<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ কথা অনস্বীকার্য যে রাজনীতি রাজনীতিকদেরই সাজে। এই গণসম্পৃক্ত কাজটি তাঁদেরই সার্বিক দায়দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাজনীতি অবশ্যই আমাদের জাতীয় জীবনের একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে তার সার্বিক অগ্রগতি কিংবা সাফল্য নির্ভর করে মূলত কিছু নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ ও সঠিক কর্মপদ্ধতির ওপর। সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং সর্বোপরি একটি সুদূরপ্রসারী আদর্শভিত্তিক লক্ষ্য বা কর্মসূচির মাধ্যমে গণমানুষের রাজনৈতিক অধিকার কিংবা আর্থ-সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। এই বিষয়টি বিশ্বব্যাপী রাজনীতিবিদরাই বিভিন্ন সময়ে বারবার প্রমাণ করেছেন। তবে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কোনো ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে ব্যাপক জনগণের তুলনায় যখন তাদের ব্যক্তি কিংবা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে, তখনই সমাজে শুরু হয় সার্বিক বিপর্যয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো কোনো নির্দিষ্ট সময় ছাড়া এই বিষয়টি আমাদের স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫২ বছরের রাজনৈতিকজীবনে বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা গেছে। দুর্নীতি, স্বৈরাচার ও দুঃশাসন যেন আমাদের জাতীয় জীবনে একটি অলঙ্ঘনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে যে একটি কথা একসময় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলা হতো, তা যেন নীরবে-নিভৃতে হারিয়ে গেল। গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল, নিপীড়নমূলক (ফ্যাসিবাদী) শাসনব্যবস্থা চালু, এক ব্যক্তির (কর্তৃত্ববাদী) ইচ্ছা-অনিচ্ছায় রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সর্বোপরি লাগামহীন দুর্নীতি ও বিদেশে সম্পদ পাচার যেন বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলের একটি স্থিরচিত্র হয়ে দাঁড়াল। এর বিরুদ্ধে বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দল গণ-আন্দোলনের উদ্যোগ নিলেও অবর্ণনীয় নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে সেগুলো দমিয়ে ফেলা হতো। সে অবস্থায় দেশে আপামর জনসাধারণের অধিকার আর অধিকার থাকল না। ন্যায়নীতি কিংবা আদর্শভিত্তিক রাজনীতি বলে আর কিছু রইল না। এই চরম নৈরাজ্য, হতাশা ও সার্বিক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে এলো ছাত্র-জনতার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত এক সফল গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হলো। একে গণ-অভ্যুত্থান বলুন আর জনগণের বিপ্লবই বলুন, সেটি এ দেশে বিরাজমান অসহনীয় রাজনীতি ও অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজ পরিবর্তনের এক অপূর্ব সুযোগ এনে দিল। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলো। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/21-10-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="273" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/21-10-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />রাজনীতি রাজনীতিকদের কাজ হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় সব পেশাজীবী ও চিন্তাশীল মানুষের অংশগ্রহণ একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়। রাষ্ট্র সবার। তাই রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ নিয়ে ভাবার অধিকার সবার, মানুষেরই সমাজ। এটি রাজনীতিকদের একচ্ছত্র আধিপত্যের ক্ষেত্র নয়। শুধু রাজনীতিকরাই সব কিছু বুঝেন আর কেউ নয়, যদি সত্যি এমনটি হতো, তাহলে বিগত ৫২ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতির এই হাল হতো না। দেশের সর্বত্র এবং সব মহলে এখন সময়োচিত সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামতের দাবি উঠেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শুধু একা রাজনীতিকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া কাঙ্ক্ষিত কিংবা মোটেও বাঞ্ছিত নয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই মহান দায়িত্বটি সম্মিলিতভাবে সুসম্পন্ন করতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন সুযোগ একটি জাতির জীবনে খুব কমই আসে। সুতরাং তাকে হাতছাড়া করা যাবে না, ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এই মহান দায়িত্বটি পালন