ইট-পাথরের নগরীতে সবুজের দেখা ও নির্মল বায়ু পাওয়া খুবই ভার। তবে সরেজমিনে গেলে প্রকৃতিপ্রেমীদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন)। দেশের জাতীয় এই উদ্ভিদ উদ্যানটি ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে কিছুটা দূরে মিরপুরে অবস্থিত।
উদ্যানটি ঢাকা মেগাসিটির অন্যতম প্রধান সবুজ এলাকা হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী আসেন।
দেখেন অসংখ্য প্রজাতির সবুজ বৃক্ষ, পশুপাখি ও বন্য প্রাণী। সম্প্রতি দর্শনার্থীদের মধ্যে একটি বড় অংশ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা আসছেন গবেষণা করতে কিংবা শিক্ষাসফরে। বিনোদনের অন্যতম স্থানও এই উদ্যান। কর্তৃপক্ষের দাবি, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে এখন ভালো পরিবেশ বিরাজ করছে। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়েও দেখা মেলে পাল্টে যাওয়া দৃশ্যের।
দেখা গেছে, সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীমুখর এই বিনোদনকেন্দ্রটি। কেউবা বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউবা নেমপ্লেট থেকে ডায়েরিতে লিখছেন গাছের নাম এবং বর্ণনা।
বেশ কয়েক জায়গায় দেখা গেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসফরে এসেছে প্রকৃতি থেকে পাঠ নিতে। আবার কেউবা প্রামাণ্যচিত্র কিংবা নাটক নির্মাণের অংশ হিসেবে শ্যুটিং করছেন এই সুবজ সমারোহে। প্রেমিক জুটিও প্রকৃতির মাঝে খুনসুটিতে সময় কাটাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়েও এসেছেন অনেকেই। তাঁদের একজন আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সত্যি আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এখানকার। আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে এসে ঘোরার মতো পরিবেশ ছিল না। এখন কর্তৃপক্ষের সচেতনতায় প্রেমিক জুটিরা যত্রতত্র বসতে পারেন না।’
জানা গেছে, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটি দেশের উদ্ভিদের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রকৃতিপ্রেমী, উদ্ভিদবিদ এবং পরিবেশবাদী পর্যটকদের জন্য জ্ঞানের আধার। এটি একটি গবেষণাকেন্দ্র এবং গবেষকরা উদ্যান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গবেষণা করতে পারেন।
যা আছে এই সবুজ সমারোহে : দেশ ও বিদেশে জনপ্রিয় উদ্যানটিকে ৫৭টি সেকশনে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ বাগান, ক্যাকটাস হাউস, মৌসুমি বাগান, অর্কিড হাউস, ফার্ণ হাউস, শাপলা পুকুর, পদ্ম পুকুর, ছয়টি লেক ও দুটি নার্সারি অন্যতম। শিক্ষার্থী, গবেষক, পর্যটক এবং প্রকৃতিপ্রেমীসহ প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ দর্শনার্থী উদ্যানটিতে আসেন। এটি দেশের জাতীয় ঐতিহ্য এবং বিরল জিনপুল সংগ্রহের কেন্দ্র। এই উদ্যানটিতে ১৪৩টি পরিবারভুক্ত, ৫৯৫টি গণের অধীন এক হাজার ৪২ প্রজাতিরও বেশি বীরুৎ, গুল্ম, বৃক্ষ এবং জলজ উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে জলজ উদ্ভিদের বিশাল সংগ্রহসহ প্রায় ৮০ হাজার বৃক্ষ, বীরুৎ ও গুল্ম রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক উদ্ভিদ উদ্যানে আনা হয়েছে এবং স্থানীয় জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে এগুলোকে অভিযোজিত এবং নিয়মিতভাবে বংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এই উদ্যানটির প্রধান লক্ষ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা। উদ্যানে পক্ষিকুলের সংখ্যা প্রচুর এবং ঋতুভেদে দর্শনার্থীরা স্থানীয় পাখির সঙ্গে প্রচুর পরিযায়ী পাখিও দেখতে পান। উদ্যানে ১৪টি জলাধার আছে, যা বিভিন্ন প্রজাতির জলজ পাখির আশ্রয়স্থল।
সাত ক্যাটাগরিতে প্রবেশমূল্য : ১২ বছরের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক দর্শনার্থীদের ৩০ টাকা, ছয় থেকে ১২ বছরের মধ্যে ১৫ টাকা, পাঁচ বছরের মধ্যে ফ্রি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত গ্রুপের (১০১-২০০) জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা, বিদেশি পর্যটক ৫০০ টাকা, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী প্রাতঃভ্রমণ বার্ষিক প্রবেশ কার্ড ফি শর্তসাপেক্ষ ৫০০ টাকা।
বোটান্যিকাল গার্ডেনের পরিচালক শওকত ইমরান আরাফাত বলেন, ‘ইট-পাথর বদলে দিয়ে ন্যাচারাল (প্রাকৃতিক) বিষয়গুলো যুক্ত করার চেষ্টা করছি। খুব শিগগির খালি পায়ে হাঁটার জন্য একটি মাটির রাস্তা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির এত দিন কোনো ওয়েবসাইট ছিল না, সেটি করেছি।’