্তুতন্ত্র
পরিবেশবিদরা বলেছেন, ডার্ক অক্সিজেনের উপস্থিতি দেখিয়েছে, সমুদ্রের একদম গভীরে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে কতটা কম জানা গেছে। এই আবিষ্কার গভীর সমুদ্র খননকাজকে অগ্রহণযোগ্য পরিবেশগত ঝুঁকি হিসেবে মনে করে।

গ্রিনপিস নামের একটি পরিবেশবাদী সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে সমুদ্র খনন বন্ধ করতে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। সংস্থাটি বলেছে, ‘এটি নাজুক কাজ, গভীর সমুদ্রে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।’

‘ডার্ক অক্সিজেন’-এর আবিষ্কার গভীর সমুদ্র খনন বন্ধের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে বলেও জানায় গ্রিনপিস।

বৈজ্ঞানিক সন্দেহ
এদিকে সুইটম্যানের এই আবিষ্কার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের প্রতি আপত্তি প্রকাশ করেছেন অথবা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গত জুলাই থেকে সুইটম্যানের আবিষ্কারকে খণ্ডনকারী পাঁচটি একাডেমিক গবেষণাপত্র পর্যালোচনা ও প্রকাশনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। জার্মানির কিয়েলে অবস্থিত জিওমার হেলমহোল্টজ সেন্টার ফর ওশান রিসার্চের জৈব-রসায়নবিদ ম্যাথিয়াস হেকেল বলেছেন, তিনি (সুইটম্যান) তার পর্যবেক্ষণ ও অনুমানের জন্য স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

হেকেল বলেন, ‘গবেষণাটি প্রকাশের পরও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। তাই এখন বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের অনুরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি পরিচালনা করে হয় এটি প্রমাণ অথবা খণ্ডন করা উচিত।’

ফরাসি জাতীয় মহাসাগর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ইফ্রেমারের ভূ-রসায়ন গবেষক অলিভিয়ার রাউক্সেল এএফপিকে বলেছেন, ‘এই ফলাফলগুলোর ওপর একেবারেই কোনো ঐকমত্য নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘গভীর সমুদ্রের নমুনা সর্বদা একটি চ্যালেঞ্জ। এটা হতে পারে, অক্সিজেন পরিমাপ যন্ত্রগুলোতে বায়ু বুদবুদ আটকে ছিল।’

এএফপি সুইটম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুতির কথা জানান। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলোতে এই ধরনের এদিক-সেদিক করা খুবই সাধারণ এবং এটি বিষয়বস্তুকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিনের প্রায় দুই ঘণ্টা ফোনালাপ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিনের প্রায় দুই ঘণ্টা ফোনালাপ
ফাইল ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিন বছর আগে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাত ৮টার (বাংলাদেশ সময়) দিকে তারা ফোনে কথা বলা শুরু করেন। এই দুই নেতার মধ্যে টানা দুই ঘণ্টা আলাপ হয়।

 

সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প ও পুতিন প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেন। একটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এ ফোনালাপের উদ্দেশ্য ছিল, পুতিনকে ৩০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজি করানো। যার মধ্যে আছে রুশ বাহিনীর দখল করা ইউক্রেনের বৃহৎ অঞ্চল।

চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইউক্রেন।

এরপর একই প্রস্তাব রাশিয়াকেও দেয় মার্কিনিরা। যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো এতে পুরোপুরি রাজি হননি। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি কথা বললে পুতিন হয়তো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারেন।

৩০ দিনের ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পর পুতিন গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি।

তবে এই যুদ্ধবিরতিটি হতে হবে মূল সমস্যার ওপর। যেটির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব নিরসন হবে। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটির বিস্তারিত জানতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রাম্প এরপর রাশিয়াকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দিয়ে দেওয়া এবং বিখ্যাত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।

রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের স্বার্থ রক্ষা হলেই কেবল তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে।

তিন বছরের যুদ্ধে ইউক্রনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ অংশ দখল করেছে রাশিয়া। যেগুলোকে তারা নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে।

হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ডান স্কাভিনো পরবর্তীতে এক্সে আরেকটি পোস্ট করেন, সেখানে তিনি লেখেন ‘আলোচনা চলছে’। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই ফোনালাপের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে ডান স্কাভিনোর পোস্টের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্প ও পুতিন ৯০ মিনিটের বেশি সময় ধরে কথা বলছেন। এর কিছুক্ষণ পরই জানা যায় তাদের ফোনালাপ শেষ হয়েছে।

মন্তব্য

নিরাপত্তা শঙ্কায় বেলুচিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
নিরাপত্তা শঙ্কায় বেলুচিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
ফাইল ছবি : এএফপি

পাকিস্তানের অস্থিতিশীল বেলুচিস্তান প্রদেশ সম্প্রতি নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলা বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

নাম না প্রকাশের শর্তে এক প্রাদেশিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গত সপ্তাহে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়, আর মঙ্গলবার তৃতীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থায় যেতে বলা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকবে।’

আরো পড়ুন
পাকিস্তানে গাড়িবহরে হামলা, ৫ সেনা নিহত

পাকিস্তানে গাড়িবহরে হামলা, ৫ সেনা নিহত

 

