ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের যুবক সোহাগ মিয়া (৩৫) বিনা দোষে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর শোকে ও বিনা চিকিৎসায় তার বাবা মারা গেছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় শাহগঞ্জ বাজার থেকে পুলিশ সোহাগকে গ্রেপ্তার করে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সোহাগি ইউনিয়নের বাজারে ৫ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া একটি বিস্ফোরক মামলায় তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের পর সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
এর মধ্যে গত বুধবার সকালে সোহাগের বাবা আবু বক্কর ছিদ্দিক ছেলের শোকে ও চিকিৎসার অভাবে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর প্যারোলে সোহাগকে একনজর দেখানো হয় বাবার লাশ।
সোহাগের মা ফজিলা খাতুন (৬০) বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধে জড়িত না। সে শাহগঞ্জ বাজারে কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান চালাত।
তার আয়েই সংসার চলত। বিনা দোষে তাকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ। ছেলের শোকে আমার স্বামী মারা গেলেন। এখন আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
স্থানীয়রা জানায়, সোহাগ একজন সৎ ও কর্মঠ যুবক। তার দোকানের আয়েই পরিবারের সাত সদস্যের ভরণপোষণ চলত। গ্রেপ্তারের সময় এলাকাবাসী পুলিশকে সোহাগের বাড়িতে অসুস্থ বাবা থাকার কথা জানালেও তাদের আবেদন উপেক্ষা করা হয়।
সোহাগের শিশুসন্তান নাইম মিয়া (৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমার আব্বাকে ঈদের আগে বাড়ি নিয়ে আসুন, না হলে আমার নতুন জামা কে কিনে দেবে?’
মামলার বাদী ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আবু রায়হান বলেন, ‘শুধু নামেই আমি বাদী। পুরো ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।
’ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমি শুধু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি উবায়দুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। এখন যাচাই-বাচাই ছাড়া কাউকে ধরা হয় না। সোহাগের বিষয়টি আমি খেয়াল রাখব।’
এ ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ। তারা দ্রুত সোহাগের মুক্তি ও ন্যায়বিচার চায়। সোহাগের পরিবার এখন মানসিক ও আর্থিক সংকটে পড়েছে। মা ফজিলা খাতুনের কান্নায় ভেঙে পড়ে আশপাশের মানুষ। তারা প্রশ্ন করেন, বিনা দোষে একজন সৎ মানুষকে কেন ফাঁসানো হলো? এর ন্যায়বিচার কে দেবে?