করার বা সমন্বয় করার ভার যাঁদের ওপর ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অর্পণ করেছে, তাঁদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। নতুবা সম্মিলিতভাবে এই মহান কর্তব্য বা দায়িত্বটি পালন করতে অসমর্থ হলে দেশে আবার রাজনৈতিক অসন্তোষ, নৈরাজ্য, দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও দুঃশাসন অচিরেই ফিরে আসবে। ব্যর্থ হবে গণতান্ত্রিক সব প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন হবে বিফল মনোরথ। বর্তমানে ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রদত্ত এই সংস্কারের উদ্যোগ কোনো অসাধু মহলের চক্রান্তে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে কিংবা কারো করদরাজ্যে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না। যারা এই মহান কাজে এখন বিঘ্ন ঘটাবে, একদিন এর ব্যর্থতার দায়ভার সবটুকুই তাদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। সুতরাং রাজনীতি ও রাজনীতিকদের ভূমিকা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতিগতভাবে আরো অধঃপতিত ও বিপদগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ আমাদের খুবই কম। সম্মিলিত কিংবা জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়াকে এখন যেকোনো মূল্যের বিনিময়ে অব্যাহত রাখতে হবে। নতুবা লাগামহীন রাজনৈতিক তাণ্ডবে নিঃস্ব হবে দেশ, চরমভাবে বিপর্যস্ত হবে সমগ্র জাতি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধবিগ্রহের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে শিল্পোৎপাদন ও বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক ব্যাপক মন্দার দীর্ঘসূত্রতার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তদুপরি বিশ্বব্যাপী খারাপ আবহাওয়া ও প্রলয়ংকরী বন্যার কারণে ফসলহানি কিংবা শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশ তা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে-নগরে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। তদুপরি রয়েছে সিন্ডিকেট, মজুদদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার ব্যবস্থায় আরো অনেক কঠোর হতে হবে। প্রয়োজন হলে আইনসংগতভাবে ভেঙে দিতে হবে অসাধু চক্রের সব কর্মকাণ্ড এবং নিশ্চিত করতে হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবাধ সরবরাহ। নজরদারি জোরদার করতে হবে, যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। নতুবা বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বিপণন ব্যবস্থায় আরো বাস্তবভিত্তিক পরিবর্তন আনতে হবে। টিসিবির মতো বিপণনব্যবস্থা আরো ব্যাপকভিত্তিক ও প্রসারিত করতে হবে। এর পাশাপাশি আর যে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে অত্যন্ত পীড়া দিচ্ছে, তা হলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হচ্ছে, সামরিক বাহিনীর হাতে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (যত সাময়িকই হোক) দেওয়ার পরও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর-নগরীতে যে ধরনের চুরি, ডাকাতি ও রাহাজানি হচ্ছে, তা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে মনে হয়, এ দেশে চোর-ডাকাতরাও অত্যন্ত সংগঠিত ও তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ। সুতরাং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেও ততটাই সংগঠিত ও শক্তিশালী হতে হবে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিপর্যস্ত পুলিশ বাহিনী এখন তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে আবার বেশির ভাগই যোগ দিয়েছে। সংগঠিত কিংবা পরিকল্পিতভাবে কাজও শুরু করেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আশার সঞ্চার হচ্ছে যে সার্বিক অবস্থা ক্রমে ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আসবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের মৃত্তিকা-কাঁপানো গণ-অভ্যুত্থানের মতো এত বড় একটি বিস্ময়কর ঘটনা দেশের কিছু মানুষ বোধ হয় এরই মধ্যে ভুলতে বসেছে। দেশের সব কিছু যে রাতারাতি ওলটপালট হয়ে গেছে, বদলে গেছে সব কিছু, তা যেন তাদের নজরেই পড়েনি। সে ব্যাপক পরিবর্তন কিংবা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গণেশ ওল্টানোর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কারণে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গণপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংকট ও শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে