<p>অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তারও কম সময় হওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশের ৫৩ শতাংশ ভোটার। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ৪৭ শতাংশ ভোটার মনে করেন এই সরকারকে তিন বছর বা তার বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে হবে।</p> <p>আজ বুধবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় জরিপ-২০২৪ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন সরকারের নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সদস্যসচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার, এসআইপিজির উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান, এনএসইউর শিক্ষক অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ প্রমুখ।</p> <p>জরিপ ফলাফলে জানানো হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশ, শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কারে তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে।</p> <p>আরো জানানো হয়, জরিপে উত্তরদাতাদের ৭২ শতাংশ ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন। ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত। আর ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ৯৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করাকে সমর্থন করেন। ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন, সংবিধানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন এবং ১৬ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের পক্ষে তাদের মত দিয়েছেন।</p> <p>আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের ব্যাপক আস্থা ও আকাশচুম্বী প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে, যা এই জরিপে উঠে এসেছে। এর বিপরীতে এই প্রত্যাশার ব্যবস্থাপনা করাটাই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। আগেও দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু তার সুফল পাওয়া যায়নি। এর বড় কারণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় গিয়ে সেসব বাস্তবায়ন না করলে সবই হবে পণ্ডশ্রম। রাজনৈতিক দলগুলোকেও গণতান্ত্রিক হতে হবে।’</p> <p>সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে, বাইরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে কী কী আইন পরিবর্তন করা দরকার, নির্বাচনীব্যবস্থার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে তাদের কী কী পরিবর্তন সরকার, সাংবিধানিক কী কী সংস্কার দরকার এগুলো সম্পর্কে আমরা সুপারিশ দেব।  আমাদের পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলো সুপারিশ দেওয়ার পর সরকার হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। এরপর হয়তো একটি রোডম্যাপ ও নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হবে।’</p> <p>অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, ‘৯৭ শতাংশ মানুষ বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছে। ফলে এই সরকারকে অন্তত দুই বছর থাকতে হবে। সরকারকে বুঝতে হবে, তাদের সংস্কার করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে সংস্কার আনতে হবে।’</p> <p>অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই প্রত্যাশার কারণে সরকারের দায়িত্বও অনেক। গণপিটুনি, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নিলে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে।’ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।</p> <p>অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের আটটি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট এক হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এ জরিপ করা হয়। এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সর্বপ্রথম সরাসরি পরিচালিত একটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ। উত্তরদাতাদের ৬৩ শতাংশ মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর), ২২ শতাংশ জেনারেশন-জেড (১৮-২৭ বছর) এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের ওপরে। এ ছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চল ও ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দা।</p>