বিদেশে কর্মসংস্থান

বঞ্চনায় শেষ মালয়েশিয়ার স্বপ্ন

  • ► বাংলাদেশ থেকে ১২ ফ্লাইট ছেড়ে গেছে
  • ► বিমানবন্দরে গত রাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে অপেক্ষা করতে দেখা যায়
তৌফিক হাসান
তৌফিক হাসান
শেয়ার
বঞ্চনায় শেষ মালয়েশিয়ার স্বপ্ন
মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই হাজারো মানুষ গতকাল সকাল থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করে। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

বিদেশে কর্মসংস্থানে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গতকাল শুক্রবার বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট বা চক্রের নির্মম দুর্নীতির চিত্র। তাদের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে প্রতারিত হয়েছেন হাজারো কর্মী, যার চিত্র গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা গেছে। গতকাল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

গতকাল মালয়েশিয়া যেতে শেষবারের চেষ্টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমবেত হন বঞ্চিত কর্মীরা। এসব কর্মীর মধ্যে বেশির ভাগই জমি বা শেষ সম্বলটুকু বেচে ও চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার টাকা জোগাড় করেন। নির্দিষ্ট সময় শেষে নিদারুণ স্বপ্নভঙ্গের মাধ্যমে তাঁদের সে আশা শূন্যে মিলিয়ে গেছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সূত্র বলছে, গতকাল বাংলাদেশ থেকে ১২টি ফ্লাইট মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

এসব ফ্লাইটে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন।

গতকাল সকাল থেকে বিমানবন্দরে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী অবস্থান করেন। কর্মীদের দাবি, এজেন্সিগুলো টিকিটের ব্যবস্থা করে দেবে বলে তাঁদের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু সে টিকিট কখন দেবে, ওই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন কর্মীরা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আজকের (গতকাল) অনলাইন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বাংলাদেশ থেকে আজ রাত পর্যন্ত যত কর্মী যাবেন, সবাইকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/06.June/01-06-2024/2/kalerkantho-ft-1a.jpg

কর্মীদের হাহাকার

কর্মীদের মধ্যে অনেকে তিন-চার দিন ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন। এই কয়েকটি দিন আশা-নিরাশার দোলাচলে সময় কেটেছে তাঁদের।

রিক্রুটিং এজেন্সি গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজের মাধ্যমে ২৪ জন কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা।

কিন্তু তিন দিন ধরে বিমানবন্দরে অবস্থান করেও তাঁরা টিকিটের দেখা পাননি।

গতকাল নওগাঁর বাসিন্দা মো. সাইফুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, মালয়েশিয়া যেতে না পারলে আর বাড়ি ফেরা হবে না। জমি বন্ধক রেখে, সুদে ও কিস্তিতে ঋণ করে ছয় লাখ টাকা জোগাড় করেছি। যদি মালয়েশিয়া না-ই যেতে পারি, না-ই কাজ করতে পারি, এই টাকা আমি দেব কোথা থেকে?

জামালপুরের বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, আজকে যেতে না পারলে তো পুরো নিঃস্ব হয়ে যাব। তারা টাকা ফেরত দেবে কি না, সঠিক জানি না। জমি বেচে, সুদে ও কিস্তিতে ঋণ করে ছয় লাখ টাকা জোগাড় করেছি। এখন যেতে না পারলে বাড়ি কিভাবে ফিরব জানি না।

একই জেলার বাসিন্দা সালমা বেগম বলেন, তিন দিন ধরে শুধু বিমানবন্দরে ঘুরতে আছি। গত পরশু বাড়ি থেকে নিয়া আসছে। বলেতোমরা তাড়াতাড়ি আসো, তোমাদের টিকিট দেব। এখন টিকিটও পাই না, কিছু বলেও না। নদীর মাঝে ডুবে মানুষ যেমন হাবুডুবু খায়, আমাদের ওই রকম অবস্থা।

