নাব্যতা সংকট দেখিয়ে প্রায় ৩ মাস ধরে চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতরে যাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে ফেরি চলাচল না হওয়ায় বিআইডব্লিউটিসি প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা গচ্ছা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ফেরি বন্ধ থাকায় ফেরির ইঞ্জিন ক্ষতির মুখে পড়ছে।
অভিযোগ রয়েছে, নাব্যতা সংকটে নদী খননের নামে বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল একটি চক্র ব্রহ্মপুত্র নদের বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। অপরদিকে, নাব্যতার সংকট দেখিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চক্রটি নৌকা মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কমিশন বাণিজ্য করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আরো পড়ুন
আগাগোড়া অনিয়ম আর একনায়কতন্ত্রের গল্প
মাসের পর মাস ফেরি বন্ধ থাকায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে সরকারের লোকসানের পাশাপাশি জনগণের পকেট কাটা যাচ্ছে।
জানা যায়, চিলমারীর রমনা ঘাট থেকে রৌমারীর ফলুয়ার চর ঘাটের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। এই ২২ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিতে নানা সংগ্রাম করতে হয় এ অঞ্চলের মানুষদের। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী নৌ রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
চিলমারী-রৌমারী নৌ রুটের নিয়মিত যাত্রী রাশেদ ও রইচ প্রামাণিক জানান, ঈদ আসলে এখানকার নৌকা মালিকদের আচরণ সহ্য করার মতো না।
মোটরসাইকেল এবং যাত্রীর ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে কেউ কথাও বলে না। কিন্তু ফেরি হলে মানুষের ভোগান্তি থাকে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলের যানবাহনগুলো ১৫০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিয়ে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। ফেরিটি রমনা ঘাট হতে ফকিরেরহাট ঘাটে স্থানান্তর করা হলে অনেক কম সময়ে এ অঞ্চলের বাস, ট্রাক ও ছোট গাড়িগুলো ফেরি পারাপার করে অল্প সময়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে।
এতে যানবাহনগুলোর সময় এবং জ্বালানি খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এ ছাড়া নাইট নেভিগেশন (বাতি) ব্যবস্থা চালু থাকলে রাতের বেলা ফেরি চলা করা সম্ভব হবে বলে জানায় সূত্রটি।
দিনাজপুর থেকে চিলমারীর ফকিরেরহাটের ঘাটে চাল নিয়ে আসা ট্রাকচালক লোকমান হোসেন জানান, এই ঘাট (ফকিরেরহাট ঘাট) দিয়ে ফেরি চলাচল করলে রুটটি অনেক ছোট হতো ও দিবারাত্রি চলাচল করতে পারলে উত্তর অঞ্চলের যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক আর ছোট গাড়িগুলো এই রুট ব্যবহার করে ঢাকা চলাচল করতো। এই রুটের সমস্যাগুলো সমাধান করলে এ ফেরি উত্তর অঞ্চলের প্রধান প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কদম এবং কুঞ্জলতা নামের দুটি ফেরি চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা আছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নৌরুটের প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধান করে ফেরি চলাচলের নির্দেশনা আসলে সঙ্গে সঙ্গেই সার্ভিস চালু করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক শেখ রবিউল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওয়াটার লেভেল না বাড়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল করা সম্ভব নয়। কেননা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে ফেরি চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। তবে রৌমারীর ঘাট দিয়ে বালু যাওয়ার কারণে ঘাট নষ্ট হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।