আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফয়সালের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, হাজেরা বেগম ঘরে বসে কাঁদছেন। তার কান্নার কারণ, ঘরে কোনো ঈদের আনন্দ নেই। সন্তান ছাড়া কোনো মায়ের ঈদ আনন্দের হতে পারে না। হাজেরা বেগম গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ফয়সালের মা।
তার বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর গ্রামে। জেলায় শহীদ পরিবারের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছেন বাবা সফিকুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের দেখে হাজেরা বেগম বলেন, ‘কত মানুষ দেখি, আমার মানিক ফয়সালকে দেখি না। ঈদ কাটল আমার কলিজার টুকরা মানিক ছাড়া চোখের পানিতে।
ঈদের আগে কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠিয়ে আর বলল না, মা টাকা পাঠিয়েছি, তোমার, বাবার এবং ফাহাদের জন্য ঈদের নতুন কাপড় কিনে নিও। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে এসে বলল না, মা সেমাই দাও। কী অপরাধ ছিল আমার মানিকের?’
শহীদ ফয়সালের লাশ পায়নি পরিবার। বেওয়ারিশ হিসেবে রাজধানীর রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে গণকবর খুঁড়ে একসঙ্গে ১২০ জনকে দাফন করে দেয়।
সেই আক্ষেপ রয়েছে মায়ের। তিনি বলেন, ‘আমার পুতের লাশটিও পাইনি। মানিকের কবরের পাশে কান্না করার সুযোগও পাচ্ছি না।’
ফয়সাল সরকার পরিবার নিয়ে থাকতেন আবদুল্লাহপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। দুই ভাই ফয়সাল ও ফাহাদ পড়ালেখা করত দক্ষিণ খান এসএম মোজাম্মেল হক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নিচ্ছিলেন ফয়সাল। আট বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর শহীদ হন তিনি।
ছোট ভাই ফাহাদ সরকার জানান, পরালেখার পাশাপাশি একটি বাসের সুপারভাইজার হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি করতেন ফয়সাল। গত বছরের ১৯ জুলাই চাকরিতে গিয়ে শহীদ হন তিনি।
ঘটনার ১২ দিন পর (১ আগস্ট) বিকেলে ছবি নিয়ে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে যোগাযোগ করলে ফয়সালের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পরিবার। সেখানে শহীদদের তালিকায় ছবি দেখে ফয়সালকে শনাক্ত করা হয়। তবে ততক্ষণে বেওয়ারিশ হিসেবে রায়ের বাজার বদ্ধভূমিতে দাফন করা হয় ফয়সালের লাশ।
পরে প্রত্যক্ষদর্শী ও এক সাংবাদিকের বরাত দিয়ে পরিবার ফয়সালের শহীদ হওয়ার সময়ের ঘটনা জানতে পারে। ফাহাদ জানান, আন্দোলনের সময় রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে ফয়সালের মাথার খুলি উড়ে যায়। তাকে প্রথমে কুয়েত মেডিক্যালে এবং পরে সহোরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে ফয়সালের বাবা অসুস্থ। সংসারের হাল ধরতে ফাহাদ লেখাপড়া বন্ধ করে এখন একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করছেন।