<p>গত বছরের জুলাই ও আগস্টে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটায় ছাত্র-জনতা। জনতার ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন এবং সরকার পতন পর্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। ওই আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন।</p> <p>কালের কণ্ঠের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভক্ষণে প্রিয়জন হারানো এসব সাংবাদিক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে দৈনিক কালের কণ্ঠ।</p> <p>শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবারকে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সম্মাননা ও দুই লাখ টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়।</p> <p>বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবার প্রতি আমার শুভেচ্ছা। আজকে ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সাংবাদিকদের পেছনে সবসময় আমি দাঁড়াই। একটাই কারণ, আমি যখন এই মিডিয়া করেছিলাম, তখন সাংবাদিকদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমার মনে আছে, সাগর-রুনি যখন মারা গেলেন, তখন তাদের ফ্যামিলিকে ১৫ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছিলাম। যে পাঁচজন সাংবাদিক মারা গেছেন, পাঁচজনের নামে আমি এক কোটি টাকা দিয়ে দেব। এটা যে থেকে প্রফিট হবে, এটা দিয়ে আপনাদের বাচ্চাদের খরচ চলবে। আমি সব সময় সরাসরি সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াই। আমার সঙ্গে যারা আছেন, তারা সহযোগিতার হাত বাড়ান। আমি তো সব সময় পারি না। যে কোনও ভাবেই হোক আমি পাশে দাঁড়াই। সংবাদিকের উত্তরোত্তর মঙ্গল হোক এটা মনে প্রাণে আমি কামনা করি। এই পাঁচ জন সাংবাদিকসহ হাজারো জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছি। এ দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।</p> <p>গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে তিনি বলেন, আজকে মিডিয়াতে কোনো বাধা নেই। যার যা মন চায় তাই লিখতে পারে। ডক্টর ইউনূসও বলেছেন, আপনারা যা পারেন সমালোচনা করেন। আমি বলব মিথ্যা না, সত্য যত অপ্রিয় হোক, সেটা আপনারা বলেন ও লিখেন। এতে সমগ্র দেশ সমগ্র জাতি উন্নতি হবে। আমি নিহত এই পাঁচ সাংবাদিকের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। ইনশাল্লাহ। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।</p> <p>সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, ‘নিহত সাংবাদিকদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাদের অবদানে আজ আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। তাদের অবদান ভুলে যাওয়ার নয়।’ তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের দাবি করেন।</p> <p>অনুষ্ঠানে শহীদ সাংবাদিক হাসান মেহেদির সহধর্মিনী পপি বলেন, আমরা সুখেই দিন কাটাচ্ছিলাম। খুব কষ্ট দিয়ে আমার স্বামীকে মারা হয়েছে। আমার দুইটা মেয়ে। বড় মেয়েটা বাবাপাগল ছিল। সবসময় বলে বাবা আসেনা কেন? আশেপাশের মানুষকে প্রশ্ন করে, বাবা আসবে কবে? আমার মেয়ের প্রশ্নের আমি উত্তর দিতে পারি না। তারা কি গুলি করার আগে একটাবার ভাবল না, এই সন্তানদের আমি কিভাবে মানুষ করবো?</p> <p>শাকিলের বাবা বলেন, ‘আমার আজকে এখানে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল না। হয়েছি কারণ আমার একমাত্র শাকিল চলে গেছে। এই সন্তানকে হারিয়ে আমি আজকে নিঃস্ব। আল্লাহপাক তাকে কবুল করে নিয়েছে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা যে কাজে নিয়োজিত আছেন, তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য অনুরোধ করবো। শাকিলকে যেভাবে আপনারা স্মরণ করলেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।’</p> <p>এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক হাসান হাফিজ, নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন পাভেল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের ও নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ম্যানেজিং এডিটর রুহুল আমিন রাসেল, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেলসহ অনেকে।</p>