সংযুক্ত আরব আমিরাতে গাড়ি চালিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা জাকির হোসেনের দিনকাল। আরো নির্ভার, স্বচ্ছন্দ জীবনের আশায় স্বপ্ন বোনেন ইতালি যাওয়ার। এক বন্ধুর মাধ্যমে ইতালির ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করেন। গ্রামের বাড়িতে জমি বিক্রি করে ১৩ লাখ টাকায় নুলস্তা (ওয়ার্ক পারমিট) হাতে পান।
ভিএফএসে জিম্মি লাখো ভিসাপ্রার্থী
হায়দার আলী, জয়নাল আবেদীন ও তৌফিক হাসান

শুধু জাকির হোসেন নন, এমন লাখো ইতালি গমনেচ্ছু মানুষের ঘরে ঘরে এখন শুধুই কান্না, হতাশা আর হাহাকার। গত ২৭ মার্চ ঢাকাস্থ ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূতের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে এক লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি ভিসাপ্রার্থীর পাসপোর্ট।
কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ভিসাপ্রত্যাশী এরই মধ্যে বিপুল অর্থ ইতালিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এক হিসাবে জানা গেছে, শুধু নুলস্তা পেতেই এক লাখ ১১ হাজার ভিসাপ্রার্থীর কাছ থেকে ইতালিতে চলে গেছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার। এমনকি দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে ইতালির ভিসার প্রত্যাশায় ঘুরে ঘুরে দিন কাটছে তাঁদের। ফলে তাঁদের উপার্জনও থমকে গেছে। সাধারণত ইতালি গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কৃষি ভিসার আবেদন করে থাকেন। বাকি ৪০ শতাংশ স্পন্সর ভিসার। কৃষি খাতে ভিসার জন্য ১৪ লাখ টাকা এবং স্পন্সর ভিসার জন্য ১৯ লাখ টাকা লাগে। তবে নুলস্তা পেতে সংশ্লিষ্ট কম্পানিতে ৫০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হয়। সে হিসাবে এরই মধ্যে নুলস্তা পেতে ইতালিতে চলে গেছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আট হাজার ৮৮০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। এ ছাড়া ভিএফএসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাবদ এসব কর্মীর খরচ হয়েছে অন্তত ২২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে আরো কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা দালালদের পকেটে ঢুকেছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ইতালিতে চলে গেলেও দেশে পড়ে আছেন হতভাগ্য ভিসাপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা পড়েছে আরো ৯ হাজার ৬০০টি। ফলে ইতালিতে কর্মী পাঠানো ছাড়াই নুলস্তা বাবদ আরো বিপুল অর্থ চলে গেছে। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপেও জানা গেছে, কেউ কেউ অর্ধেকের বেশি টাকা এরই মধ্যে ইতালিতে সংশ্লিষ্ট কম্পানি এবং আইনি পরামর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিশোধ করে রেখেছেন।
ঢাকাস্থ ইতালিয়ান দূতাবাসের সূত্র মতে, ২০২২ সালের ৩৫ হাজার ও ২০২৩ সালের ৭৬ হাজার নিয়ে মোট এক লাখ ১১ হাজার পাসপোর্ট জমা নেয় ভিএফএস গ্লোবাল। গত ২৭ মার্চ ভিসাপ্রার্থীদের মানববন্ধনের পর ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রোর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আটকে থাকা পাসপোর্ট বিতরণের আশ্বাস দেন। এর পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। উল্টো দিন দিন বড় হচ্ছে আটকে থাকা পাসপোর্টের সংখ্যা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ভিএফএসের মাধ্যমে সব মিলে ২৫০ থেকে ৩০০টি ভিসা আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। বিপরীতে ভিসা নিষ্পত্তির পর পাসপোর্ট বিতরণ করা হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ১৫০টি।
অভিবাসন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নুলস্তার সত্যতা যাচাইয়ের কারণে দীর্ঘসূত্রতার দোহাই দেওয়া হলেও মূলত কাজটি খুবই সহজ। এটি যাচাই করা মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ব্যাপার। এর জন্য সাত থেকে আট মাস বা এক বছর সময় লাগাটা অযৌক্তিক। এর ফলে বৈধ পথ ছেড়ে অবৈধ পথেই পা বাড়াচ্ছেন ইতালি গমনেচ্ছু কর্মীরা। এর দায় ভিএফএস গ্লোবাল এড়াতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভিএফএস গ্লোবালের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। খুব দ্রুত এগুলোর সমাধান হবে।’ বিদেশগামী কর্মীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
