<p style="text-align:justify">নদীর পানিতে পলিথিন ও প্লাস্টিকের উপস্থিতি বর্তমানে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, মাছের স্টমাকে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। ফলে আমরা এই মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানব স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি বয়ে আনছি। দেশে পলিথিন ও প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সমন্বিত কাজ হচ্ছে না। ফলে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দেশের সবচেয়ে বেশি বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে। কিন্তু রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম নিম্নমানের। একদম পরিবেশবান্ধব নয়।</p> <p style="text-align:justify">সেখানে প্লাস্টিকস নিয়ে সম্মিলিত পরিকল্পনার ছাপ পাওয়া যায় না। সভ্যতার বিভিন্ন সময়কে বিভিন্ন যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাম্র ও লৌহ যুগের পর বর্তমানে আমরা প্লাস্টিক যুগে বসবাস করছি। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে এই প্লাস্টিক পলিথিনের ব্যবহারে নানামুখী ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। এসব প্লাস্টিক ও পলিথিন গিয়ে মিশছে নদীতে এবং কৃষি জমিতে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশে যাচ্ছে। এ ছাড়া ভারত, নেপাল ও চীনের বর্জ্য গঙ্গা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের এ ধরনের অবাধ ব্যবহার নানা মাত্রায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে।</p> <p style="text-align:justify">এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুস, কিডনিজনিত রোগ ও ক্যান্সারের উপক্রম ঘটাচ্ছে। এটি মানবদেহের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সমুদ্রের তলদেশে পলিথিন-প্লাস্টিকের স্তর যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী ৫০ বছর পর সমুদ্রে মাছের চেয়ে পলিথিনের পরিমাণ বেশি হবে।</p> <p style="text-align:justify">দেশে পলিথিক ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা এবং প্লাস্টিকের যৌক্তিক ব্যবহারে নামিয়ে নিয়ে আসার জন্য দুইভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রথমত, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করা। এর জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর প্রয়োগ প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, সচেতনতা বাড়ানো। কমিউনিটি উন্নয়ন করা। সেই সচেতনতা হতে হবে উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি প্লাস্টিকস ও পলিথিনের ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষকে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে ব্যবস্থাপনা খুব দুর্বল। রিসাইকেল প্রায় হয় না বললেই চলে। উৎপাদন থেকে বিপণন সব পর্যায়ে আইনগতভাবে কঠোর হতে রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা আরো জোরদার করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহারে অভ্যস্ত। এটির ব্যবহার কমাতে হলে বিকল্প তৈরি করতে হবে। আবার অবশ্যই সেটি স্বল্পমূল্যে টেকসই হতে হবে। সহজে বহনযোগ্য পরিবেশবান্ধব পাট, তুলা, উল, শণ, বেত, কাগজ ও কাপড়ের মতো ব্যাগগুলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বাজারগুলোতে ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর কর আরো বাড়াতে হবে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>লেখক :</strong> অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</p>