<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওমানপ্রবাসী মোহাম্মদ এনাম উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ও নাজিম উদ্দিন বিদেশের মাটিতে কৃষিকাজে অসামান্য অবদান রাখায় এবার সিআইপি (কমার্শিয়াল ইমপর্ট্যান্ট পারসন) সম্মাননা পেয়েছেন। তাঁরা তিনজন সহোদর। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২৩ সালে ওমান গেলে পরিচয় হয় তাঁদের সঙ্গে। এই কৃষি উদ্যোক্তারা বিস্তার করেছেন কৃষি বাণিজ্যের বিশাল খাত। ওমানের বারাকা এলাকার একসময়ের নুড়ি পাথর আর বালুকাময় ধু ধু মরু অঞ্চল সবুজে ঢেকে দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্যোক্তা কামাল উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, শাহাবুদ্দিন ও এনাম উদ্দিন। এই সহোদররা সাধারণ শ্রমিক হিসেবে ওমানে এসেছিলেন। কিন্তু মনেপ্রাণে কৃষিকে ভালোবাসেন বলেই মরুর বুকে কৃষি ঘিরে গড়ে তোলেন বিশাল বাণিজ্যিক কৃষি খামার। হয়ে ওঠেন বড় কৃষি উদ্যোক্তা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামার হাত ধরে শ্রমিক হিসেবে ওমানে এসে কৃষির প্রতি প্রেম আর কাজের প্রতি সততা থেকে বড় ভাই কামাল উদ্দিন ভিত গড়েছিলেন কৃষি খামারের। তারপর একে একে যুক্ত করেন তিন সহোদরকে। ওমানে এ রকম ১৪টি কৃষি খামার পরিচালনা করছেন তাঁরা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওমানের বারাকা এলাকায় প্রায় সাড়ে ছয় শ একর জমিতে কৃষির বৃহৎ আয়োজন ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। এত বিশাল আকারের খামার যে এক ফসলের মাঠ থেকে আরেক ফসলের মাঠে গাড়ি ছাড়া যাওয়া যায় না। গাড়ি করে যেতে যেতে শুরুর গল্প শুনিয়েছিলেন ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৮ সালে ওমানে গিয়ে ছোট একটা কৃষি বাগানে কাজ শুরু করেন তাঁরা। অন্যের বাগানে কাজ করতে করতে মনে হলো নিজেরাই তো নিতে পারেন উদ্যোগ। ওমানে তখন ভিনদেশিদের বাণিজ্যিক উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে একজন ওমানির সহায়তা নিয়ে জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন নিজেদের খামার। তারপর শ্রমে-ঘামে ক্রমে বড় করে তোলেন কৃষির পরিধি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিকেলের উজ্জ্বল রোদে বড় এক মাঠে চলছিল ঢেঁড়স তোলার কাজ। খামারের বেশির ভাগ শ্রমিক বাংলাদেশের। কথা হয় তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেছিলেন, নাজিম উদ্দিনের খামারে ভালোই আছেন তাঁরা। কৃষিকাজ করেন। ফসলের সঙ্গে থাকার কারণে দেশ থেকে দূরে আছেন এমনটা মনে হয় না। পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছে কম্পানি। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা দেশে পাঠান তাঁরা।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স, করলা আর বরবটির চাষ হচ্ছে বিশাল এলাকাজুড়ে, যেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ টন কৃষিপণ্য চলে যাচ্ছে দুবাই ও কাতারের বাজারে। বলা ভালো, দুবাই আর কাতারের বাজারকে কেন্দ্র করেই এই খামার ব্যবস্থাপনা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু সবজি উৎপাদনই নয়, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করার লক্ষ্যে উদ্যোক্তারা সার ও কীটনাশক আমদানি শুরু করেছেন। বর্তমানে এটিও তাঁদের বাণিজ্যের অন্যতম খাত। নাজিম উদ্দিন দেখালেন সেচের পানির সঙ্গে কিভাবে সার মিশিয়ে সবজির ক্ষেতে প্রয়োগ করছেন তাঁরা। আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি কর্মকর্তারা সার প্রয়োগের এ বিষয়টিকে ছিটিয়ে প্রয়োগের মধ্যেই আটকে থাকতে চাচ্ছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিদেশের মাটিতে শ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বহু বিরূপ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। যেখানে সম্ভাবনা দেখেছেন ছুটে গেছেন। স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তারই ফসল আজকের এই কৃষি বাণিজ্যের বিস্তীর্ণ প্রান্তর। যেখান থেকে সংগ্রহ চলছে সমৃদ্ধিময় দিনের। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাজিম উদ্দিন বলছিলেন, ওমান সরকারের সাম্প্রতিক সময়ের নীতিগত সিদ্ধান্তে দুয়ার খুলেছে নতুন সম্ভাবনার। আগে ওমানে প্রবাসীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইসেন্স পেতেন না। এখন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। ফলে কৃষিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এখানে তৈরি হচ্ছে নানামুখী উদ্যোগের সুযোগ। প্রবাসীরা চাইলেই কৃষিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষিতে বিনিয়োগ বিষয়ে কথা হয় ওমানপ্রবাসী ব্যবসায়ী সিআইপি ইয়াসিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হলেও অনেক বিষয় রয়ে গেছে, যেগুলো সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মাধ্যমে সহজ করা যায়। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কম্পানি তৈরির লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জমি লিজ নেওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘ সময়ের জন্য জমি লিজ না পাওয়া গেলে কৃষি বাণিজ্যের সাফল্য তুলে আনা সম্ভব হবে না। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যক্তি উদ্যোগে এমন সফল প্রচেষ্টাগুলো আমাদের উচ্ছ্বসিত করে। হাজারো প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে মরুর বুক যাঁরা সবুজে ঢেকে দিচ্ছেন, যাঁরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে উজ্জীবিত রাখছেন দেশের অর্থনীতি, আমাদের সরকারের উচিত সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে তাঁদের পাশে থাকা। তাহলে অর্থনীতির এই চাকা সদা গতিশীল থাকবে, হবে বিস্তৃত।</span></span></span></span></span></p>