ইউরোপের শ্রমবাজারে ভিসা প্রক্রিয়ার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভিএফএস গ্লোবাল। বাংলাদেশসহ ১৪৭টি দেশে তারা ভিসা প্রক্রিয়ার কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে তারা তাদের সার্ভিস দিয়ে থাকে। তবে ঢাকা বাদে বাকি দুই জেলায় শুধু প্রিমিয়াম সার্ভিস দেয় ভিএফএস গ্লোবাল। ঢাকায় প্রিমিয়াম সার্ভিসের পাশাপাশি সাধারণ সার্ভিসও চালু রয়েছে। তবে প্রিমিয়াম সার্ভিসের নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি। প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রিমিয়াম সার্ভিসে যে সেবা দিচ্ছে, তার থেকে অনেক অনুন্নত সেবা দিয়েই কর্মীপ্রতি তিন হাজার ৮৯৯ টাকা বেশি নিচ্ছে ভিএফএস, যা বছরে গিয়ে দাঁড়ায় সাত কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টাকা।
ভিসার আশায় মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকা ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, ঠিক কী কারণে ভিসা পেতে এই দীর্ঘসূত্রতা? এর উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধান চালায় কালের কণ্ঠ। এতে উঠে আসে দালালচক্রের সঙ্গে যোগসাজশে ভিএফএসের অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহতা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিসা আবেদনের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেও কর্মীপ্রতি গুনতে হয় লাখ টাকা।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে কালের কণ্ঠ’র হাতে আসে একটি নথি। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট রাত ১২টা ৪৯ মিনিট থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত স্লট ওপেন করে ৭৮টি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং দেওয়া হয়। ভিএফএসের ব্যবস্থাপক সাবিকুন্নাহারের ইউজার আইডি (ভিএফএস গ্লোবাল সাবিকুন্নাহ) ব্যবহার করা হয়। এমনকি সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয় একই আইপি অ্যাড্রেস (১০.১৫০.১০০.১৯) থেকে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টের একটি শিটও কালের কণ্ঠ’র হাতে এসে পৌঁছেছে। এখানে দেখা যায়, ‘এন্ট্রি নেম’-এর জায়গায় কোনো কর্মীর নাম নেই। সব জায়গায় লেখা ‘এলোকেশন ফর সেন্টার’। এমনকি ‘এন্ট্রি কলাম নেম’-এর জায়গায় ‘টোটাল সিটস’ লেখা রয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে অর্থাৎ অফিস চলাকালে স্লট ওপেন করা হয়ে থাকে। মধ্যরাতে স্লট খোলার বিষয়টি অস্বাভাবিক। এতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট জালিয়াতিতে ভিএফএসের যুক্ত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ভিএফএসের অনিয়মের এখানেই শেষ নয়। সাধারণত চট্টগ্রাম কার্যালয়ে দিনে ২০ জনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। গত ৬ মে অতিরিক্ত ২০ জন ভিসাপ্রত্যাশী ভিএফএস চিটাগংয়ের অসংগতিপূর্ণ তথ্য সংবলিত মেসেজ পান, নিয়ম ভেঙে তাঁরাও একই দিনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সুযোগ পান।
অনুসন্ধান বলছে, ভিসাপ্রার্থীদের অনলাইনে আবেদনের পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে ভিএফএস। একজন ভিসাপ্রার্থীকে নুলস্তা পাওয়ার পর পাসপোর্ট জমা দিতে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে ভিএফএসের কাছে আবেদন করতে হয়। এ সময় আবেদনকারীর মোবাইল ফোনে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) আসে, যার মেয়াদ থাকে তিন মিনিট। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, তাঁদের ফোনে এই ওটিপি আসতে ৯ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। ততক্ষণে আবেদনের প্রক্রিয়াটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অথচ দালালের মাধ্যমে আবেদনে ওটিপির দরকার পড়ে না।
গত ১২ মে বিকেল ৩টায় ছদ্মবেশে আবেদনকারী সেজে রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরে নাফি টাওয়ারে অবস্থিত ভিএফএস গ্লোবালের কার্যালয়ের সামনে যায় কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানী দল। কিছুক্ষণ অবস্থান করতেই দেখা মেলে ওয়াহাব শিকদার নামের এক দালালের। জানতে চান অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগবে কি না। হ্যাঁ-সূচক জবাব দিতেই তিনি নিয়ে যান জমাদ্দার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি অফিসের নিচে। সেখানে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর বস মামুন শেখের সঙ্গে।