<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফৌজদারি মামলা তদন্তে একটি স্বতন্ত্র, কার্যকর, দক্ষ, নির্ভরযোগ্য, জনবান্ধব ও প্রভাবমুক্ত তদন্ত সংস্থা গঠন প্রয়োজন বলে মনে করে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন। তদন্ত সংস্থাটি হবে পুলিশ বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর নিয়োগ, চাকরির শর্ত, নিয়ন্ত্রণ, বাজেট, অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক বিষয় একটি স্বতন্ত্র সংগঠন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোভুক্ত হবে। প্রস্তাবিত ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা বিচার বিভাগের তদারকিতে স্বতন্ত্র অ্যাটর্নি সার্ভিসের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে। ফলে সংস্থাটি রাজনৈতিক ও অন্যান্য অপেশাগত প্রভাবমুক্ত হয়ে ফৌজদারি মামলার তদন্ত করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এমন সুপারিশ করে প্রাথমিক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কমিশন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা বিচারপ্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা বাড়াবে। প্রসিকিউশনের তদারকিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষায়িত বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে তদন্তকারী সংস্থা অনেক দ্রুত ও কার্যকরভাবে মামলার তদন্ত করতে পারবে। এতে তদন্তের কাজের মান বাড়বে। গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে জনগণের কাছে। পুলিশ বাহিনী থেকে তদন্তকারী সংস্থাকে আলাদা করলে তদন্তপ্রক্রিয়ায় সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের অবহেলা ও অসদাচরণ কমবে। রাজনৈতিক ও অপেশাগত প্রভাবমুক্ত হয়ে মামলার তদন্ত করতে পারবেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এতে মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মো. মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের কমিশন গত ডিসেম্বরে এই প্রতিবেদন দাখিল করে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় তদন্ত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ফৌজদারি মামলার গতি-প্রকৃতি ও ফলাফল প্রাথমিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভরশীল। তদন্ত কর্মকর্তা সৎ, সাহসী, দক্ষ ও পেশাদার না হলে তদন্ত প্রতিবেদনে নানা রকম দুর্বলতা থেকে যায়। এ ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হচ্ছে না। তদন্ত কার্যক্রমের এসব সমস্যার কারণে বেশির ভাগ ফৌজদারি মামলায় আসামি খালাস পাচ্ছে। বেশির ভাগ ফৌজদারি মামলা হয় থানায়। এসব মামলায় তদন্তের দায়িত্বও থাকে পুলিশের। এ ছাড়া ব্যক্তির করা নালিশি মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্বও অনেক সময় পুলিশের ওপর অর্পিত হয়। পুলিশ পরিচালিত দ্রুত ও মানসম্পন্ন তদন্তের ওপর মামলার ফলাফল অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফৌজদারি মামলার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো মিথ্যা মামলা অথবা এমন মামলা যাতে মিথ্যা তথ্য মিশ্রিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তিদের সঙ্গে নির্দোষ ব্যক্তিদেরও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার প্রকৃত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করা হয় বা মূল ঘটনাকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে তদন্ত সুষ্ঠু না হলে নিরপরাধ ব্যক্তির হয়রানির আশঙ্কা থাকে বা প্রকৃত অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আমাদের দেশে বিরোধী পক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা ও পুলিশকে ব্যবহারের মাধ্যমে হেনস্তার ঘটনা অহরহ ঘটে। তার ওপর রয়েছে পুলিশের কিছু সদস্যের দুর্নীতি, যা রোধ করতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও অসৎ উদ্দেশ্যে পুলিশকে যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে পুলিশের ব্যাপারে এক ধরনের ভীতি। যে কারণে পুলিশকে সাধারণ মানুষ বন্ধু না ভেবে তাদের এড়িয়ে চলে। তবে এটাও সত্য, পুলিশের আচরণ উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও পুলিশের কোনো নিবেদিত একক ইউনিট নেই। বরং একাধিক বিভাগকে একই ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে পুলিশের বিদ্যমান তদন্তব্যবস্থা যথেষ্ট সুসংগঠিত ও সুদক্ষ নয়। মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সময় সরকারি প্রসিকিউটরের তদন্ত তদারকির সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সমন্বয়ের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই আদালতে মামলার বিচার শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার বৈশিষ্ট্য</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমিশন বলছে, তদন্ত সংস্থা ও পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বের বিভাজন নির্দিষ্ট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব যেন পুলিশের ওপর থাকে। সাধারণত কোনো মামলা হওয়ার পরই কেবল তদন্ত সংস্থা কাজ শুরু করবে। তবে জরুরি ক্ষেত্রে এবং ঘটনার জটিলতা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ আনুষ্ঠানিক মামলার আগেও সম্ভাব্য তদন্তের অংশ হিসেবে তদন্ত সংস্থার সহায়তা নিতে পারবে। কোনো মামলার তদন্ত শুরুর প্রথম পর্যায় থেকেই তদন্তকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাটর্নি বা প্রসিকিউটরের তদারকিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচলিত পুলিশ বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার কাজের সুনির্দিষ্ট বিভাজন থাকবে। সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন এবং যথাযথ বিধান সংবলিত নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে বলেও সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিবেদনে সরকারি মামলা পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অ্যাটর্নি সার্ভিস হবে একটি স্থায়ী পেনশনযোগ্য সরকারি চাকরি। সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নিয়োগপদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, বেতনকাঠামোসহ আর্থিক সুবিধাদি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে যথাযথ বিধানসংবলিত আইন থাকবে। পর্যাপ্ত অবকাঠামো, বাজেট বরাদ্দ ও সহায়ক জনবলের ব্যবস্থা থাকবে। প্রস্তাবিত সার্ভিসে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেলা ইউনিট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের দুটি ইউনিট থাকবে। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট। আর সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, যুগ্ম জেলা অ্যাটর্নি, অতিরিক্ত জেলা অ্যাটর্নি ও জেলা অ্যাটর্নির সমন্বয়ে গঠিত হবে জেলা ইউনিট।</span></span></span></span></span></p>