বিতর্কিতদের স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল হচ্ছে

আশরাফুল হক রাজীব
আশরাফুল হক রাজীব
শেয়ার
বিতর্কিতদের স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল হচ্ছে

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ পর্যালোচনায় যদি দেখা যায়, স্বাধীনতাবিরোধী কেউ পুরস্কার পেয়েছেন তাহলে তা বাতিল করা হবে।

এরই মধ্যে জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সুপারিশ করেছে গত ২৪ আগস্ট। আর এ সুপারিশ গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পেয়ে ফেরতও এসেছে।

এখন পুরস্কার বাতিলের গেজেট জারি হবে।

জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে আদালতের রায়ের আলোকে। তিনি ছাড়াও বিভিন্ন সময় যাঁদের এ মহামূল্যবান পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করা হবে। স্বাধীনতাবিরোধী কেউ এ সম্মান পেতে পারেন না।

প্রয়োজনে তা বাতিল করা হবে। কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের পুরস্কার বাতিলের সুপারিশ আসার পর বিএনপি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। অথচ জিয়া-খালেদা দম্পতির ছেলেরা এ পুরস্কার গ্রহণ করেননি। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক থাকে।
যাঁদের মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া হয়, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এসব পুরস্কার গ্রহণ করেন অনেক ভালোবাসা আর মমতায়। অথচ ২০০৩ সালের এ পদক গ্রহণ  করেননি তারেক বা কোকো। জিয়াউর রহমানের বীর-উত্তম খেতাব বাতিল করা হবে কি না জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই খেতাব যখন দেওয়া হয় তখন দৃশ্যত দেশবিরোধী ভূমিকায় ছিলেন না জিয়া। তাই তা বাতিলের প্রশ্ন অবান্তর।

স্বাধীনতা পুরস্কার হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার।

১৪টি ক্ষেত্রের যেকোনোটিতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখলে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে—স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পল্লী উন্নয়ন, সমাজসেবা বা জনসেবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জনপ্রশাসন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সরকার নির্ধারিত অন্য যেকোনো ক্ষেত্র।

স্বাধীনতা পুরস্কারের প্রার্থী বাছাইয়ের সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচনা করা হয়। এই ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্বই আমলে আনা হয়। বিদেশিদেরও এ পদক দেওয়া হয়। কিভাবে স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা তৈরি হয় জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পরের বছরের পুরস্কারে ভূষিত করার জন্য সব মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব আহ্বান করে। অনেক সময় সম্ভাব্য নাম চাওয়া হয় বিভিন্ন সময় স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাছেও। এসব প্রস্তাব বাছাই করে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটি। তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব যায় জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে। তাদের প্রস্তাবটিই চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। মনোনীত কোনো ব্যক্তি পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বা নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে না চাইলে তাঁকে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আর মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্তদের উত্তরাধিকারী না পাওয়া গেলে সেই পুরস্কার জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়। পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণে নির্মিত ৫০ গ্রাম ওজনের মেডেল ও সম্মাননাপত্রের সঙ্গে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়।

স্বাধীনতা পুরস্কার চালু হয় ১৯৭৭ সালে। বিভিন্ন সময় এ পুরস্কার নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। ১৯৮০ সালে শর্ষীনার পীর মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখার জন্য। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এ পুরস্কার দেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেও। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার জন্যই জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁকে এ পদক দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট এ পুরস্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা কমিটি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু শর্ষীনার পীরই নন, আরো অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বাবার হত্যাকাণ্ডের পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শর্ষীনার পীরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অনেক নৃশংসতার সঙ্গে শর্ষীনার পীর জড়িত ছিলেন। তাঁর নৃশংসতার বর্ণনা রয়েছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস’ গ্রন্থের অষ্টম খণ্ড এবং ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়’ গ্রন্থে। স্বাধীনতা পুরস্কার  দেওয়া শুরুই হয়েছে মাহবুব আলম চাষীকে দিয়ে। অথচ এই চাষী ১৯৭৫ সালের ষড়যন্ত্রকারী ও ঘাতক। পাকিস্তানের অনেক স্বপ্নদ্রষ্টাও এ সম্মান পেয়েছেন। তাঁরা চাননি বাংলাদেশ সৃষ্টি হোক। তাহলে তাঁদেরকে কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হলো এ প্রশ্ন রেখে শাহরিয়ার কবির বলেন, পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা হওয়া সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা না হওয়া। অনেক মুসলিম লীগারকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। অথচ মুসলীম লীগ সব সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। একজন আপাদমস্তক মুসলিম লীগার কিভাবে স্বাধীনতা পুরস্কার পান? আমরা অনেক দিন থেকে বলে আসছি, যেসব বিতর্কিত ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করা হোক। এখনো অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদেরকে এ সম্মান দেওয়া উচিত। স্বাধীনতা পুরস্কারের পাশাপাশি অন্যান্য জাতীয় পুরস্কারও পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার বলে জানান তিনি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কার কথাটির মধ্যেই নিহিত আছে কাদের এ পুরস্কার দেওয়া যাবে। কাজেই স্বাধীনতায় যাঁরা বিশ্বাস করেন না, তাঁদের কিভাবে এ পুরস্কার দেওয়া হলো? যাই হোক বিষয়গুলো নিশ্চয়ই পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বিবেচনায় নেবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