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে কী করতে হবে জানতে চাইলে মামুন শেখ নিজ থেকেই একে একে বলতে থাকেন করণীয় কী। তিনি এ সময় বলেন, ‘নুলস্তা যদি সঠিক হয় তাহলে আপনারা ডেট পাবেন। আমি আপনাকে বলি, মেইল করতে পয়সা লাগে না। কিন্তু আপনার প্রক্রিয়া জানতে হইব। লোক থাকতে হইব। আমরা ২৫ হাজার টাকা নিই। প্রথম যেদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেব সেদিন আমরা পাঁচ হাজার টাকা নেব। বাকি ২০ হাজার টাকা আমরা পরে নিই। টাইম আমার ১৫ দিনও লাগে ২০ দিনও লাগে। কিন্তু আমরা ১০০ শতাংশ পাই।’ মামুন যে এরই মধ্যে অর্থের বিনিময়ে অনেককে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইয়ে দিয়েছেন, এর কয়েকটি নমুনাও দেখালেন।
ভিসার আশায় ঘরে ঘরে হাহাকার
ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাচ্ছেন বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী। এ তালিকায় অন্যতম অবস্থান বাংলাদেশের। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রে ডুবে মারা যান আটজন বাংলাদেশি। সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ‘ডিক্রেটো ফ্লুসি’র অধীনে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিচ্ছে ইতালি। ইতালিতে সাধারণত বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা অনেক বেশি। বৈধ পথে সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় অনেকের মনে আশার সঞ্চার হলেও ভিএফএসের কাছে জিম্মি হয়ে লাখো কর্মী এখন হতাশায় নিমজ্জিত। ফলে অনেকে আবার পা বাড়াচ্ছেন অবৈধ পথে।
১৩ মে সরেজমিনে গেলে ভিএফএস গ্লোবাল কার্যালয়ের সামনে কথা হয় সৌদিপ্রবাসী মানিকগঞ্জের সিংগাইয়ের বাসিন্দা শাহিন খানের সঙ্গে। ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে নুলস্তা পেয়েছিলেন। এরপর ভিসা পেতে সৌদি থেকে দেশে ফিরে গত বছরের ৮ অক্টোবর পাসপোর্ট জমা দেন ভিএফএসে। কদিন পর পর খোঁজ নিতে আসেন। এদিনও তিনি হতাশ হয়ে বের হন ভেতর থেকে।
শাহিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৯ মাসেও পাসপোর্ট ফেরত পাইনি। সামনের মাস পর্যন্ত সৌদি আরবের ভিসা রয়েছে। এখন যদি আমার ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দেয় তা-ও সৌদি যেতে পারব। নইলে দুই কুলই হারাতে হবে। পাসপোর্টের আশায় এ পর্যন্ত অনেকবার এসেছি। তাদের কাছে এলে বলে—আমরা আপনাকে জানাব, তখন আসবেন। এখন কবে যে জানাবে সেটাই তো বলে না। আগামী মাসের ৬ তারিখের আগে যদি আমি পাসপোর্ট ফেরত না পাই, তাহলে আমার সব দিক শেষ হয়ে যাবে।’
দিনভর সেখানে অবস্থান করে আরো কয়েকজন ভুক্তভোগীর দেখা পায় কালের কণ্ঠ। তাঁদের মধ্যে আছেন সিংগাইরের আরেক ভুক্তভোগী মো. শরিফ। তিনি বলেন, ‘আমি ইতালি যাব বলে এখন কোনো কাজে যুক্ত হতে পারছি না। ৯ মাস ধরে আমার পাসপোর্ট আটকে রয়েছে। হয় আমাদের ভিসা দিক, না হয় পাসপোর্টগুলো ফেরত দিয়ে দিক। পাসপোর্ট ফেরত দিলেও আমরা অন্য দেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারি। এখন তো কোনো কিছুই করতে পারছি না।’
শরীয়তপুরের বাসিন্দা মাসফিক জামান বলেন, ‘আমরা এলে শুধু বলে, পাসপোর্ট ফেরতের মেসেজ যেদিন আসবে সেদিন আসবেন। আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতেই দেয় না। কবে যে পাসপোর্ট ফেরত পাব তারও কোনো ধরনের তথ্য তারা দিচ্ছে না। আমরা না যেতে পারছি ইতালি, না দেশে কিছু করতে পারছি। সব জায়গায় টাকা-পয়সা দিয়ে আমরা বসে আছি।’
দুবাইফেরত নোয়াখালীর জাকির হোসেন জানান, দালালকে টাকা দিয়েও পাসপোর্ট ফেরত পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সময় এক দালালকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এখন সে ইতালি চলে গেছে। আমার পরিচিত একজন ২০ হাজার টাকা দিয়ে পাসপোর্ট বের করতে পেরেছে। কিন্তু সে আমাকে সেই দালালের পরিচয় দিচ্ছে না। আমি জমি বিক্রি করে ১৩ লাখ টাকা দিয়ে নুলস্তা নিয়েছি। ভিসা না পেলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।’
ভিএফএসের প্রিমিয়াম সার্ভিসের নামে বছরে লোপাট ৭ কোটি টাকা
ভিএফএস গ্লোবালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিসা প্রসেসিং বাবদ সাধারণ সার্ভিসে ১৭ হাজার ৯৮০ টাকা এবং প্রিমিয়াম সার্ভিসে ২২ হাজার ৩১৮ টাকা নিয়ে থাকে। প্রিমিয়াম সার্ভিসে কর্মীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি ছবি তোলা এবং ফরম পূরণ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে একটি মাফিন কেক, লেক্সাস বিস্কুট ও ফ্রুটিকা জুস দিয়ে আপ্যায়ন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রিমিয়াম সার্ভিসের মধ্যে একটি বড় সার্ভিস হলো হোম ডেলিভারি। অর্থাৎ কেউ যদি বাসা থেকে তার কাগজপত্র ভিএফএস গ্লোবালে পাঠিয়ে দিতে চায় এবং তার পাসপোর্ট বাসায় দিয়ে যাবে এই সার্ভিস নিতে চায়, তবে সে এই সার্ভিসটি নিতে পারবে।
