ঢাকা, সোমবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
১৫ পৌষ ১৪৩১, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
১৫ পৌষ ১৪৩১, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কোরআন থেকে শিক্ষা

পর্ব, ৫৪৪
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘তারা কি লক্ষ করে না, মহান আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের পুনরায় সৃষ্টি করতে পারেন? তিনি তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেছেন, যা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর পরও সীমা লঙ্ঘনকারীরা কুফুরি ছাড়া ক্ষান্ত হয় না। আপনি বলুন, যদি তোমরা আমার রবের রহমতের ভাণ্ডারের অধিকারী হতে তাহলেও ব্যয় হওয়ার আশঙ্কায় তোমরা তা ধরে রাখতে। মানুষ তো খুবই কৃপণ।

’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯৯-১০০)

আয়াতগুলোতে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং মানুষের কৃপণ স্বভাবের কথা বর্ণিত হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১.  মহান আল্লাহ কোনো ধরনের নমুনা ছাড়া আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং ওই সময়ে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।

২.  কিয়ামতের দিন হিসাবের জন্য মানবজাতিকে আবার জীবিত করা হবে।

মানুষের পুনর্জীবন খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কারণ যে আল্লাহ মানুষকে জীবিত করেছেন তার জন্য আবার জীবিত করা আরো সহজ।

৩. মহান আল্লাহ পুরো সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা হিসেবে অসংখ্য নিদর্শন থাকার ওপরও অনেক মানুষ তাঁর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখে না। কারণ তাদের ঔদ্ধত্য ও অহমিকা রয়েছে।

৪. মানুষের মধ্যে দুটি মন্দ স্বভাব রয়েছে। তাহলো খুবই কৃপণ ও লোভী।

৫. মন্দ স্বভাবের কারণে মানুষ দ্বিনের পথে অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্য করে। আর অর্থ-সম্পদ উপার্জনে তার মধ্যে খুবই লালসা কাজ করে। (আত-তাফসিরুল মুনির, ১৫/১৯০)

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

পর্ব, ৬৪৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শিগগির আমি তোমাদের আমার নিদর্শনাবলি দেখাব; সুতরাং তোমরা আমাকে ত্বরা করতে বোলো না। তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বোলো এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে? হায়, অবিশ্বাসীরা যদি সে সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ থেকে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদের সাহায্য করাও হবে না। বস্তুত তা তাদের ওপর আসবে অতর্কিতভাবে এবং তাদের হতভম্ব করে দেবে...।’ 

(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৭-৪০)

আয়াতগুলোতে আল্লাহর সাহায্য ও শাস্তি লাভে তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. আয়াতে তাড়াহুড়া না করার নির্দেশ দ্বারা ত্বরাপ্রবণতা দমন করা উদ্দেশ্য। কেননা ত্বরাপ্রবণতা মানুষের স্বভাবজাত।

২. আল্লাহ তাড়াহুড়াসহ মানুষের যাবতীয় মন্দপ্রবণতা দমনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেন মানুষ মন্দপ্রবণতায় সায় দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

৩. আয়াতে সম্মুখ ভাগকে ‘চেহরা’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। কেননা চেহারা মানুষের সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও সম্মানজনক অঙ্গ।

(আল-কোরআন তাদাব্বুর ওয়া আমল : ১৮/৪)

৪. মুসলিমরা অমুসলিমদের শাস্তি প্রার্থনায় তাড়াহুড়া করবে না। কেননা আল্লাহ স্বীয় জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকেই তাদের অবকাশ দেন।

৫. একইভাবে সাহায্য পেতে বিলম্ব হলে মুসলিমরা ধৈর্যহারা হবে না, বরং আল্লাহর কাছে সাহায্য লাভের প্রার্থনা করবে। (আত-তাহরির ওয়াত-তানভির : ১৭/৬৭)

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মনীষীদের কথা

শেয়ার
মনীষীদের কথা

সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য যার জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য একটি পদক্ষেপ রয়েছে।

জুনজুন মিসরি (রহ.)

 

 

 

মন্তব্য

প্রশ্ন-উত্তর

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
শেয়ার
প্রশ্ন-উত্তর

অপারেশনের মাধ্যমে জমাট আঙুল পৃথক করার বিধান

প্রশ্ন : আমার ছেলে দুই আঙুল জমাট অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছে। এখন আমি অপারেশনের মাধ্যমে তার আঙুল দুটিকে পৃথক করতে ইচ্ছা করেছি। এরূপ করা জায়েজ হবে কি?

ইসহাক, বাড্ডা

উত্তর : অঙ্গহানির আশঙ্কা না হলে অপারেশনের মাধ্যমে যমজ আঙুলগুলোকে পৃথক করার অনুমতি আছে। (ফাতাওয়ায়ে কাজি খান : ৪/৩৬৮, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১২/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/৪২৫)

 

মন্তব্য

জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার প্রতিভূ ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.)

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার প্রতিভূ ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.)