পরিবর্তিত, পরিকল্পিত, উন্নত ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যা ক্রমে ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রাষ্ট্রে এ ধরনের বৈপ্লবিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর মানুষ উন্নত জীবন ব্যবস্থার জন্য নতুন করে আশায় বুক বাধে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে। এতটা অসহিষ্ণু ও অধৈর্য হয়ে পড়ে না। আমাদের দেশে এক ধরনের রাজনীতিক রয়েছেন, যাঁরা দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও যথাযথ রাষ্ট্রীয় মেরামত চান অথচ তার জন্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সময়টুকু দিতে আগ্রহী নন। এই দেশটি সবার, শুধু রাজনীতিকদের নয়। সুতরাং একজন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের নিজ নিজ মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। নতুবা তাঁরা সংস্কারের প্রশ্নে রাজনীতিকদের ভূমিকা নিয়ে খেপে যেতে পারেন। রাজনীতিকদের ওপর আস্থা হারাতে পারেন। এ কথাও ঠিক যে আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সেনাবাহিনী বিভিন্ন বিষয়ে অত্যন্ত চাপের মুখে রয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছাড়াও রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। টেকনাফের কাছে মায়ানমার নৌবাহিনীর অবস্থান, বাংলাদেশি জেলেদের ওপর আক্রমণ, হত্যা ও তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেশের সাধারণ মানুষকে অত্যন্ত বিচলিত করেছে। সরকারকে অসময়ে করেছে যথেষ্ট বিব্রত। মায়ানমার নৌবাহিনী বা নৌবহর বাংলাদেশের জলসীমায় আনাগোনা শুরু করেছে। এই বিষয়টির উৎপত্তি কোথায়, তা নিয়ে সরকার এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর হয়ে উঠেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মায়ানমার নৌবাহিনীর সাম্প্রতিক তৎপরতাকে চীনের উসকানি বলে অনেকে মনে করছে। তা ছাড়া চীন গত কিছুদিনের মধ্যে মায়ানমারকে প্রতিশ্রুত ১৬টির মধ্যে ছয়টি জঙ্গিবিমান সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান এই বিষয়গুলো নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। বোঝা যাচ্ছে, চীন বাংলাদেশের ওয়াশিংটনমুখী কার্যকলাপকে খুব ভালোভাবে নেয়নি। তারা চায় রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানসহ বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রশ্নে ও ইন্দো-প্যাসিফিক জলপথকে ঝঞ্ঝামুক্ত রাখার ব্যাপারে ঢাকা বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখুক। তারা এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী কিংবা আগ্রাসনবাদী পরিকল্পনাকে বেশি দূর বাড়তে দেওয়ার বিপক্ষে। সে কারণে বাংলাদেশের সব অবস্থার একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতে চায় চীন। বর্তমান ইউনূস প্রশাসন ও সেনাবাহিনী এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এর বিপক্ষে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে কল্যাণকর হবে না। ফলে চীনের দুটি রণতরি চট্টগ্রামে এসেছে সম্প্রতি। সেখানে চীনের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে চীন ও বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ নৌ কর্মকর্তারা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক করেছেন। এতে বাংলাদেশ নিয়ে বেইজিংয়ে জমে ওঠা শীতল বরফ কিছুটা গলতে শুরু করে, চীন থেকে অস্ত্র আমদানিও শুরু হচ্ছে। দেশে দ্রব্যমূল্য ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয় দুটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও অন্যান্য সেক্টরে অগ্রগতির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এতে মানুষের মনে ক্রমেই ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে ইউনূস সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভবিষ্যৎ ও সংস্কার কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা নিয়ে। এখন আমাদের প্রয়োজন ধৈর্যসহকারে সর্বক্ষেত্রে কর্মমুখর হওয়া। এই গণ-অভ্যুত্থান, সংস্কারপ্রক্রিয়া এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশের চক্রান্তকারীদের এখন একযোগে রুখতে হবে। কারণ সম্ভাবনাময় জোনাকির আঁধারমানিকগুলো ক্রমে ক্রমে এখন জ্বলে উঠতে শুরু করেছে। একে অস্থিরতা কিংবা হতাশার আচ্ছাদনে ঢেকে দেওয়া যাবে না। আমাদের এ লড়াই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, সামনে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">gaziulhkhan@gmail.com</span></span></span></span></p>