এই পদক্ষেপের ফলে হাজারো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে আবার খুলবে তা ঈদুল ফিতরের পর পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। ঈদ হতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি।

এএফপি আরো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতার পর কোয়েটার নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। শহরের রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে জাতিগত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ৪৫০ জন যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে হামলা চালায়, যা দুই দিনের অবরোধের সূত্রপাত ঘটায় এবং এতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর রবিবার একটি আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর অন্তত পাঁচজন সদস্য নিহত হন।

এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), যা কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। তাদের অভিযোগ, আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানে বাইরের শক্তিগুলো তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করছে।

আরো পড়ুন
বিএলএ কারা, কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে

বিএলএ কারা, কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে

 
মন্তব্য

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়াল, হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিহত

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়াল, হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিহত
১৮ মার্চ একজন ফিলিস্তিনি নারী শিশুকে কোলে নিয়ে গাজা উপত্যকার পূর্বাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। ছবি : এএফপি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ‘ব্যাপক হামলা’য় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ আক্রমণ চালাচ্ছে। হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং আইডিএফ নতুন করে আরো অনেক এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটি গাজায় সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে গাজার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পদস্থ হামাস নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহ নিহত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আরো তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাজার বাসিন্দারা সাহরি খাওয়ার সময় এসব বিস্ফোরণ হয়। তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেন—চারপাশে আগুন, মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এবং আহতরা চিকিৎসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার সকালে এই হামলার নির্দেশ দেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার হামাসের অস্বীকৃতি জানানো এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরবর্তী পদক্ষেপ।

এখন থেকে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।’

ইসরায়েলের দাবি, হামাস এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। এদের সবাইকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ২০২৩ জিম্মি করা হয়েছিল। ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি দানন হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না।’

কিন্তু জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গোষ্ঠী অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি সরকার ‘জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে’।

হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম এক বিবৃতিতে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, ‘আমাদের প্রিয়জনদের ফেরানোর প্রক্রিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’

‘ভয়ানক রাত’
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে গাজা সিটি, রাফা ও খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়। ২৫ বছর বয়সী রামেজ আলাম্মারিন এএফপিকে জানান, তিনি গাজার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আহত শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, ‘তারা আবারও গাজায় নরকের আগুন ঝরিয়েছে। মৃতদেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চারপাশে পড়ে রয়েছে, আর আহতরা কোনো ডাক্তার পাচ্ছে না।’

মোহাম্মদ বদেইর রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, তারপর হঠাৎ হামলার শব্দে জেগে উঠি। আমাদের প্রতিবেশীদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচে এই মেয়েটিকে পাই, তার মা-বাবাকেও টেনে বের করি।’

তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে তার নিজের মেয়ের দেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া যায়। এ ছাড়া গাজার আল-মাওয়াসিতে কর্মরত ইউনিসেফের মুখপাত্র রোসালিয়া বোলেন বিবিসি রেডিও ৪কে বলেন, ‘এটি সবার জন্য একটি ভয়ানক রাত ছিল।’

বাইরে চিৎকার ও সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, আর ওপরে প্লেন উড়ছিল জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘খুব জোরে বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, আমাদের গেস্ট হাউস কাঁপছিল। পরবর্তী ১৫ মিনিটে, প্রতি পাঁচ বা ছয় সেকেন্ডে একবার করে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।’

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আহতদের সংখ্যা সামাল দিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা ৬৬০-এর বেশি। ওই অঞ্চলের ৩৮টি হাসপাতালের মধ্যে ২৫টি সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

গাজার হাসপাতালগুলোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাকুত বিবিসি আরবিকে জানান, আহতদের মধ্যে অনেকেরই পোড়া ও ভাঙা হাড়ের মতো গুরুতর আঘাত রয়েছে এবং অনেকে এখনো অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘হামলাগুলো এত আকস্মিক হয়েছিল যে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল স্টাফ উপস্থিত ছিলেন না এবং এই ব্যাপক হামলার মাত্রার কারণে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত দল ডাকতে হয়েছে।’

প্রতিক্রিয়া
এদিকে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী মুহান্নাদ হাদি বলেন, ‘এটি অকল্পনীয়। যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত। গাজার মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করছে।’

হামাস এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার জন্য ইসরায়েলকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করেছে। তারা আরো বলেছে, ইসরায়েল অবশিষ্ট জিম্মিদের ‘এক অনিশ্চিত পরিণতির’ সম্মুখীন করেছে।

তবে হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়নি। বরং মধ্যস্থতাকারী ও জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই হামলার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল। ফক্স নিউজকে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব ১ মার্চ শেষ হওয়ার পর মধ্যস্থতাকারীরা নতুন সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব করেছিল, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বটি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানো হোক, যাতে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি ও ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময় অব্যাহত রাখা যায়। কিন্তু মধ্যস্থতাকারী আলোচনায় জড়িত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাস এই চুক্তির মূল কিছু শর্ত নিয়ে একমত হতে পারেনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। পাশাপাশি সেই হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালায়। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এতে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। পাশাপাশি গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকেই একাধিকবার। প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

