<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আবারও চলছে জোর আলোচনা। সংগত ও যৌক্তিকভাবে এই ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে কেউ কেউ আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও করা হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার আদালতের অনুমতি নিয়ে এই আবেদন করা হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি রিভিউ আবেদনটি করেন। তাঁদের পক্ষের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের চলতি অবকাশ ছুটির পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদন করা হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রিভিউ আবেদনে বলা হয়েছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জনগণের রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়। তাই এটি সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামোতে পরিণত হয়েছে, যা বাতিল করা যায় না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেক্ষাপট </span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন ছিল সেটি। সব রাজনৈতিক দলের সম্মতির ভিত্তিতে এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয়েছিল।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিএনপি সরকার এক বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজন করে। দেশের সব কটি বড় রাজনৈতিক দল সে নির্বাচন বয়কট করেছিল। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সেই উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন দাবি করে। কিন্তু বিএনপি শুরু থেকে সে দাবি নাকচ করে আসছিল। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরে কূটনীতিকদের সমঝোতা চেষ্টা এবং বিরোধী দলগুলোর তীব্র আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য সংসদে বিল আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিরোধী দলগুলোকে আলোচনায় আসার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের চতুর্থ কার্যদিবস অর্থাৎ ২৪ মার্চ রাতে জাতীয় সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিলটি উত্থাপন করা হয়। ২৬ মার্চ ভোররাতে বহুল আলোচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল সংসদে পাস হয়, যা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নামে পিরিচিত। এরপর এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অসংগতির পূর্ণাঙ্গ রায়</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কিন্তু ১৯৯৮ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট এই সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। পরের বছরই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রিট আবেদনকারীরা। সেই আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রসপেক্টেভলি (ভবিষ্যতের জন্য) বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো, যা সাধারণত আইনসিদ্ধ নয়, প্রয়োজন তা আইনসিদ্ধ করে। জনগণ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ ধরনের সনাতনতত্ত্বের ভিত্তিতে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন পূর্বে উল্লিখিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সংসদ ইচ্ছা করলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারকদের বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংক্ষিপ্ত এই রায়ের ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়, তখন এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন। তিনি যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন তাতে পরবর্তী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকার বিষয়টি ছিল না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমনকি সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও সংসদ বহাল থাকার কথাও যুক্ত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের এই বিশাল অসংগতি নিয়ে তখন জোরালো বিতর্ক ওঠে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ১৯৯৬ সালের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর আইন সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি এবং মৌলিক কাঠামোকে নষ্ট করে দেওয়ার কারণে বিতর্কিত আইনটি অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং অকার্যকর বলে গণ্য হয়েছে। রায়ে তিনি আরো বলেন, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সংসদের কর্তৃত্বাধীন। সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের একটি যুক্তিসংগত সময়ের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া যেতে পারে এবং এই সময়টি ৪২ দিন হতে পারে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বাভাবিক এবং সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রায়ে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সক ব্যক্তি এবং প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হন), বিচারপতি এস কে সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হন) এবং বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হন)। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে বিচারপতি মো. ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেন। বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া এ রায় নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরীসহ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বেশ কয়েকজন বিচারপতি, আইনজীবী, রাজনীতিক ও বিশিষ্টজন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>