<p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ম‌হেড়া পু‌লিশ ট্রেনিং সেন্টা‌রে ছয় মাসমেয়াদি প্রশিক্ষণরত ১৪ জন কনস্টেবলকে স্থায়ীভাবে অব‌্যাহ‌তি দেওয়া হ‌য়েছে। গত বৃহস্প‌তিবার পু‌লিশ ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমান স্বাক্ষরিত আদে‌শে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। আদে‌শে বলা হ‌য়ে‌ছে, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে ২ জানুয়া‌রি অপরাহ্নে প্রশিক্ষণ থেকে (১৪ কনস্টেবলকে) স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’</p> <p>এদিকে অব্যাহতি পাওয়া প্রশিক্ষণরত কনস্টেবলরা তীব্র শীতের মধ্যে রা‌তেই ট্রেনিং সেন্টার ত‌্যাগ ক‌রে যাঁর যাঁর বাড়িতে রওনা দেন।</p> <p>অব্যাহতি পাওয়া প্রশিক্ষণরত কনস্টেবলরা হলেন নাটোরের মিনাজুল মোন্না ওরফে মামুন, আব্দুল মান্নান, নওগাঁর জিহাদ হাসান, খুলনার শেখ নাঈম রহমান, যশোরের পাভেল ও ফারদিন, নোয়াখালীর সায়েম ও শহিদুল, গোপালগঞ্জের ইমান, ফরিদপুরের রমজান মিয়া, রাজশাহীর পারভেজ, শরীয়তপুরের রিফাত ও ছাইদুল ওরফে ছাইদুর এবং মুন্সীগঞ্জের তাওহীদ আলম।</p> <p>ম‌হেড়া পু‌লিশ ট্রেনিং সেন্টার সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, গত বছরের ১৩ জুন ৫৪তম ব্যাচের ৭৯৩ জন কনস্টেবল ছয় মাসমেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ নিতে মহেড়া ট্রেনিং সেন্টারে আসেন। ২৪ জুন থে‌কে তাঁদের মৌ‌লিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এর মধ্যে ছয়জন অসুস্থ হওয়ায় তাঁ‌দের বা‌দ দেওয়া হয়। পরে ৭৮৭ জন কনস্টেবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ১৯ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণরত ট্রেনিং রিক্রুট কনস্টেবলের (টিআরসি) সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠা‌ন হওয়ার কথা থাকলেও তা‌রিখ পাল্টে ১২ জানুয়া‌রি করা হয়।</p> <p>‘বিষয়টি খুবই কষ্টের’ : অব্যাহতি পাওয়া খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেতকানি শেখ সরদারপাড়া গ্রামের শাহানুর আলমের ছেলে নাঈম রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি হয়েছে। আমার গ্রাম ও নিজ নামের আগে শেখ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট হয়েছে। ওই রিপোর্ট সন্তোষজনক না হওয়া এবং আওয়ামী লীগ সমর্থন করায় আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>অব্যাহতি পাওয়া নোয়াখালীর গ্রামানন্দি গ্রামের জালাল আহমেদের ছেলে শহিদুল বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলে তারা নিজেরাই সঠিক কারণ জানাতে না পেরে আমাকে বলেছে ওপরের নির্দেশে অব্যাহতি দেওয়া হলো। কর্তৃপক্ষ উল্টো আমার কাছে অব্যাহতির কারণ কী লেখা যায়, তা জানতে চেয়েছিল। আমি চাকরি পেয়েছি সাধারণ কোটায়। এর পরও আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। বিষয়টি খুবই কষ্টের।’</p> <p>নাটোরের সিংড়া উপজেলার জয়নগর গ্রামের বিপ্লব সরদারের ছেলে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গত বছরের জানুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পেয়েছিলাম। মাথায় শীতের টুপি পরা এবং ১৪ মিনিট বিলম্বে ট্রেনিং সেন্টারে ফলিনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় অব্যাহতি পাওয়ার মতো ঘটনা নয়।’ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হওয়ার অজুহাতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।</p> <p>শেখ নাঈমের বাবা শেখ শাহানুর আলম বলেন, ‘১৯১ দিন ট্রেনিং শেষ করার পর নিজের ছেলেসহ ১৪ ছেলের চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনা একজন বাবা হিসেবে ভালোভাবে নিতে পারছি না। রাজনৈতিক কারণে ওপরের নির্দেশে তাদের চাকরি চলে গেছে বলে জানতে পেরেছি।’ তিনি সরকারের কাছে ১৪ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কন‌স্টেবল জানান, পা‌সিং প্যারেড হওয়ার কথা থাকলেও তা‌রিখ প‌রিবর্তন করা হ‌য়েছে। হঠাৎ ২ জানুয়ারি অব‌্যাহ‌তির চি‌ঠি দেওয়া হয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো কাজ না ক‌রলেও তাঁ‌দের চা‌ক‌রি থে‌কে অব‌্যাহ‌তি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকা‌রের সময় নিয়োগ হওয়ায় অব‌্যাহ‌তি দেওয়া হয়েছে।</p> <p>এ বিষ‌য়ে ম‌হেড়া পু‌লিশ ট্রেনিং সেন্টা‌রের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমানের মোবাইল ফোনসেট বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। </p> <p>ম‌হেড়া পু‌লিশ ট্রেনিং সেন্টারের ডিআইজি মোহাম্মদ আশফাকুল আলম ও পু‌লিশ সুপারের (প্রশাসন) মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা কল রিসিভ করেননি।</p> <p> </p>