<p>বাগেরহাট হযরত খানজাহান (রহঃ) মাজারের প্রায় ৬০০ বছর পুরানো দীঘির একটি কুমির মারা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দীঘি থেকে টেনে মৃত কুমিরটিকে পাড়ে আনা হয়। এরপর প্রাণী সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকরা কুমিরটির ময়নাতদন্ত করে। মাজারের খাদেম ও দর্শনার্থীরা অশ্রুজলে কুমিরটিকে শেষ বিদায় জানায়। এসময় মৃত কুমিরটিকে দেখতে মাজারের খাদেম, ফকির এবং শতশত দর্শনার্থী দীঘির পাড়ে ভিড় জমায়। মৃত কুমিরটি পুরুষ প্রজাতির। এখন দীঘিতে মাত্র একটি নারী প্রজাতির কুমির রয়েছে। তবে মাজারের প্রধান খাদেমের অভিযোগ, কুমিরটি পুকুরে আটকে রেখে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। </p> <p>সাড়ে ৮ বছর আগে ঐতিহ্যবাহী এই দীঘির কুমির ‘কালাপাড় ও ধলাপাড়ের’ শেষ বংশধরও মারা গেছে। শত শত বছর ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আকৃষ্ট করে ছিল দীঘির মিষ্টি পানির ওই কুমির। ‘কালাপাড় ও ধলাপাড়’ নাম যেন ওই জুটির ছানাদেরকে উদ্বেলিত করে রেখেছিল। তাই মাজারের খাদেমরাও যুগ যুগ ধরে কালাপাড় ও ধলাপাড় নামে ডাকলেই ওই জুটির বংশধররা দীঘির একপ্রান্ত থেকে ছুটে ঘাটে এসে ভিড়ত। মাজারের আসা দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীরা কুমির স্পর্শ করে নিজেদের সার্থক মনে করতেন। অনেকেই আবার তাঁদের মনবাসনা পূর্ণ হওয়ায় নিজে হাতে কুমিরকে হাঁস-মুরগী খাওয়াতেন। ২০০৫ সাল থেকে এই দীঘিতে থাকা দু’টি কুমিরের মধ্যে নারী প্রজাতির কুমিরটি ডিম দিলেও তা থেকে ছানা ফুটছে না। </p> <p>দীঘির ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, মধ্যেবয়সী দুই জনে মিলে মৃত কুমিরটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দীঘির মধ্য ভাগ থেকে ভাসিয়ে ঘাটে নিয়ে আসছে। ততক্ষনে খবর পেয়ে দীঘির ঘাটে কয়েকশত নারী-পুরুষ জড়ো হয়েছেন শেষবারের মতে কুমিরটিকে দেখতে। কুমিরটি ঘাটে উঠানোর পর মাজারের খাদেম ও দর্শনার্থীদের অনেকেই অশ্রু ধড়ে রাখতে পারেনি। কেউ বা কাঁদছে হাউমাউ করে আবার কেউবা কাপড়ে চোখের জল মুছছে। খবর পেয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, থানা পুলিশ, সুন্দরবন বিভাগ ও প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মাজারে ছুটে আসেন।</p> <p>ইতিহাস থেকে জানা গেছে, হয়রত খানজাহান (রঃ) সুলতানী শাসন আমনে খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে এ অঞ্চলে আসেন। বাগেরহাটে খলিফাতবাদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর জীবনের তিনটি প্রকৃতি; তিনি চরিত্রে ধার্মীক, জনহিতৈষণা তার ধর্ম এবং শাসন ও ধর্ম বিস্তার তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। তাঁর ধর্ম এবং হিতৈষণা ও শাসন বিস্তার একসঙ্গে চলতো। খানজাহান অসংখ্য জলাশয় খনন করে জলকষ্ট দূরীভূত করেছেন। যাতায়াতের জন্য সুপ্রশস্ত এবং ছায়াবহুল রাস্তা র্নিমাণ করেছেন। নানা উপায় অবলম্বন করে কৃষিকার্যের উন্নতি সাধন করেন তিনি। এসময় তিনি