জাহাজভাড়া বেড়েছে তিন গুণ

পোশাকে ছাড় চান ক্রেতারা

রাশেদুল তুষার, চট্টগ্রাম
রাশেদুল তুষার, চট্টগ্রাম
শেয়ার
পোশাকে ছাড় চান ক্রেতারা

লকডাউন-পরবর্তী সময়ে দেশের পোশাকশিল্প যখন নতুন নতুন কার্যাদেশ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে তখন নতুন দুশ্চিন্তা ভর করেছে উদ্যোক্তাদের মনে। নানা অজুহাতে অনেক বায়ার সম্প্রতি ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছাড় (ডিসকাউন্ট) চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। এই সময়ে এমন ছাড়ের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েক মাসের ব্যবধানে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম সমন্বয় করতে চাচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। যেহেতু পণ্য পরিবহনের খরচ বায়াররা বহন করেন তাই সে দায়ভার পণ্য ছাড় থেকেই সমন্বয় করতে চান তাঁরা।

এতে বাংলাদেশের গার্মেন্ট মালিকরা লাখ লাখ ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন।

শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার ও গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ-আমেরিকার যেকোনো বন্দরে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি পণ্যবাহী কনটেইনার পাঠাতে খরচ হতো আড়াই থেকে সাড়ে চার হাজার ডলার। কিন্তু এখন তা তিন গুণ বেড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৮ হাজার ডলারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মুনতাসির রুবাইয়াত বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব কার্গো ইউরোপে যাচ্ছিল সেগুলোর পরিবহন খরচ আট মাসের ব্যবধানে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। একই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রগামী কার্গোর ক্ষেত্রেও।’

হঠাৎ সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে এমন আকাশচুম্বী খরচ বাড়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘সারা বিশ্বে করোনার কারণে যে অচলাবস্থা ছিল তা কাটিয়ে শিপিং লাইনগুলো আবার যখন জাহাজ পরিচালনায় ফিরে আসছে তখন ফ্রেইট বাড়িয়ে আগের লোকসান পোষানোর চেষ্টা করছে। ইউরোপে একটি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার পরিবহনে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার ডলার খরচ পড়ত।

এখন সেটা বেড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর আমেরিকাগামী কনটেইনার পরিবহন খরচ চার হাজার ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, সেখানে এখন আট থেকে ৯ হাজার ডলার খরচ হচ্ছে। এ কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এর সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে লড়াই করতে হচ্ছে।’

গার্মেন্টশিল্পে এর প্রভাব বর্ণনা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও আরএসআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ‘এখন বায়ারদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

তারা প্রাইস অনুযায়ী আমাদের পেমেন্ট দিচ্ছে আবার যখন পণ্য ডেলিভারি নিচ্ছে তখন বাড়তি ফ্রেইট নিতে হচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে যে অর্ডারগুলো আসছে কিংবা নতুন বুকিংগুলো আসছে সেখানে প্রাইস কমানোর জন্য প্রচুর চাপাচাপি করছে। কারণ প্রান্তিক পর্যায়ে তাদের প্রচুর দাম পড়ে যাচ্ছে। এটাকে মিনিমাইজ করার জন্য আমাদের কাছে তারা দাবি করছে, ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম প্রাইসে যেন আমরা বুকিং দিই।’

ক্রেতারা দাম সমন্বয় করতে যে ছাড় চাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশি গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এই মূল্যছাড় থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্বয়ং বিজিএমইএর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপও। এ জন্য শুধু এক মৌসুমেই তাঁকে তিন লাখ ডলার বা আড়াই কোটি টাকার বেশি ছাড় দিতে হতে পারে—কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য তিনি নিজেই দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যতটুকু সক্ষমতা ছিল সে অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজে লাগাতে পারিনি। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে উৎপাদনক্ষমতা কমাতে হয়েছে। এ কারণে ১৫ থেকে ২০ দিন পেছনে ছিলাম। এই বিলম্বের কারণে ভিত্তি করে বায়ার ১০ শতাংশ ছাড় চেয়ে বসেছে। সম্প্রতি হিসাব করে দেখলাম, শুধু একটা মৌসুমে আমাকে প্রায় তিন লাখ ডলার ছাড় দিতে হবে। এই ছাড় দিতে বাধ্য।’