সেবার মানে বড় ফারাক থাকার পরও ভারতের চেয়ে কর্মীপ্রতি তিন হাজার ৮৯৯ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশে। দেশে প্রতিদিন তিনটি শহরে ৭০ জনকে প্রিমিয়াম সার্ভিস দিয়ে থাকে ভিএফএস গ্লোবাল। মাসে ২২ দিন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ থেকে দেখা যায়, প্রিমিয়াম সার্ভিসের নামে প্রতিদিন দুই লাখ ৭২ হাজার ৯৩০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, যা প্রতি মাসে গিয়ে দাঁড়ায় ৬০ লাখ চার হাজার ৪৬০ টাকা এবং বছরে সাত কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিসাপ্রত্যাশীদের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সরবরাহ করে না ভিএফএস। অ্যাপয়েন্টমেন্ট কবে পাবেন, তাঁদের পাসপোর্ট এত দিন আটকে রাখার কারণ, আদৌ ভিসা সরবরাহ করা হবে কি না—এসব বিষয়ে ভিসাপ্রত্যাশীদের কিছুই অবগত করে না সংস্থাটি। এমনকি ভিএফএসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য খুদে বার্তা ছাড়া আর কোনো মাধ্যমও নেই। ফলে মাসের পর মাস এমন দোটানায় পড়ে নাজেহাল হয় আবেদনকারী বা তাঁর পরিবার।
সেবার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে আরো তারতম্য লক্ষ করা গেছে। ভিএফএস গ্লোবাল ভারত ও বাংলাদেশের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশে ছয় মাসের মধ্যে নুলস্তার মেয়াদ থাকলে ভিএফএস গ্লোবালে আবেদন করতে পারে। তবে ভারতে নুলস্তার মেয়াদ ১৫ দিনের বেশি হয়ে গেলে তারা সরাসরি ভিএফএস গ্লোবালের অফিসে যোগাযোগ করতে পারে। সে সময় তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়। ভারতে ভিএফএস গ্লোবালের ডাইনামিক ডিজিটাল ভেরিফিকেশন নামের একটি সফটওয়্যার রয়েছে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আবেদনকারীরা তাঁদের ভিসা কার্যক্রমের কাগজপত্রে কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে তা ভিসা প্রক্রিয়ার মধ্যে ঠিক করে ফেলতে পারেন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই সফটওয়্যার আনা হয়নি। ভারতে একজন কর্মীর ভিসা প্রক্রিয়া হতে সময় নির্ধারণ করা হয় ৯০ দিন, অর্থাৎ তিন মাস। আর বাংলাদেশে ভিসা প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণ করা হয় ১২০ দিন, অর্থাৎ চার মাস।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে ভিএফএস কার্যালয়ে গেলে কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। একাধিকবার চেষ্টার পর ফোনে পাওয়া যায় ভিএফএস গ্লোবালের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শান্তনু ভট্টাচার্যকে। মধ্যরাতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট চালু করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ‘এ রকম স্লট ওপেনই হয়নি। এই তথ্য সঠিক নয়। স্লট কখনোই ম্যানুয়ালি ওপেন হয় না।’
চট্টগ্রামে অতিরিক্ত ২০ জনের অ্যাপয়েন্টের বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, ‘এভাবে বললে তো হয় না।’ এরপর এ বিষয়ে কথা বলতে আপত্তি জানান তিনি। তবে তিনি এ বিষয়ে সরাসরি অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাঁরা অনিয়মের পথ ধরে যাচ্ছেন তাঁরা ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দালালকে অর্থ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা বৈধভাবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ইতালি যেতে চান, তাঁদের জন্য যে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করা হচ্ছে তা বৈধ পথের অভিবাসনের একটি বড় অন্তরায়। এ ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকার বিএমইটির মাধ্যমে এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত সমাধান বের করতে পারে। আমাদের আইনি ব্যবস্থা আছে। সেটার প্রয়োগ করতে হবে। সরকার চাইলে অবশ্যই এর প্রতিকার আসবে।’
সম্পর্কিত খবর

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা
খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই দশক আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে পৃথক আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এসব আবেদন গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ছিল বলে সাংবাদিকদের জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী ছিলেন তিনি।
গত বছর ১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বলা হয়, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ। তাই বিচারিক আদালতের ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো। এ রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ বিচারিক আদালত যাঁদের সাজা দিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
খালাসের এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘আপিল করা উচিত’ বলে সেদিন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের দাবি, এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

সংস্কারে এখনো লিখিত মতামত দেয়নি বিএনপিসহ বড় দলগুলো
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু আজ
নিখিল ভদ্র

সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। লিখিত মতামত পাওয়ার পর অন্য দলগুলোকে সংলাপে ডাকবে কমিশন। তবে এখনো বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে লিখিত মতামত জমা দেয়নি বলে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার কালের কণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংসদ ভবনের এলডি হলে এই সংলাপে প্রথম দিনে অংশ নেবে এলডিপি। আগামী শনিবার দুটি এবং রবিবার একটি দল সংলাপে অংশ নেবে। পর্যায়ক্রমে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংস্কার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আমাদের পার্টি ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে মতামত দেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে কমিশনকে জানিয়েছি।’ জোটগতভাবে সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো সুপারিশগুলোর বিষয়ে লিখিতভাবে মতামত জানানো হবে।’
সূত্র মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। তারা সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশগুলো ছক আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ওই ছকগুলো গত ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১২টি দল নিবন্ধিত নয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯। কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোকে তাদের মতামত জানানোর জন্য বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে সাতটি দল মতামত দিলেও পরবর্তী সময়ে আরো আটটি দল মতামত জমা দিয়েছে। অন্যরা অতিরিক্ত সময় নিয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। এ পর্যন্ত মতামত জমা দেওয়া ১৫টি দল হলো এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, জাতীয় গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাসদ।
মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।

অর্থ উপেদষ্টা
দেশীয় শিল্প সুরক্ষার বাজেট দেওয়া হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আগামী বাজেটে ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকার করার প্রস্তাব দিয়েছেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশনের শীর্ষ নির্বাহীরা। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট বক্তব্যের কলেবর কমানো, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং নির্ভুল ডাটা-পরিসংখ্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাজেট দিয়ে যেতে চাই যেটি পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার যে-ই আসুক, যেন ছুড়ে ফেলে দিতে না পারে, আমরা সেভাবেই একটি বাজেট দিতে চাই। আগামী বাজেটে আমরা প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছি না, বরং আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছি। আমরা দেশীয় শিল্প সুরক্ষার একটি বাজেট দিতে চাই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনমুুখিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, ‘সামনেই তো নির্বাচন। আর জুনে নতুন বাজেট। ফলে আপনারা যে বাজেট দিতে যাচ্ছেন সেটা পরবর্তী সরকারের জন্য কতটা সহায়ক হবে?’ যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার বলেন, ‘বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে আপনি সফল হয়েছেন। এ জন্য ধন্যবাদ আপনি পেতেই পারেন। আগামী বাজেট সত্যিই আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ।
