<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন কিছু জাতি সভ্যতার সৃষ্টি করছে এবং কেন কিছু জাতি অন্য জাতিকে পেছনে ফেলে আজকে অনেক এগিয়ে গেছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ নিয়ে ভূগোলবিদ, ইতিহাসবিদ, পক্ষীবিদ এবং লেখক জ্যারেড ডায়মন্ড তার বিখ্যাত বই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গানস জার্মস অ্যান্ড স্টিল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এ প্রশ্ন করেছেন। তার প্রশ্ন ছিল, কয়েক শতাব্দী ধরে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও অষ্টাদশ শতকে অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি মহাদেশ আবিষ্কার করে দখল কেন একজন ভারতীয়, চীনা বা অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিনিধির বদলে ইংরেজ সম্রাটের প্রতিনিধি নিলেন? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউভাল নোহা হারারি তার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্যাপিয়েন্স</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থে এর কারণ হিসেবে বলেছেন সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর পার্থক্যকে। ইউরোপীয়দের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ছিল প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতিষ্ঠিত, যার কারণে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকেও তাদের জ্ঞান অনুসন্ধান ও তা সংরক্ষণ করে ব্যবহারকে উৎসাহিত করত। সেখানে শাসনক্ষমতার পরিবর্তন এই নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনত না, বরং পূর্ববর্তী শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারতীয় বা চীন বা পারস্যে এই সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ছিল ব্যক্তি মিথ, ব্যক্তিপূজার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ফলে এখানে সামষ্টিকভাবে জ্ঞানের অনুসন্ধান ও তাতে ধারাবাহিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিংশ শতাব্দীর শেষ অংশে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে এসে কিছু রাষ্টের পেছনে পড়ে থাকা নিয়ে ড্যারেন এসিমোগলু আর রবিনসন সেই সামাজিক আর রাজনৈতিক কাঠামোর পার্থক্যকে বলছেন প্রতিষ্ঠানের পার্থক্যের কথা। যে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান যত সক্ষম ও স্বচ্ছ, সে রাষ্ট্র তত সফল। তাদের ভাষায়, যে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকদের জন্য সুষম সুযোগ করে দিতে পারবে, সে রাষ্ট্রে নাগরিকরা তাদের মেধা-বুদ্ধি-দক্ষতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তত এগিয়ে যাবে, যা সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কল্যাণ করবে। ড্যারেন এসিমোগলু ও রবিনসনের এই মতবাদকে খণ্ডন করার উপযোগী </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এখনো নেই বলা চলে। তাই রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নতির জন্য স্বচ্ছ ও সক্ষম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রের, কিন্তু রাষ্ট্রের সেই দায়িত্ব পালনের দায় কি শুধু যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তাদেরই? যারা রাষ্ট্রের নাগরিক, তাদের দায়িত্ব কতখানি? আমাদের মতো রাষ্ট্রের নাগরিকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে না, কিন্তু কেন গড়ে উঠছে না? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউভাল নোহা হারারির ব্যাখ্যা ধরে যদি বলা যায়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মূল ভিত্তি, তাহলে সেই রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় আছেন, তাদের তুলনায় যারা এই রাষ্ট্রের নাগরিক, তাদের দায়িত্বও কম না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি যেমন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো, তেমনি রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ভিত্তি হলো তার নাগরিকদের আচরণ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, সংযত আচরণ, নৈতিকভাবে স্বীকৃত প্রথা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এগুলো যখন ব্যক্তির সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োগ হয়, তখন সেটি একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এই অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলোই হলো রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের আত্মা। এগুলোর অনুপস্থিতিতে আমাদের কাছে যেগুলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত, সেগুলো শুধুই আত্মা ছাড়া একটি শরীর মাত্র। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ প্রসঙ্গে তদানীন্তন পূর্ব পকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আতাউর রহমান খান তখন তরুণ মুসলিম লীগ কর্মী। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার সময় ১৪ আগস্ট স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপন উপলক্ষে জেলা শহরগুলোতে বিপুল লোকসমাগম হয়। এমন এক সমাবেশে এক প্রবীণ গ্রামবাসী আতাউর রহমান খানকে জিজ্ঞেস করেন, এখন যখন স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে, এর পরও কি দেশে পুলিশ, কোর্ট-কাছারি, জেল লকআপ থাকবে? আতাউর রহমান খান অবাক হয়ে বলেছিলেন, কেন থাকবে না? এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া কি রাষ্ট্র চলে? তার চেয়েও বেশি অবাক হয়ে সেই বৃদ্ধ বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ কেমন স্বাধীনতা পেলাম, যেখানে এসব থাকবে!</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অর্থাৎ স্বাধীনতাকে দেখানো হয়েছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি হিসেবে, যেন এসব প্রতিষ্ঠানই দেশের দুর্ভাগ্যের জন্য, সাধারণ মানুষের কষ্টের জন্য দায়ী, যদিও তৎকালীন সমাজে ব্রিটিশদের গড়া এসব প্রতিষ্ঠান শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতার আবেগ তৈরি করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ বানানো হয়েছিল এসব প্রতিষ্ঠানকে। সাধারণ মানুষকে সেই আবেগে এতটাই ভাসানো হয়েছিল যে রাষ্ট্রের কাঠামো গঠনের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য, সেগুলোর অস্তিত্বও তাদের মানতে কষ্ট হচ্ছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আতাউর রহমান খানের অভিজ্ঞতার ৭৫ বছর পরও যেসব রাষ্ট্রে উন্নত রাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, সেসব রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোনো ব্যক্তি সব প্রতিষ্ঠান গড়ে দেবেন বা সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নেবেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে। রাষ্ট্রকে উন্নত করতে হলে যেমন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হলে প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে প্রতিষ্ঠান দুর্বল না করে, প্রতিষ্ঠান চালানো ব্যক্তিদের প্রশ্ন করতে হবে, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : প্রাবন্ধিক</span></span></span></span></p>