শুধু সাইফুল্লাহ, রুবেল বা সালমা বেগম নন, বিমানবন্দরজুড়ে এমন হাজারো কর্মীর মধ্যে এই হতাশা।

পটুয়াখালী থেকে এসেছেন মো. শফিক শিকদারসহ পাঁচজন। কিন্তু টিকিটের সুরাহা হয়নি।

শফিক শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন আমাদের বলছে যে আপনারা যদি টিকিট কাটতে পারেন, তাহলে কেটে চলে যান। এখন ব্যাপারটা যদি আমাদের ওপর ছেড়ে দেয়, তাহলে আমরা এদের কাছে কেন গেলাম? কেন তাহলে তখন বলল যে তারা সব কিছু করে দেবে। এখন আমাদের মাথার ওপর ভার চাপিয়ে তারা পালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কোনো ফ্লাইট পাওয়ার সুযোগ নেই। এখন শুধু অন্ধকার দেখছি। অনেক কষ্টে সুদের ওপর ঋণ করে টাকা নিয়ে আসছি। এই কিস্তির টাকা প্রতি সপ্তাহে দিতে হবে। এটা ঠিকমতো দিতে না পারলে আমার নামে মামলা করে দেবে তারা।

খুলনার বাসিন্দা শিহাব মোল্লা বলেন, দালাল শুধু বলতাছে টিকিট আছে, দিচ্ছি, বিমানবন্দরে আসেন। এ রকম তিন দিন ধরে ঘোরাচ্ছে। প্রতিদিনই শুধু আসি আর যাই। এখন টাকা তো তাদের হাতে। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। তারা যা করছে, আমাদের তা-ই মানতে হচ্ছে। এখন বলতাছে, আজকে হবে। কিন্তু কখন হবে, তা বলতাছে না।

এ বিষয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) যুগ্ম সম্পাদক টিপু সুলতান কালের কণ্ঠকে বলেন, ৩১ তারিখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এটা সবাই আগে থেকে জানত। আমরা সরকারকে বলেছিলাম, কূটনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনা করে যদি অধিকসংখ্যক চার্টার্ড ফ্লাইট করা যেত, তবে এ সমস্যা অনেক আগেই দূর করা যেত। আমরা মনে করি, সরকারের উদ্যোগের অভাব ছিল। এখনো সরকারই পারে যাঁরা ভিসা পেয়েছেন,  কূটনৈতিকভাবে তাঁদের যাওয়ার ব্যবস্থা করতে।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, কত মানুষ যাবে, কিভাবে যাবে, সেই তালিকা চেয়েছিলাম বায়রার কাছে। কিন্তু তারা কোনো তালিকা দিতে পারেনি। এর ফলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে এখন যাঁদের টিকিট কনফার্ম হয়েছে, তাঁদের পাঠানো হচ্ছে। অন্যদের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

দুর্নীতির আখড়া যে শ্রমবাজার

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যেন দুর্নীতির আখড়া। সরকার অভিবাসন খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও কর্মীরা জনপ্রতি সাড়ে চার থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। আইনে নিষিদ্ধ হলেও ভিসা কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি ভিসা ন্যূনতম ছয় হাজার রিঙ্গিত করে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কিনেছে।

নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের হোতাদের কর্মীপ্রতি এক লাখ ৪২ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে যাওয়া কর্মীরা পাননি কোনো কাজ। বেতন ও কাজ না পাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন লাখো কর্মী। 

এ বিষয়ে গত বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বলেন, সিন্ডিকেট এমন একটি বিষয়, যা মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে এর সমাধানের জন্য দুই দেশের সরকার পরস্পরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। 

বায়রার যুগ্ম সম্পাদক বলেন, আমরা চাই দেশের সব এজেন্সি সব দেশে কর্মী পাঠাক। কোনো কারণে সিন্ডিকেশন আমরা চাই না।

 