মন্তব্য

অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে রহস্যজনক ফেনা

    শতাধিক সার্ফার অসুস্থ, সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু
অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে রহস্যজনক ফেনা
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইটপিঙ্গা ও পারসন্স সৈকতে রহস্যজনক ঘন, হলুদ ফেনার মধ্যে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক প্রাণী মৃত অবস্থায় ভেসে এসেছে, যার ফলে সৈকত দুটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ছবি : অ্যান্থনি রোল্যান্ড/দ্য গার্ডিয়ান

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে রহস্যজনক এক ধরনের ফেনা ভেসে আসার ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় শতাধিক সার্ফারের অসুস্থ হয়ে পড়ার পাশাপাশি বহু মাছ, অক্টোপাস ও পাতাযুক্ত সিড্রাগন মারা গেছে বলে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে।  

অজ্ঞাত এই ফেনার কারণে ওয়াইটপিঙ্গা বিচ ও পারসন্স বিচ এলাকায় ১০০ জনেরও বেশি সার্ফার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সৈকতে বিপুল পরিমাণে মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

 

সপ্তাহান্তে প্রথমবারের মতো এই হলুদ, বিবর্ণ, কাদাযুক্ত, চকচকে ফেনা ওয়াইটপিঙ্গা সৈকতে দেখা যায়, যা অ্যাডিলেড শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও ভিক্টর হারবার থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। সৈকতে ঘুরতে আসা মানুষ ও সার্ফাররা সমুদ্রে যাওয়ার পর ফ্লুর মতো উপসর্গ অনুভব করেন, যার মধ্যে ছিল চোখ চুলকানো, শুকনা কাশি ও গলায় ব্যথা।

অনেকে দৃষ্টির সমস্যার কথাও বলেছেন জানিয়ে স্থানীয় সার্ফার অ্যান্থনি রোল্যান্ড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পানিতে অস্বাভাবিক কিছু আছে।’ তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘পানির ওপরে ঘন, ভারী হলুদ ফেনা ছড়িয়ে ছিল, আর সৈকতের ধারে সবুজ ও কাদা মিশ্রিত স্তর দেখা যাচ্ছিল।

কিছু পর্যটক সমুদ্রে এক ধরনের তৈলাক্ত স্তর ভাসতে দেখেছেন এবং সৈকতে প্রচুর মৃত মাছ ও পাতাযুক্ত সিড্রাগন পড়ে থাকতে দেখেছেন। রোল্যান্ড তার অনলাইনে পোস্ট করা ছবিতে মৃত সামুদ্রিক প্রাণী দেখিয়ে লিখেছেন, ‘চোখে দেখা প্রমাণ, পানিতে অস্বাভাবিক কিছু একটা আছে।’

রোল্যান্ডের পোস্টের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তিনি জানান, তিনি ও তার সহকর্মীরাসহ ১০০ জনেরও বেশি মানুষ এই অস্বাভাবিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছে।

তিনি আশঙ্কা করছেন, এটি ফ্লোরিও উপদ্বীপের অন্যান্য সৈকতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

একজন মন্তব্যকারী জানান, ‘গলার ভেতরে কিছু আটকে থাকার মতো অনুভূতি হচ্ছিল’ এবং পোর্ট এলিয়ট বোলস ক্লাবে থাকার সময় তিনি কাশতে শুরু করেন। অন্য একজন বলেন, ‘আমার চোখ খুব খারাপভাবে জ্বালা করছিল’। তার সন্দেহ, এই ফেনা ওয়াইটপিঙ্গার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে।

রোল্যান্ড আরো দাবি করেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মিডলটন, এনকাউন্টার বে ও ভিক্টর হারবারে মৃত মাছ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই ভিক্টর উপকূলে পৌঁছে গেছে এবং মিডলটনে মৃত অক্টোপাসও পাওয়া গেছে।’

একজন স্থানীয় বাসিন্দা ধারণা করছেন, এই রহস্যজনক ফেনা হয়তো নীল-সবুজ শৈবাল (ব্লু/গ্রিন অ্যালগি) বা সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে এসেছে, যা মানুষ ও প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক। সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে এলে ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে অতিরিক্ত ক্লান্তি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট অন্যতম।  

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উচ্চ তাপমাত্রা, স্থির পানি ও চলমান সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট মাইক্রো-অ্যালগাল ব্লুম এই ফেনার কারণ হতে পারে। তারা ওয়াইটপিঙ্গা ও পারসন্স বিচ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে পরিবেশ ও পানি সংরক্ষণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় নিউল্যান্ড হেড কনজারভেশন পার্কের ওয়াইটপিঙ্গা ও পারসন্স বিচ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে।

এদিকে প্রাথমিক শিল্প ও অঞ্চল বিভাগ জানিয়েছে, ওয়াইটপিঙ্গায় মাছের মৃত্যুসংক্রান্ত একটি সম্ভাব্য ঘটনা তদন্তাধীন। একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সৈকত যত দ্রুত সম্ভব আবার খুলে দেওয়া হবে।’

সূত্র : এনডিটিভি

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