ইবরাহিম ইবনে ইয়াজিদ আন নাখয়ি (রহ.) ফিকহশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ইমাম ও নির্ভরযোগ হাদিস বর্ণনাকারী। তিনি ছিলেন সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উত্তরসূরি। তিনি তা অর্জন করেন মামা আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ (রহ.)-এর কাছ থেকে। যিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর ছাত্র ছিলেন।

এ ছাড়া ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) আলকামা, মাসরুক, আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রহ.)-এর কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেন।

তিনি ছিলেন চিন্তা, গবেষণা ও মাসআলা উদ্ভাবনে সূক্ষ্ম জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। তাঁর ব্যাপারে এটাও বলা যায় যে তিনি ইরাকে ধর্মীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানবীয় জ্ঞান-বুদ্ধির প্রয়োগের মাধ্যমে মাসআলা উদ্ভাবনের সূচনা করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর উত্তরসূরি ছিলেন হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমান (রহ.)।

আর তাঁর উত্তরসূরি ছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)। পাশাপাশি তিনি একজন উঁচু স্তরের বুজুর্গ ছিলেন। অধিক ইবাদত, আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহভীতির জন্য মানুষ তাঁকে বিশেষ সমীহ ও সম্মান করত।

ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) ৪৭ হিজরিতে ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর বংশপরম্পরা নিম্নরূপইবরাহিম ইবনে ইয়াজিদ ইবনে আসওয়াদ ইবনে আমর বিন রাবিআ। তাঁর উপনাম আবু ইমরান বা আবু আম্মার। কুফায় বসবাস করায় তাঁকে কুফি এবং নাখা গোত্রের সদস্য হওয়ায় তাঁকে নাখয়ি বলা হয়। নাখা ইয়েমেনের একটি বড় গোত্র। অনেকেই মনে করেন, ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) ছিলেন মহানবী (সা.)-এর দোয়ার ফসল।
তিনি নাখা গোত্রের জন্য দোয়া করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে এই নাখা গোত্রের লোকদের জন্য দোয়া করতে অথবা প্রশংসা করতে শুনেছি। এমনকি তা শুনে আমার ভেতর আকাঙ্ক্ষা হয় আমি যদি তাদের একজন হতাম।

(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৩৮২৬)

নাখা গোত্রে এই দোয়ার প্রতিফলন নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ তাদের ভেতর বহু বড় আলেম সৃষ্টি করেন। যেমনইবরাহিম নাখয়ি (রহ.)-এর পিতা ইয়াজিব ইবনে আসওয়াদ, তাঁই দুই মামা আসওয়াদ ও আবদুর রহমান এবং তাঁর চাচা আলকামা (রহ.)। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) ফিকহের জন্য বিখ্যাত পরিবারে জন্ম নেন। তিনি তাদের কাছ থেকে ফিকহ শেখেন। অতঃপর আমাদের সঙ্গে বসে হাদিস অর্জন করেন এবং তা তাঁর ফকিহ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। শৈশবে পিতার সঙ্গে হজের সফরে আসেন তিনি। এ সময় তিনি উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বরকতময় সান্নিধ্য লাভ করেন।

ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী ও ধীশক্তির অধিকারী একজন আলেম। তিনি একই সঙ্গে একজন কোরআনের হাফেজ, প্রসিদ্ধ কারি, মুহাদ্দিস ও ফকিহ ছিলেন। তবে ফিকহশাস্ত্রে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। যেসব মহান মনীষীর হাতে ফিকহশাস্ত্রের ভিত রচিত হয়েছিল তিনি তাদের অন্যতম। তরুণ বয়সেই তিনি পাঠদান শুরু করেন।

ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) ছিলেন একজন আল্লাহভীরু ও অধিক ইবাদতকারী বুজুর্গ। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন এবং এক দিন রোজা ছেড়ে দিতেন। সময় পেলেই তিনি নামাজ পড়তেন। তিনি অনুভব করতেন নামাজের সময় সত্যিই তিনি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ফলে নামাজের পর তাঁর চোখে-মুখে আল্লাহর ভয় ফুটে উঠত। আমাশ (রহ.) বলেন, আমি কখনো কখনো ইবরাহিম (রহ.)-কে নামাজ পড়তে দেখতাম। তিনি আমাদের কাছে ফিরে এসে এমনভাবে কান্না করতেন যেন তিনি অসুস্থ।

ইবরাহিম ইবনে নাখয়ি (রহ.) খুব কম কথা বলতেন। আশআস ইবনে সাওয়ার (রহ.) বলেন, আমি ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.)-এর কাছে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত বসেছিলাম। তিনি কোনো কথা বলেননি। তাঁকে কোনো প্রশ্ন করা না হলে তিনি কথা বলতেন না। আল্লাহ তাঁকে উত্তম চরিত্র দান করেন। তিনি কারো সঙ্গে বিবাদ করতেন না, বিতর্ক করতেন না। ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) ও তাঁর স্ত্রী প্রত্যেক বৃহস্পতিবার কান্না করতেন। তারা বলতেন, আজ আমাদের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে।

মহান এই মনীষী ৯৬ হিজরিতে কুফায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৯ বছর। আল্লাহ তাঁর কবরকে শীতল করুন। আমিন।

সূত্র : সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৫২১; আল আনসাব : ১৩/৬৩।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