প্রথমে ২৫, পরে ১০১ সিন্ডিকেট

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৯ সাল থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। দীর্ঘ ছয় বছর পর আবার কর্মী নেওয়া শুরু হলে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর কাজ পায়, যারা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। সে সময় ৩৭ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণ করা হলেও এজেন্সিগুলো কর্মীদের কাছ থেকে নিত তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এই দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে আবারও বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট এই শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয়। তবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ২৫ বাংলাদেশি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু বঞ্চিতদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেটবিরোধী আন্দোলনের পর আরো ৭৫ বেসরকারি ও একটি সরকারি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয় মালয়েশিয়া। 

 

সিন্ডিকেটে মন্ত্রী-এমপিরা

মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটে মন্ত্রী-এমপিদের রিক্রুটিং এজেন্সির নামও উঠে এসেছে। তবে তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারেনি।

বিএমইটির তথ্য বলছে, প্রথম ২৫টি এজেন্সি বাদে অন্য সব এজেন্সি সমপরিমাণ কর্মী পাঠিয়েছে। এ সংখ্যা সাত হাজার থেকে আট হাজার। জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকজন এমপির প্রতিষ্ঠান আদতে কোনো কর্মী পাঠায়নি। তারা অন্য এজেন্সির কাছে কর্মীপ্রতি চাহিদাপত্র ৩৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করত।

বিএমইটি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মন্ত্রী-এমপিদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজীর আহমেদের আহমদ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১১৪৬)। গত ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি সাত হাজার ৮৬৯ জন কর্মী পাঠিয়েছে। যদিও মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটে ঢোকার আগে প্রতিষ্ঠানটি সাত বছরে মাত্র ৩৮৭ জন কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছিল।

 

ভোগান্তির যেন শেষ নেই

মালয়েশিয়ার প্রবাসীদের কাজের খবর নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। এর সদস্য ৭০ হাজার। প্রতিদিন এই গ্রুপে কয়েক শ কর্মী কাজের খোঁজ করেন। তাঁরা ছয় মাস, সাত মাস এমনকি এক বছর ধরে বেকার জীবন যাপন করছেন।

কর্মীদের এই কাজ না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আপনারা যেভাবে বলেন এবং প্রচার করেন, সে রকম পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। আমরা প্রতিদিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র পাঁচ হাজার ১৯০ জন কর্মী এখন পর্যন্ত কাজ পাননি।

কিন্তু মালয়েশিয়ার সূূত্র বলছে, মালয়েশিয়ায় কাজ করতে যাওয়া কয়েক লাখ কর্মী কাজ পাননি।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, এই সময়টা মালয়েশিয়া অনেক আগেই নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু এই প্রসেসিংয়ে সময়ের চেয়ে কর্মী বেশি ছিলেন। ফলে এই প্রক্রিয়ার দ্রুততার প্রয়োজন ছিল। আর যাঁরা গেছেন সবাই যে কাজ পাবেন, তারও কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন এটা মনিটর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করা প্রয়োজন, যে কমিটি এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে পারবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মির্জা ফখরুল

দুষ্কৃতকারীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দুষ্কৃতকারীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত
মির্জা ফখরুল

দুষ্কৃতকারীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই লোমহর্ষক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হচ্ছে। তাই দুষ্কৃতকারীদের কঠোর হাতে দমনের বিকল্প নেই। এ জন্য দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, না হলে ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় তিনি এ বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, নাসির উদ্দিনকে সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা বর্বর ও নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

একই সঙ্গে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের পৈশাচিক হামলায় নাছির উদ্দিন নিহতের ঘটনা সেই অপতৎপরতারই নির্মম বহিঃপ্রকাশ। আর অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এ ধরনের লোমহর্ষক ঘটনা বারবার ঘটানো হচ্ছে। তাই এসব দুষ্কৃতকারীকে কঠোর হাতে দমনের বিকল্প নেই।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নইলে ওত পেতে থাকা আওয়ামী লীগের দোসররা মাথাচাড়া দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠবে। নাছির উদ্দিনকে হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান ফখরুল। তিনি বিবৃতিতে নিহতের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানান।

