<p style="text-align:justify">যশোরের বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে নাটকীয় মোড় নিয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) ম্যানেজিং কমিটির নির্ধারিত সভা থাকলেও অধ্যক্ষের গা ঢাকা দেওয়ার কারণে সভা হয়নি। নতুন সভাপতি কলেজে এসে অধ্যক্ষের রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যান। বিষয়টি নিয়ে বাঘারপাড়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্রে জানা যায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের নতুনভাবে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নামের এক কলেজ শিক্ষক। বাঘারপাড়া ডিগ্রি মহিলা কলেজের এ শিক্ষক বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুব হোসেনের ভাগনে। বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন টি এস আইয়ুবের ভাগ্নি জামাই।</p> <p style="text-align:justify">আত্মীয়তার এ যোগসূত্রে টি এস আইয়ুবের পছন্দে ও তদবিরে আসাদুজ্জামান ওই কলেজের সভাপতি মনোনীত হন। দুই মাস পার না হতেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত ২৪ ডিসেম্বর আসাদুজ্জামানকে অপসারণ করে নুরে আলম সিদ্দিকী নামের হাইকোর্টের এক আইনজীবীকে নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেন।</p> <p style="text-align:justify">নুরে আলম সিদ্দিকী কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বর্তমান কমিটির সহসম্পাদক। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা দক্ষিণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক ছিলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে যশোর ৪ আসনে বিএনপি থেকে যে তিনজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, তারমধ্যে একজন এই নুরে আলম। তার গ্রামের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের মামড়াখোলা গ্রামে।</p> <p style="text-align:justify">বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার ম্যানেজিং কমিটির নির্ধারিত সভা ছিল। সভায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী বিঘ্ন ঘটাতে পারে-এমন আশঙ্কায় কলেজ অধ্যক্ষ বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসিকে বিষয়টি অবগত করেন।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে বাঘারপাড়া উপজেলা ছাত্রদল সকালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি মিছিল বের করে। মিছিলে আগের সভাপতি আসাদুজ্জামানকে পুনরায় বহালের দাবি তোলা হয়। মিছিলটি উপজেলার সদরে প্রদক্ষিণ শেষে কলেজে ঢোকে। এরপর মিছিল থেকে কয়েকজন কলেজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। শিক্ষকদের যার যার মত করে চলে যাওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে আগত সব কলেজ শিক্ষক বের হয়ে যান। অধ্যক্ষ মহোদয় অন্য ভবনে গা ঢাকা দেন। দুপুর ১২ টার দিকে কলেজের নতুন সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা সামাল দিতে আগে থেকে পুলিশের একটি বড় টিম সেখানে উপস্থিত ছিল। </p> <p style="text-align:justify">কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন, ম্যানেজিং কমিটির অন্য দুই সদস্য মাসুদ আলম টিপু ও আব্দুল হাই মনা উপস্থিত না হওয়ায় নুরে আলম সিদ্দিকী কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে যান। এরপর তিনি বাঘারপাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল বিশ্বাসের কবর জিয়ারত করে বাঘারপাড়া ত্যাগ করেন।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের নির্ধারিত সভা না হওয়া ও নুরে আলম সিদ্দিকী কলেজে প্রবেশ করতে পারা নিয়ে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মন্তব্য করেন, গত দুইদিন ধরে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের যে সব নেতাকর্মী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নুরে আলম সিদ্দিকীকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না, তার কি হবে। তাহলে কি কেন্দ্রীয় বিএনপিতে তার অবস্থান ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবের থেকে ভালো? আবার অনেকেই মন্তব্য করেছেন নুরে আলম যশোর ৪ আসনে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নুরে আলম সিদ্দিকী এ বিষয়ে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন সভা আহ্বান করেছেন। আমি সময়মতো কলেজে উপস্থিত হয়েছি। কী কারণে অধ্যক্ষ ও অন্যান্য সদস্য উপস্থিত হননি তা আমার কাছে স্পষ্ট না। তবে শুনেছি বিএনপির এক বিশেষ নেতার কিছু কর্মীবাহিনী কলেজে সকালেই আতঙ্ক সৃষ্টি করে। যে কারণে হয়তো অধ্যক্ষ সাহেব গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে বিষয়টি আমি জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ে লিখিতভাবে জানাব।’ </p> <p style="text-align:justify">অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন কেন কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন তা জানার জন্য তার মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।</p>