দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন গ্যাসসমৃদ্ধ দ্বীপজেলা ভোলা। ১৯৯৩ সালে ভোলায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হলেও জ্বালানি সংকটের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। ২০১৩ সালের দিকে ভোলার আবাসিক ও শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ চালু হলে নতুন করে আশার আলো দেখতে পান তারা। কিন্তু সে সময়ও ভোলার বিসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী বিসিকে গ্যাস লাইনের উদ্বোধন করলেও এর পর আর কোনো কাজ হয়নি। দেওয়া হয়নি শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ।
২০২৪ সালের ১ নভেম্বর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা ফাউজুল কবির খান ভোলার গ্যাসকূপ পরিদর্শনে এসে শিল্প মালিকদের গ্যাস সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসের আলোকে ভোলা বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত ক্ষুদ্র শিল্প মালিকরা সংযোগ পাওয়ার জন্য সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানিতে আবেদন করেন।
সে আবেদন গ্রহণ করে সর্বপ্রথম ভোলার বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত মেসার্স জে কে ট্রেডার্সকে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন দেন।
আরো পড়ুন
ছেলের রেখে যাওয়া অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বিএনপি নেতা আটক
সুন্দরবন গ্যাস কম্পানির ১৬২তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গ্যাস সংযোগের চিঠি মালিক পক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ করে। এরপর বিসিক নিজস্ব অর্থায়নে গ্যাস সংযোগ লাইনের কাজ সম্পন্ন করে। সরকারি সব নিয়ম-কানুন মেনে শতভাগ জামানত দিয়েই শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসসংযোগের লাইনের কাজ সম্পন্ন করেন।
সব প্রক্রিয়া শেষে মেসার্স জে কে ট্রেডার্স যে মুহূর্তে কাজের জন্য দেড় শ শ্রমিক নিয়োগ দিল, ঠিক সেই মুহূর্তে অজ্ঞাত কারণে সেখানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
জে কে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ অনুমোদনের পর আমি প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করে কারখানা চালুর জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। কী কারণে আমার কারখানায় গ্যাস চালু করা হলো না তা আমার বোধগম্য নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘গ্যাস না পাওয়ায় আমার প্রায় দেড়শতাধিক শ্রমিককে এখন বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। ফলে হতাশায় দিন কাটছে।
উৎপাদনে না যেতে পেরে এত শ্রমিককে বেতনও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
ভোলার বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক এস এম সোহাগ হোসেন বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নে আমরা গ্যাস লাইন টানার কার্যক্রম সমাপ্ত করি। কিন্তু সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি নিজেদের অফিশিয়াল সিস্টেম লসের কারণে গ্যাস সঞ্চালন দিতে বিলম্ব করছে।’
আরো পড়ুন
সাভারে পাকিজা গ্রুপের গোডাউনে আগুন
ভোলা সুন্দরবন গ্যাস কম্পানির ব্যবস্থাপক মো. অলিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। সেই আলোকে ভোলায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দিতে কোনো বাধা নেই। জে কে ট্রেডার্স নামের কারখানাটির গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। সেই আলোকে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সেটির গণশুনানি রয়েছে। এ জন্য নতুন করে গ্যাস সরবরাহ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরও আমরা বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠির জবাব পেলে অতি দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে।’