মন্তব্য
ঈদ যাত্রায় স্বস্তি

বাস ট্রেন লঞ্চে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বাস ট্রেন লঞ্চে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ট্রেনে চড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে শিশুরা। তাই এত আনন্দ! গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

আসন্ন ঈদের আগে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। এদিন কর্মঘণ্টা শেষ হতেই ঘরমুখো মানুষের বেরিয়ে পড়ার ব্যাকুলতায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দেয়। তবে ঢাকা থেকে সড়কপথে বের হয়ে আর যানজটের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি ঘরমুখো যাত্রীদের।

শেষ কর্মদিবসে যানজট : রাজধানীর মহাখালী, রামপুরা, হাতিরঝিল, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, বিভিন্ন স্থানে এই যানজটের চিত্র দেখা গেছে। নীলক্ষেত নিউমার্কেট এলাকা, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাব, কলাবাগান, ধানমণ্ডি, আড়ং, কলেজগেট, শিশুমেলা শ্যামলী, মত্স্য ভবন এলাকা, শাহবাগ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যানজট ছিল।

রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় কথা হয় ট্র্যাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অফিস শেষে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বের হলাম।

আগে থেকেই টিকিট কাটা ছিল। তবে যানজটের কারণে যদি সময়মতো কাউন্টারে (নর্দা) যেতে না পারি, বাস মিস করতে পারি।’

সড়কপথে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ : ঈদ যাত্রার চতুর্থ দিন বাড়ির পানে ফেরা যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে সড়কপথেও। শুরুর কয়েক দিন বাস টার্মিনালগুলো ফাঁকা থাকলেও এখন বাস মালিকদের মনে যেমন স্বস্তি ফিরেছে, তেমনি নির্বিঘ্নে ঢাকা ছাড়তে পারছে মানুষ।

গতকাল কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীরা গ্রামের যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। চাঁপাই এক্সপ্রেসের সামনে রাজশাহীগামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১০ মিনিট হয় কাউন্টারে আসলাম। ১০-১২ জন ছিল সিরিয়ালে। মাত্র টিকিট পেলাম। আশা করছি, আল্লাহ ভালোভাবে গ্রামে পৌঁছে দেবেন।

সায়েদাবাদসহ আশাপাশের কিছু কাউন্টারে বাড়তি ভাড়া চাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন যাত্রী। গুলশানের যাত্রী রাজীব আহমেদ শনিবার চুয়াডাঙ্গায় গ্রামের বাড়ি যাবেন। গোল্ডেন লাইনের গোলাপবাগ কাউন্টারে গিয়ে এদিন সকালের কোনো বাসের টিকিট পাননি তিনি। বিকেলের এসি বাসের টিকিট আছে বলে জানান কাউন্টারে থাকা কর্মী ইয়াসিন। কিন্তু ভাড়া এক হাজার ৮০০ টাকা। যাত্রীরা জানান, অন্য সময় এই এসি বাসের ভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা হলেও বাড়তি ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

লঞ্চের কেবিনের টিকিট শেষ : লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছুটি শুরুর দিন বরিশালের লঞ্চগুলোর কেবিনের প্রায় ৯৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফিরতি টিকিটেরও চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। ধারণা করা হচ্ছে, ডেকেও যাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিকের থেকে কয়েক গুণ বেশি হবে। অন্য লঞ্চগুলোর কেবিনের টিকিটও বিক্রি শেষের দিকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডেকের যাত্রীর সংখ্যা বলে দেবে এবারের ঈদ যাত্রায় লঞ্চ মালিকদের কত লাভ হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, স্পেশাল সার্ভিসসহ বরিশাল-ঢাকা রুটে এবার মোট ১৯টি বিলাসবহুল লঞ্চ যাত্রী সেবায় নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া ভায়া রুটের আরো দুই-তিনটি লঞ্চ যাত্রী বহন করবে। লঞ্চ কাউন্টারগুলোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯টি লঞ্চে বিভিন্নমানের প্রায় পাঁচ হাজার কেবিন রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি লঞ্চই ডেকে হাজারের বেশি যাত্রী বহন করতে পারে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত : আবদুল্লাহপুরের বিভিন্ন কাউন্টারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়েছে বিআরটিএ।