ঠাকুর দীঘি নামে পরিচিত ৩৬০ বিঘা জমির ওপর বিশাল এ দীঘি খনন করেন। ওই দীঘির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ প্রায় সমান। ওই দীঘিতে তিনি ‘কালাপাড় ও ধলাপাড়’ নামে দুটি কুমির লালনপালন করতেন। দীঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে খানজাহানের মাজার। খানজাহানের মাজার ও দীঘিকে ঘিরে প্রতিবছর দুরদুরান্ত থেকে জাতিধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এখানে আসেন। অনেকে আবার তাদের মনোবাসনা পূর্ণের আশায় এখানে মানত করেন। পরে তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হলে নারী-পুরুষেরা এখানে হাঁস-মুরগী, ছাগল, সির্ণী দেয়। দীঘিতে থাকা ‘কালাপাড় ও ধলাপাড়’ এর শেষ বংশধর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গেছে। হয়রত খানজাহানের ঐতিহাসিক ওই দীঘিটি বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগুম্বজ ইউনিয়নের মধ্যে।</p> <p><img alt="1" height="307" src="https://attachments.office.net/owa/latestnews%40kalerkantho.com/service.svc/s/GetAttachmentThumbnail?id=AAMkADU0YzBhZDQ2LWU3OTYtNDA0Ny05YTAyLWYzOTI4MDlhMjQzMwBGAAAAAACH7OTe%2BDtQS5cg2I2nO2r3BwC6%2BW5bVOPwRqtI%2FfWFFohJAAAAAAEMAAC6%2BW5bVOPwRqtI%2FfWFFohJAAMCD4dqAAABEgAQAIRkcEN9q%2BFOgC2VNT9kLpc%3D&thumbnailType=2&token=eyJhbGciOiJSUzI1NiIsImtpZCI6IjczRkI5QkJFRjYzNjc4RDRGN0U4NEI0NDBCQUJCMTJBMzM5RDlGOTgiLCJ0eXAiOiJKV1QiLCJ4NXQiOiJjX3VidnZZMmVOVDM2RXRFQzZ1eEtqT2RuNWcifQ.eyJvcmlnaW4iOiJodHRwczovL291dGxvb2sub2ZmaWNlMzY1LmNvbSIsInVjIjoiY2MyYWY5MjkxZGQ4NDMzNThjMDg1ZmIyYThhMDE4M2IiLCJzaWduaW5fc3RhdGUiOiJbXCJrbXNpXCJdIiwidmVyIjoiRXhjaGFuZ2UuQ2FsbGJhY2suVjEiLCJhcHBjdHhzZW5kZXIiOiJPd2FEb3dubG9hZEAzYjc1NjcxNS03N2ZhLTRjZDAtOTU0Yy1jNjQ4NjY5NDhiODMiLCJpc3NyaW5nIjoiV1ciLCJhcHBjdHgiOiJ7XCJtc2V4Y2hwcm90XCI6XCJvd2FcIixcInB1aWRcIjpcIjExNTM4MDExMTc0MzU4MTY0MzVcIixcInNjb3BlXCI6XCJPd2FEb3dubG9hZFwiLFwib2lkXCI6XCI0MTM3ZjkwZS1lZDU1LTRiMDAtYjI1Zi0xYTcwYzJmOTI3MThcIixcInByaW1hcnlzaWRcIjpcIlMtMS01LTIxLTMxNzEyODE5NjUtOTc4OTM2MTQxLTIwMDAyNTAxNzQtMTM3NTEyODVcIn0iLCJuYmYiOjE2OTc3NDk3NTUsImV4cCI6MTY5Nzc1MDM1NSwiaXNzIjoiMDAwMDAwMDItMDAwMC0wZmYxLWNlMDAtMDAwMDAwMDAwMDAwQDNiNzU2NzE1LTc3ZmEtNGNkMC05NTRjLWM2NDg2Njk0OGI4MyIsImF1ZCI6IjAwMDAwMDAyLTAwMDAtMGZmMS1jZTAwLTAwMDAwMDAwMDAwMC9hdHRhY2htZW50cy5vZmZpY2UubmV0QDNiNzU2NzE1LTc3ZmEtNGNkMC05NTRjLWM2NDg2Njk0OGI4MyIsImhhcHAiOiJvd2EifQ.wuTs-FN8ag_aKHq-XiSH01OFMu-RwQXypTo4Z6nWJFc7cadgPOH3f4sNqWcj7-wuH4-n6TiDxy4HdLOCsIaPyG8TVVmV7VK4QMDJNRFpnYxz9ZilJMt8PiiyO2n6emdi4h3bOX40DlSLfjL7G79b3hlSfk7o52eaHTfrpynsUixRDBqisZE1bucljo7r5Sj7lmNTxe0PqydgPB8P4gP-H7e88lyQfpNhepJzPsFp0hKra8EW0ZvrezRvfBBy42unatw_tN-cfe0iYEoFQXKD1G7SPrSZ2T-6_aANuAMLA96SJGVUPjZC3XepH_YKckaXYvXIe_NuSGfyTzh_fntwdw&X-OWA-CANARY=rwrXpEbErkm04oQ_Tjp6VPBEo6bn0NsYRHQsKt_4NPRTEdV4isIGUyR9CUhgWdq9vYCL-Lhr_lk.