<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া অন্যতম ব্যবসায়ী সামিট গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ আজিজ খান। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বের পাশাপাশি তিনি সে দেশের শীর্ষ ধনী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভিনব কায়দায় রাষ্ট্রকে ঠকানো সামিট গ্রুপের আরেকটি দুর্নীতির অনুসন্ধান করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। লভ্যাংশ বিতরণে উৎস কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও তা ফাঁকি দিয়েছে সামিট। যার পরিমাণ এক হাজার ১১২ কোটি টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামিট পাওয়ার লিমিটেডে শেয়ার থাকা সামিট করপোরেশন লিমিটেডে লভ্যাংশ প্র্রদানের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ উৎস কর না কেটে এবং সামিট করপোরেশন লিমিটেডে শেয়ার থাকা সিঙ্গাপুরের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালে লভ্যাংশ প্র্রদানে ১৫ শতাংশ উৎস কর না কেটে এই ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিভাবে এই কর আদায় করা হবে, জানতে চাইলে কর অঞ্চল-২-এর কমিশনার ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন আদায়ের প্রক্রিয়ায় যাব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিআইসির অনুসন্ধানের বিষয়ে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে সিআইসি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় টিডিএস-উৎস কর কর্তন কেলেঙ্কারি। প্র্রায় দুই মাস ধরে সামিট পাওয়ারের সব ধরনের শেয়ারহোল্ডিং, লভ্যাংশ ঘোষণা ও প্র্রদানের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই কেলেঙ্কারি উদঘাটিত হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামিট পাওয়ার লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ৬৭ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৯০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডিংয়ে রয়েছে সামিট করপোরেশন লিমিটেড, ইউরোহাব ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, প্র্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিনিয়োগের পরিমাণ সামিট করপোরেশনের ৬৩.১৯ শতাংশ, ইউরোহাব ইনভেস্টমেন্টের ৩.৬৫ শতাংশ, প্র্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৮.৫২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী ১৪.৬৪ শতাংশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়কর আইন, ২০২৩-এর ১১৭ ধারা মতে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোনো কম্পানি তার লভ্যাংশ প্র্রদানের সময় উৎস কর কর্তনের বিধান রয়েছে; অর্থাৎ এই অর্থ কেটে সরকারকে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে মিলেছে, সামিট পাওয়ার তার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সামিট করপোরেশনে লভ্যাংশ প্র্রদানের সময় উৎস কর কাটেনি। তবে ঠিকই অন্য প্র্রতিষ্ঠান বা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ২০ শতাংশ হারে উৎস কর কেটেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামিট পাওয়ার লিমিটেডের বার্ষিক আর্থিক প্র্রতিবেদন ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত দেখা যায়, সামিট করপোরেশনকে দেওয়া লভ্যাংশের ক্ষেত্রে প্র্রতিষ্ঠানটি ৩১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা উৎস কর কাটেনি। প্র্রতিদিন জরিমানা বেড়ে ফাঁকির এই তথ্য দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ কোটি সাত লাখ টাকায়। একই ঘটনা ঘটে সামিট করপোরেশন তার লভ্যাংশ সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালে দেওয়ার ক্ষেত্রে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে সামিট পাওয়ার এনবিআর থেকে আইনের একটি ব্যাখ্যা বা স্পষ্টীকরণ নেয়। সেখানে বলা হয়, সামিট পাওয়ার থেকে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালে লভ্যাংশ প্র্রেরণে উৎস কর দিতে হবে না। সুবিধাভোগী কম্পানি হওয়ায় এই ব্যাখ্যা দেয় এনবিআর ২০২৩ সালের শুরুতে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে লভ্যাংশ যেহেতু সামিট পাওয়ার তার সুবিধাভোগী কম্পানি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালে পাঠাচ্ছে না বরং সামিট করপোরেশন লভ্যাংশ দিচ্ছে সিঙ্গাপুরের এই কম্পানিকে, তাই এ ক্ষেত্রে আগের স্পষ্টীকরণের মাধ্যমে উৎস কর না কাটার সুযোগ নেই বলে এ ক্ষেত্রেও ফাঁকি হয়েছে বলে অনুসন্ধানে তথ্য মেলে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি অনুযায়ী, লভ্যাংশের ওপ্রর ১৫ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামিট করপোরেশনের ৯৯.৯৯ শতাংশ মালিকানায় থাকা সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালে লভ্যাংশ পাঠানোর সময়ে ২০১৮-১৯ করবছর থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত ৪৩৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা উৎস কর কাটা হয়নি। জরিমানাসহ ফাঁকির অঙ্ক এখন দাঁড়িয়েছে ৬৪৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনবিআরের সিদ্ধান্ত</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামিট পাওয়ার লিমিটেড এবং সামিট করপোরেশন লিমিটেড এনবিআরের কর অঞ্চল-২-এর অধীন। প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ প্র্রদানের ক্ষেত্রে এনবিআরের করনীতি উইং হতে দেওয়া পূর্বের স্পষ্টীকরণ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর অঞ্চলটির অনুরোধের পরিপ্র্রেক্ষিতে এনবিআর আগের দেওয়া স্পষ্টীকরণ বাতিল করে নতুন স্পষ্টীকরণ দেয়। যাতে বলা হয়েছে, সামিট পাওয়ার লিমিটেড কর্তৃক সামিট করপোরেশন লিমিটেডকে লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে উৎস কর কর্তন প্র্রযোজ্য হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বিদ্যমান দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি মতে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অনিবাসী কম্পানি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অনুকূলে বাংলাদেশে নিবাসী কম্পানি সামিট করপোরেশন লিমিটেড কর্তৃক লভ্যাংশ প্র্রদানের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে উৎস কর কর্তন প্রযোজ্য হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর অঞ্চলটির কমিশনার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্পষ্টীকরণ যখন ইনভ্যালিড হয়ে যায়, তখন এটার দ্বারা যে সুবিধাগুলো পেয়েছে সেটি থেকে তারা বঞ্চিত হবে। তো আমরা সেভাবে চিন্তা করছি। মূল কথা হচ্ছে, যখন ইনভ্যালিড হয়, তখন নতুন করে কর প্রযোজ্য হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উল্লেখ্য, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আজিজ খান এবং তাঁর পরিবারের ১১ জন সদস্যের ব্যাংক হিসাব এখন জব্দ রয়েছে।</span></span></span></span></p>