 

মন্তব্য
দ্য ইনডিপেনডেন্টের দাবি

মায়ানমারে ফিরে সশস্ত্র যুদ্ধ করতে চায় রোহিঙ্গারা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
মায়ানমারে ফিরে সশস্ত্র যুদ্ধ করতে চায় রোহিঙ্গারা

নিজ মাতৃভূমিতে ফিরতে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। মোহাম্মদ আয়াস নামের ২৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা যুবক সংবাদমাধ্যমটিকে সশস্ত্র প্রস্তুতির আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য, জান্তা বাহিনী ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিহত করে নিজেদের ভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা।

তাঁরা এ প্রস্তুতি দীর্ঘদিন ধরে নিচ্ছেন। বিশেষ করে মায়ানমারে ২০২১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এ প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হয়।

২০২৪ সালের জানুয়ারির এক ভোরে ইন্ডিপেনডেন্টের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন মোহাম্মদ আয়াস। তখন কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে তিনি বনের গভীর দিয়ে যাচ্ছিলেন।

তবে তিনি কোথাও পালাচ্ছিলেন না। ফিরছিলেন মায়ানমারে, যেখান থেকে ২০১৭ সালে পালাতে হয়েছিল তাঁকে।

ওই সময় মায়ানমারের সেনাদের গুলির বৃষ্টিতে তাঁর বাবা প্রাণ হারিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, যারা তাঁর পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে এবং তাঁদের এসব দুর্ভোগের জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁরা।

আয়াস রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের বার্মিজ ভাষা শেখান। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মতো শত শত যুবক যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মায়ানমারের সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী যারা তাদের পথের বাধা হবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাঁরা সবাই এক।

আয়াস বলেন, আমরা প্রস্তুত। আমি আমার জনগণের জন্য মরতে প্রস্তুত।

নিজ মাতৃভূমিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। মায়ানমারে আমাদের অধিকার ও স্বাধীনতার যুদ্ধে আমার কী হবে, এ নিয়ে আমি ভাবি না।

কক্সবাজারের ক্যাম্পে কয়েক বছর ধরে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গা যুবক স্ব ইচ্ছায় সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছেন বলে দাবি তাঁর।

সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁদের মধ্যে নিজেকে কমান্ডার হিসেবে দাবি করা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁরা গোপনে মায়ানমারে যান। সেখানে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন।

সম্প্রতি, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শরণার্থী ক্যাম্পে গেলে তাঁকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে বর্বর অত্যাচার ও নির্মম গণহত্যা চালিয়ে মায়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই সময় জীবন বাঁচাতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। যারা এখন কক্সবাজারের ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সূত্র : ইন্ডিপেনডেন্ট

 

 

মন্তব্য
লাইলাতুল কদর

ঈমানদারদের জন্য জামায়াতে ইসলামী আমিরের প্রার্থনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈমানদারদের জন্য জামায়াতে ইসলামী আমিরের প্রার্থনা
শফিকুর রহমান

ঈমানদারদের জন্য পবিত্র লাইলাতুল কদরের নিয়ামত ও বরকত কামনা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অ্যাডমিনের দেওয়া পোস্টে এ প্রার্থনা করা হয়।

পোস্টে বলা হয়, ইয়া রব! আমাদের সব ঈমানদার ভাই-বোনকে পবিত্র লাইলাতুল কদরের পূর্ণ নিয়ামত ও বারাকাহ নসিব করুন। আমাদের ওপর রহম করুন, গুনাহখাতা ক্ষমা করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের অপমান-অপদস্থতা এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের মেহেরবানি করে মুক্তি দিন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, দ্বিনের পথে আমাদের সবাইকে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