বাংলাদেশি গার্মেন্ট মালিকরা এ যাত্রায় এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড—যেখানে পণ্য সরবরাহে বিক্রেতার পরিবর্তে ক্রেতা নিজ দায়িত্বে, খরচ এবং পণ্য পরিবহনের সময়কালীন ঝুঁকি গ্রহণ করে) করেন বলে বেঁচে গেছেন—এমনটা মনে করেন এই বিজিএমইএ নেতা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভাগ্যিস আমরা এফওবি করি, এলডিপি (পণ্য তৈরি করে বায়ারের ওয়্যারহাউসে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত) করি না। যদি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতাম তাহলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ কারখানা মারা যেত। অর্ডার বাড়ছে অবশ্যই; কিন্তু ফ্রেইটের চার্জ যেহেতু বেড়ে গেছে তাই বিভিন্ন অজুহাতে বায়ার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড় চাচ্ছে। অর্থাৎ ১০ ডলারে এক থেকে দেড় ডলার যাবে; কিন্তু তা আমার উৎপাদন খরচ (সিএম) থেকে। মার্কেট ধরে রাখতে আমরা এমনিতেই কম সিএমে অর্ডার নিই।’ এটা যদি চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের অনেক কারখানা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বৈশ্বিক পণ্যবাজার (ডলারে)

শেয়ার

মুদ্রাবাজার

শেয়ার

করপোরেট কর্নার

শেয়ার
করপোরেট কর্নার

যমুনা ব্যাংক : যমুনা ব্যাংকের বার্ষিক ব্যাবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান রবিন রাজন সাখাওয়াত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যাংকের পরিচালকরা। ব্যাংকের এমডি ও সিইও ইলিয়াস উদ্দীন আহম্মদ সম্মেলন পরিচালনা করেন।

এ ছাড়া প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভাগীয় প্রধানরা ও দেশের বিভিন্ন শাখার ব্যবস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

 

করপোরেট কর্নার

সোনালী ব্যাংক : সোনালী পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে বিবিধ ফি ও চার্জ আদায়ে সোনালী ব্যাংক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহমান তরফদার এবং সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি সুভাষ চন্দ্র দাস চুক্তি স্বাক্ষর শেষে চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন। এ সময় ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

 

করপোরেট কর্নার

বিআরবি হসপিটালস : বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডে আইভিএফ সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে সেন্টারের উদ্বোধন করেন বিআরবি হসপিটালসের এমডি মো. পারভেজ রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেপাটোবিলিয়ারি ও পেনক্রিয়াটিক সার্জন ও বাংলাদেশের লিভার ট্রান্সপ্লান্টের পথিকৃত অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

 

করপোরেট কর্নার

হামদর্দ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত হামদর্দের আধুনিক কারখানায় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হামদর্দের আধুনিক কারখানার বিভিন্ন ইউনিট ঘুরে দেখেন এবং কারখানা প্রাঙ্গণে ভেষজ বৃক্ষ রোপণ করেন সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন হামদর্দ বাংলাদেশের চিফ মুতাওয়াল্লি ও এমডি ড. হাকিম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

স্যাম অল্টম্যান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ওপেনএআই

শেয়ার
স্যাম অল্টম্যান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ওপেনএআই

চ্যাটজিপিটি প্রো প্ল্যানের কারণে ধারণার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ওপেনএআইয়ের। এক্স পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন কম্পানির সিইও স্যাম অল্টম্যান। তিনি বলেন, প্রো প্ল্যানের মাসিক খরচ ২০০ ডলার। এই দাম আমারই ঠিক করা।

সে সময় মনে হয়েছিল এই পরিমাণ ফি থেকে ভালো আয় হবে। কিন্তু বাস্তবে ধারণার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। কারণ প্রত্যাশার চেয়ে বেশিসংখ্যক ব্যবহারকারী প্রো প্ল্যানটি ব্যবহার করছেন। গত বছর উন্মুক্ত করা চ্যাটজিপিটি প্রো প্ল্যান।
বর্তমানে ওপেনএআইয়ের মার্কেট ভ্যালু ১৫৭ বিলিয়ন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