<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর মারা গেছে মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থী আরাফাত হুসাইন (১২)। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যসচিব তারেক রেজা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি জানান, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হৃদযন্ত্র বন্ধ) হয়ে তার মৃত্যু হয়। প্রথম দিকে শিশু আরাফাতের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তবে গত এক মাস থেকে তা অবনতি হতে থাকে। এর আগে তার তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পরে উন্নত চিকিৎসা দিতে তাকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ লক্ষ্যে আজ ২৪ ডিসেম্বর তার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় গঠিত টিমের সদস্য ডা. হুমায়ুন কবির হিমু জানান, পাঁজরে গুলি লাগার কারণে তার ফুসফুস ও মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আরাফাতের বড় ভাই হাসান আলী জানান, ৫ আগস্ট বিকেলে আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়ে আজমপুর থানার সামনে গেলে সেখানে সে গুলিবিদ্ধ হয়। একটি গুলি তার পাঁজরের নিচ দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে আসে। সেই গুলিতে তার ফুসফুস ছিদ্র হয়ে যায়। একই সঙ্গে মেরুদণ্ড গুঁড়া হওয়ার পাশাপাশি পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে থেকে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হলে পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে পাঠানো হয়। এর পর থেকে সে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবারের সদস্যরা জানান, গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আরাফাতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আরাফাত রাজধানীর আজমপুরে পাকুরিয়া এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। সে উত্তরা জামিয়া রওজাতুল উলুম মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জুলাই অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেলের খসড়া তালিকা অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৮৫৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। আরাফাতের মৃত্যুর পর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮৫৯ জনে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রবিবার রাত ১টায় আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। পোস্টে বলা হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহীদী মিছিলে যোগ দিয়েছে আমাদের আরো এক ভাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শোকবার্তা : আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শোকবার্তা দিয়েছেন সংগঠনটির সেল সম্পাদক (দপ্তর সেল) জাহিদ আহসান। শোকবার্তায় বলা হয়, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহীদের মিছিল ভারী করে ২২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ১২ বছর বয়সের কিশোর গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধা, গুলিবিদ্ধ আরাফাত শাহাদাতবরণ করেছেন। শাহাদাতবরণ যেভাবে আমাদের বেদনাতুর করে, সেভাবেই সাহস এবং উৎসাহ জোগায় নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের। আমরা শহীদদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে একবিন্দুও পিছপা হব না। শহীদ আরাফাতের মৃত্যুসহ জুলাই গণহত্যার কুশীলব শেখ হাসিনা, তাঁর সঙ্গী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং গুলি চালানো বাহিনীর সব সদস্যকে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। শহীদ আরাফাতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জুলাই অভ্যুত্থানে বিভাজন দূর হয়েছে : নাহিদ</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত জানাজায় পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, প্রেস সচিব শফিকুল আলম, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী ও মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম এবং সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনা সরকার সমাজে বিভাজন তৈরি করে রেখেছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা তা দূর করেছি। আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছি। শহীদ ও আহত পরিবারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভূষিত করে পুনর্বাসন করা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। বিগত সরকারের মাদরাসা ছাত্রদের ওপর ক্ষোভ ছিল, সে সময় এসব শিক্ষার্থী বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়েছে। ২০১৩ সালে তাদের ওপর পুলিশি নিপীড়নের বিষয়টি আমরা দেখেছি। তারা রাস্তায় নেমে লড়াই করায় আমরা তাদের স্যালুট জানাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানাজার আগে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহীদ আরাফাত একজন শিশু। দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে সে রাস্তায় নেমেছিল। এই শহীদ মা-বাবার সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমাদের আর নেই। আমাদের শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। শহীদ ও আহতদের পরিবারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব আমাদের। গণহত্যার বিচার করা এই সরকারের প্রধান কাজ। সব গণহত্যা ও গুম-খুনের বিচারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে সারজিস আলম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা যেন খুনি হাসিনাকে ভুলে না যাই। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের যেন বিচার নিশ্চিত করা হয়। আমরা যেন শহীদ পরিবারকে এতটুকু বলতে পারি, যারা খুন করেছে, বাংলাদেশের মাটিতে তাদের বিচার হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>