&owa=outlook.office365.com&scriptVer=20231006004.17&animation=true" width="600" /></p> <p>মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, লোকের মাধ্যমে সে জানতে পারে দীঘির মধ্যে একটি কুমির মৃত অবস্থায় ভাসছে। খবর পেয়ে সে প্রশাসনকে জানায়। তার অভিযোগ, মাজারের খাদেম ফকির মোস্তফা তার পুকুরে প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস ধরে কুমিরটিকে আটকে রেখেছিল। পরিকল্পিতভাবে কুমিরটিকে হত্যা করা হয়েছে। সে সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক বিচারের দাবি জানান। </p> <p>খাদেম ফকির মোস্তফা জানান, কুমিরটি কিছুদিন আগে তার পুকুরে গিয়েছিল। মাজারের খাদেম হিসেবে সে তখন কুমিরটিকে খাবার দেয়। এক সপ্তাহ আগে কুমিরটি তার পুকুর থেকে দীঘিতে ফিরে আসে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে মোস্তাফা বলেন, মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকিরের সাথে তার পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। ওই বিরোধের জের ধরে তার বিরুদ্ধে কুমির মারার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।</p> <p>খুলনা বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. লুৎফর রহমান জানান, কুমিরটি আগে দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কুমিরটির এক চোখ এবং মস্তিকে সমস্যা ছিল। কুমিরটিকে প্রাণী সম্পদ বিভাগ চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছিল। এখন মৃত কুমিরটিকে দীঘি থেকে তুলে ময়নাতন্ত করা হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর কুমিরটির মৃত্যুর মূল কারণ জানা যাবে।</p> <p>বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, দীঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে মিষ্টি পানির কুমির যাতে দীঘিতে সংরক্ষণ করা যায় এজন্য প্রাণী সম্পদ বিভাগের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে। দীঘি থেকে নিয়ে পুকুরে কুমিরটিকে আটকে রাখা হয়েছে এমন তথ্য মাজারের খাদেমরা আমাকে জানায়নি। প্রধান খাদেম অভিযোগ করছে কুমিরটিকে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p> <p>সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগী বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, কুমিরের প্রজনন বাড়াতে ভারত সরকার মাদ্রাস কোকোডায়েল ব্যাংক থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশকে ৪০টি কুমির ছানা উপহার দেয়। এর মধ্যে ছয়টি কুমিরের ছানা খানজাহান (রঃ) দীঘিতে এবং পাঁচটি ঢাকা চিড়িয়াখানায় ও ২৯টি ডুলহাজরা সাপারিপার্কে অবমুক্ত করা হয়। ভারত সরকারের দেওয়া মিষ্টি পানির কুমিরের মধ্যে মাজারের ওই দীঘিতে সব শেষ দুটি ছিল। পুরুষ প্রজাতির কুমিরটি মারা যাওয়ায় এখন মাত্র নারী প্রজাতির একটি কুমির রয়েছে।</p>