সিনিয়র সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘একটি অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয় সে হিসাবটা কখনো আমরা পাইনি। এবার আপনারা সে হিসাব দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। ১৫ বছরে গণমানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। আপনারা একটা মেকানিজম করে এই হিসাবটা বের করুন যে এক অর্থবছরে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয়। সবখানে সংস্কার হচ্ছে, আপনারা বাজেট বত্তৃদ্ধতার আকারে সংস্কার আনুন। ঢাউস আকৃতির বাজেট বত্তৃদ্ধতার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কমিয়ে আনুন। বাস্তবমুখী বাজেট দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে বাজেট দেওয়া হতো সেটা ছিল অহেতুক। বাজেট উপস্থাপনের নামে দেখানো হতো এক রকমের প্রামাণ্যচিত্র।’
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসোসিয়েট এডিটর শামীম জাহেদী বলেন, ‘কালো টাকা বৈধ করার ক্ষেত্রে কর সমান হবে কি না সেটায় আপনারা নজর দেবেন। দেশে এতগুলো টেলিভিশন আছে, দেড় হাজার কেবল অপারেটর আছে, সারা দেশে সাড়ে তিন কোটি বাড়ি আছে। এর ৫৪ শতাংশ বাড়িতে টেলিভিশন দেখা যায়। প্রত্যেকে ৩০০/৫০০ টাকা দিয়ে সংযোগ নেন। এখানকার টাকাটা আমরা এক টাকাও পাই না। সরকার পায় কি না আমি জানি না। এখানে একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে আমরা কিছু টাকা পাব। সরকারও রাজস্ব পাবে।’
সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহনেওয়াজ করিম বলেন, সবার জন্য সুখবর ও স্বস্তিদায়ক বাজেট দিন। করদাতাদের জন্য ট্যাক্স কার্ড প্রবর্তন করা যায় কি না ভেবে দেখুন। এটা করতে পারলে তাঁরা সম্মানিত বোধ করবেন।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ করা হোক। বেকারত্ব কমনোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এ জন্য এসএমই উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন। নয়তো বন্ধ করে দিন। এটা মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত। টেলিভিশনে কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। একটি ওয়েজ বোর্ড এখানেও থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় চ্যানেলগুলো এখানে দেদার চলছে, আমাদের কোনো চ্যানেল ভারতে চলে না। এখানেও কাজ করা প্রয়োজন।’
এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ মনিউর রহমান বলেন, করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ করা হোক। বাজেট বাস্তবায়ন কতটুকু হলো সেটা দেখা দরকার।

নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক, আমরা তা প্রত্যাশা করি না
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। প্রথমত, দলের ভেতরে যারা অন্যায়ের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গত ১৭ মার্চ দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরো বলেছেন, নতুন দলের চ্যালেঞ্জ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ নিয়ে।
আন্দোলন থেকে সরকারে, তারপর আবার রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট’কে নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সরকারকে বাইরে থেকে দেখা আর ভেতর থেকে দেখা সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময় ছিল। এটি আমার জন্যও চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সময়ের দাবিতেই পদত্যাগ করে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরেছি।
নিজের দল এনসিপি সম্পর্কে নাহিদ বলেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হলো নতুন কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে তরুণ এবং সব সামাজিক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরি করা, যারা বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আমাদের এজেন্ডাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। কিছু দাবিতে মিল থাকতে পারে, যেমন আমরা সাংবিধানিক সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনের পক্ষে। কিন্তু আমাদের আদর্শিক অবস্থান ভিন্ন এবং উগ্রবাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম।
সূত্র : বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট